অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গোস্তাভো পেত্রো ফিলিস্তিন মুক্তির জন্য একটি আন্তর্জাতিক সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর উদ্দেশে বলেছেন, ফিলিস্তিন মুক্তির ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সমর্থিত অত্যাচার ও নির্যাতন মোকাবিলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সামরিক বাহিনী গঠন জরুরি।
তার মতে, ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষা ও মানবতা বাঁচিয়ে এমন বাহিনী দরকার। পেত্রো তার ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, যারা গণহত্যা মেনে নিতে অস্বীকার করে তাদের উচিত ফিলিস্তিনের মানুষের প্রাণ রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা। পেত্রো সেখানে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যেসব দেশ গণহত্যার বিরোধী তাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করুন। আমি দেশ ও জাতিকে অনুরোধ করছি — মানবতার স্বার্থে অস্ত্রশস্ত্র ও সেনাসদস্যদের একত্রিত করুন। আমাদেরকেই ফিলিস্তিন মুক্ত করতে হবে।”
কলম্বিয়ার এমন অবস্থানের কিছু কারণ আছে:
কলম্বিয়া তার ইতিহাসে সবসময় জটিল অভ্যন্তরীণ ও বহিঃসম্পর্কীয় সমস্যার মধ্যে ছিল। দেশটি দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গেছে যা তার পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনে বড় প্রভাব ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কলম্বিয়া বিভিন্ন দেশ, বিশেকরে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। মানবাধিকার রক্ষা ও বৈশ্বিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে সমর্থন করে যাচ্ছে। ফিলিস্তিন ইস্যুকেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে।
ফিলিস্তিন মুক্তির উদ্দেশ্যে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনের কলম্বিয়ার অনুরোধের পেছনে বহু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই পদক্ষেপ মুসলিম দেশগুলো বিশেষকরে যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে, সেসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এই অনুরোধটি দখলদার ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন নীতির বিরুদ্ধে একপ্রকার প্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বিশেষত সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নতুন প্রেসিডেন্টের আগমনের পর কলম্বিয়া পশ্চিমা নীতির প্রতি আরও সমালোচনামূলক মনোভাব গ্রহণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে পশ্চিমা প্রবণতার বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ বাড়িয়েছে।
ফিলিস্তিন মুক্তির উদ্দেশ্যে একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠনের কলম্বিয়ার অনুরোধে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু বিশ্লেষক এটিকে প্রতীকী ও মূলত ফিলিস্তিনের প্রতি নজর আকর্ষণের একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেন। অন্যদিকে, কিছু পশ্চিমা দেশ, বিশেষকরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পেত্রোর বক্তৃতার পরে অধিবেশন ত্যাগ করেছে। নিশ্চিতভাবেই এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিন মুক্তির জন্য শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনী গঠন করা হলে তা সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুতর চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। কলম্বিয়ার পক্ষে এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক ও সামরিক সম্পদ প্রয়োজন, যা এককভাবে সেদেশের ক্ষমতার বাইরে। ফলে একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক সশস্ত্র বাহিনী গঠনের জন্য বিভিন্ন দেশের সংগঠিত সহযোগিতা অপরিহার্য হবে।
ফিলিস্তিন মুক্তির লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনের কলম্বিয়ার অনুরোধ সেদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এই পদক্ষেপটিকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতে এবং এই ইস্যুটির প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগে আকর্ষণের প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এটি একটি জোরালো আহ্বান।