26 Nov 2024, 07:24 pm

বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের নতুন বাজার অনুসন্ধান করুন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের জন্য নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “যারা পোশাক এবং তা রপ্তানি নিয়ে কাজ করছেন তাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বিভিন্ন দেশের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তা মাথায় রেখে নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহবান জানান। অনুষ্ঠানে তিনি ছয়টি জেলায় ছয়টি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও উদ্বোধন করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী আমাদের পুরনো ঐতিহ্যের সাথে নতুন চিন্তাধারার সম্মিলন ঘটানোরও আহবান জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে দেশে একটি ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময়ে কোন রং ও ডিজাইন ব্যবহার হবে, কোনটার চাহিদা বেশি এটা একটা ঘুর্ণায়মান অবস্থা এবং প্রতি নিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট বা রপ্তানিকারক তাদের আমি অনুরোধ করবো আপনাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পোষাক ব্যবহার হয়ে থাকে সেভাবে আমরা নতুন বাজার খুঁজে বের করতে পারি।
আসন্ন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বড় বড় ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য তাঁর সরকার দেশের জনগণকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যুব সমাজ অত্যন্ত দক্ষ। তাদেরকে একটু প্রশিক্ষণ দিলেই তারা উন্নতমানের কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, দ্রুততর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বস্ত্র অধিদপ্তরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করা হয়েছে এবং ই-নথির মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখন সহজে এবং স্বল্প সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় সকল সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
পাশাপাশি বস্ত্রখাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য তাঁর সরকার বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) ১৬টি বন্ধ মিল পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে (পিপিপি) চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নতুন উদ্বোধন করা ছয়টি টেক্সটাইল ইনষ্টিটিউট হচ্ছে- ‘শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, গোপালগঞ্জ’, ‘শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, গৌরনদী, বরিশাল’, ‘শহিদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মান্দা, নওগাঁ’, ‘বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ’, ‘ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’ এবং ‘শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মাদারগঞ্জ, জামালপুর।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী তৈরী পোশাক খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। বর্তমান সরকারের আমলে তৈরী পোষাক শিল্পের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামান্য চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। সেদিক থেকে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে এই তৈরী পোশাক খাত। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
পোশাক শিল্প নারীর কর্মসংস্থানে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের কাজের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে তারা বিশেষ অবদান রাখছে। প্রতিটি পরিবারও আর্থিক সক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে।
তিনি আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য জাতির পিতার ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের অংশবিশেষ তুলে ধরেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে বিনা দ্বিধায় এ আশ্বাস আপনাদের দিতে পারি যে, আমাদের আমদানি নির্ভর অর্থনীতি প্যাটার্ন খুব শীঘ্রই পাল্টে যাবে এবং জিনিপত্রের দাম কমানোও সম্ভব হবে।”
তিনিও সেটাই বিশ্বাস করেন এবং আমদানি নির্ভর না থেকে ‘বাণিজ্যে বসতী লক্ষ্মী’ সেটাই তিনি আনতে চান এবং এক্ষেত্রে আইসিটি পণ্য বা ডিজিটাল ডিভাইসও রপ্তানি ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখছে বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আমাদের পণ্যগুলোকে ভ্যালু এডেড করেও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যাতে একদিকে আমাদের দক্ষ জনশক্তি আরেক দিকে ভ্যালু এডেড পণ্য অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হয়।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁতশিল্প আমাদের ঐতিহ্য এবং আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। কারণ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প হচ্ছে এই তাঁত শিল্প। দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ তাঁতশিল্প যোগান দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার তাঁতিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, মূলধন যোগান, গুণগত মানসম্মত তাঁতবস্ত্র উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাঁতিদের ব্যবহার্য উপকরণে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ও সমুদয় মূল্য সংযোজন কর মওকূফ করে আমদানির সুযোগ প্রদান করেছে। ইতোপূর্বে ’৯৬ সালে প্রথম সরকারে এসেই তাঁতিদের বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রদানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
এক সময়কার বিশ^বিখ্যাত ঢাকাই মসলিনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পের আওতায় নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে ঢাকাই মসলিন কাপড় তৈরির কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলা, সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও ঢাকাই মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার করে হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি এজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এই উচ্চমূল্যের পণ্যটি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন এবং এর মেধাস্বত্ত সংরক্ষনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান।
তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউ আই পি ও) এর পক্ষে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকাই মসলিনকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। মসলিনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো-তে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশে^ আবার পাট ও পাটজাত পণ্যের কদর বেড়েছে।
তবে, পোশাকশিল্পকে যতটা প্রণোদনা দিয়ে থাকি, সেক্ষেত্রে পাট কৃষিপণ্য হওয়া সত্ত্বেও যে সুযোগ পাচ্ছেনা। সে সুযোগ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনেকরি। আর পরিবেশ রক্ষার জন্য পাটজাত পণ্যের বিকল্প কিছু হতে পারেনা। এর যতবেশি উৎকর্ষ সাধন হবে তত বেশি বাজারজাতকরণ সহজ হবে। আমরা এদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন,আমাদের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরে ফলে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের কারখানাগুলো সবুজ কারখানার মানদন্ডে বিশ্বে এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) এর হিসাব মতে শীর্ষ ১০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে ৫০টিই বাংলাদেশের। ‘ইউএসজিবিসি’ থেকে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত বাংলাদেশে সবুজ কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৭টি। এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা উপকরণের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে একটি কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। তারপরও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা ব্যয় সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পদক্ষেপও সরকার নিয়েছে।

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 11019
  • Total Visits: 1319899
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৪শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৭:২৪

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018