November 26, 2025, 12:05 am
শিরোনামঃ
উপদেষ্টা পরিষদে গণভোট অধ্যাদেশ অনুমোদন দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দিনব্যাপী নির্বাচন কমিশনের সংলাপ আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল চুক্তি নিয়ে হাইকোর্টের রায় দুদককে চাপ প্রয়োগ করলে তালিকা প্রকাশ করা হবে : দুদক চেয়ারম্যান বিএনপি নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত : রুহুল কবির রিজভী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে লটারির মাধ্যমে ৬৪ জেলায় পুলিশ সুপার চূড়ান্ত করেছে সরকার  ফরিদপুরের ফেসবুকে কাবা শরিফ নিয়ে আপত্তিকর ছবি পোস্ট ;  যুবক গ্রেপ্তার রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালন সাতক্ষীরায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ   পিরোজপুরে সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা সভা 
এইমাত্রপাওয়াঃ

বাংলাদেশের প্রথম মহাকাশচারী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাশিয়ায় অধ্যায়নরত পঞ্চগড়ের জোনাক

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার মেধাবী শিক্ষার্থী শাহজালাল জোনাক। রাশিয়ার বাউমান মস্কো স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ‘রকেট কমপ্লেক্স অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সে পড়ালেখা করে বাংলাদেশের প্রথম মহাকাশচারী হতে নিজেকে প্রস্তুত করছে। বাংলা ভাষায় বেশ কিছু বই লিখেছে জোনাক। এ পর্যন্ত তার সাতটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

বইগুলো হচ্ছে ‘ম্যাজিক অফ রুবিক’স কিউব, পদার্থ বিজ্ঞানের মজার প্রশ্ন ও উত্তর, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা তরুণ প্রজন্মের চিঠির সংকলন ‘প্রিয় বাবা’, শব্দ দিয়ে বুদ্ধির খেলা, মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি, শব্দের গল্প, পরিবেশ ও জলবায়ুর গল্প। এসব বইয়ের মধ্যে ‘মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’ বইটি প্রথম বাংলা বই হিসেবে মহাকাশে গমন করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত হয়ে আলোচিত হয়েছে। বই লেখা ছাড়াও জোনাক বিজ্ঞান নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুলে করেছে সেমিনার। এসব সেমিনারে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন, সুনাগরিক, আত্মনির্ভরশীলতাসহ দেশ গঠনে অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত করছে।

জানা যায়, জোনাকের জন্ম তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুরে। বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক। মা সানজিদা শারমিন গৃহিনী। ভজনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে ভর্তি হয় রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। সেখান থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে। ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সরকারি স্কলারশিপে উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যান রাশিয়ায়। ভর্তি হন রাশিয়ার বাউমান মস্কো স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে সেখানে ‘রকেট কমপ্লেক্স অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স’ বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।

জোনাক বলেন, রকেট সায়েন্সে পড়া বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। একটি রকেট ইঞ্জিনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়েই শুধু পড়তে হয়  না। অতি কম সময়ে ইঞ্জিনের পরিবর্তনের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়। রকেটের ইঞ্জিন এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যে অতিদ্রুত পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাড়ি জমাবে। তা না হলে পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের কারণে ওপরে উঠতে পারবে না। তাই এখানে এক সেকেন্ডও অনেক বড় সময়। প্রথম স্টেজে রাশিয়ার তৈরি একটি সয়ুজ রকেট এক সেকেন্ডে প্রায় ২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ফেলে। যার কারণে রকেট নিয়ে পড়াশোনাটা খুব জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং।

পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট মানুষ মহাকাশচারীরা। কারণ মহাকাশ খুব জটিল জায়গা। অনুমান করে সব কিছু করা যায় না। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ সিদ্ধান্তের জন্য কারও উপর নির্ভর করলেও চলে না। এ জন্য খুব বিচক্ষণ এবং স্মার্ট মানুষকগুলোকেই মহাকাশচারী হিসেবে সিলেক্ট করা হয়। ছোট্ট একটি সিদ্ধান্ত মহাকাশচারীদের জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে কিংবা কেড়ে নিতে পারে। তাই মহাকাশচারী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে আমি নিজে থেকেই ফ্লাইট ট্রেনিং করেছি। বেসিক ইমারজেন্সি মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্টের ওপর কোর্স করেছি। আত্মরক্ষার জন্য গান শুটিং শিখেছি। সামনের দিকে আমার স্কাই ডাইভিং এবং স্কুবা ডাইভিংয়ের লাইসেন্স নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি দেশের অ্যাস্পায়ারিং অ্যাস্ট্রোনটরা নিজেদের একজন ভালো, যোগ্য মহাকাশচারী প্রার্থী হিসেবে গড়ে তোলে। আমি সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি।

মহাকাশে নিজের বই পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি মোটেও সহজ কোনো কাজ ছিলো না। কারণ মহাকাশে কোনো কিছু প্রেরণ করা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। রাশিয়ান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘রসকসমস’ বিষয়টি বিবেচনা করে অনুমতি প্রদান করেন। ফলে বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম কোনো বই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করা হয়।

জোনাক আরও বলেন, ‘রকেট নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে সবাই সচরাচর রকেট ইঞ্জিনিয়ার বা রকেট সায়েন্টিস্ট হিসেবে বিভিন্ন অ্যারোস্পেস বা স্পেস এজেন্সিতে কাজ করতে পারে, আমিও হয়তো সেটাই করতে পারবো। তবে আমি চাই একজন মহাকাশচারী হতে। বাংলাদেশ থেকে এখনও কেউ মহাকাশচারী হয়নি। সেজন্য পড়ালেখার পাশাপাশি মহাকাশচারী হওয়ার জন্যও নিজেকে বিভিন্নভাবে প্রস্তুত করছি। মহাকাশচারী হওয়ার বিষয়টি যেহেতু একটি দেশের সরকারের ওপর অনেকটা নির্ভর করে, তাই এই মুহুর্তে বাংলাদেশ থেকে মহাকাশচারী হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমি নিজেকে প্রস্তুত করছি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেউ যেন তার স্বপ্ন ছেড়ে না দেয়। স্বপ্নের পথে দাঁত কামড়ে লেগে থাকলে, সফলতা আসবেই। হয়তো কিছুটা সময় লাগবে, তবে কাজ করে গেলে, নিশ্চয় সফলতা আসবে। আর প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন ভিন্ন, তাই যে যেই স্বপ্ন দেখতে পারে, সে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার মতো সক্ষমতাও রাখে।

জোনাকের মা সানজিদা শারমিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখেছি জোনাক সবসময় আউট অব দ্য বক্স চিন্তা করে। আমরা তার স্বপ্নকে সাপোর্ট দিতে চেষ্টা করেছি। তারপরেও অনেক প্রতিবন্ধকতা তো ছিলই। সে ওর মতো করেই চেষ্টা করে এতোদূর এগিয়ে গেছে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। ও যেন তার স্বপ্ন জয় করে মহাকাশচারী হতে পারে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।

স্কুল শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বলেন, জোনাক আমাদের ভজনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিল। স্কুলের পড়ালেখা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সে অনেক বেশি অনুসন্ধিৎসু ও তার জানার আগ্রহ ছিল। সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করতে চেয়েছিল। আজ তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রাশিয়ার মতো একটি দেশে ‘রকেট কমপ্লেক্স অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স’ নিয়ে পড়ালেখা করছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। আমরা দুআ করি সে যেন তার স্বপ্নজয় করতে পারে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, পঞ্চগড়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী। এমন এক মেধাবী শাহ জালাল জোনাক। আমরা তাকে জোনাক নামেই চিনি। সে ভবিষ্যতে মহাকাশচারী হতে চায়। ওর অনেক বড় স্বপ্ন রয়েছে। সে পঞ্চগড় ও দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চায়। সে চমৎকার বই লিখে। জোনাক স্বপ্ন দেখে সে একদিন দেশের জন্য কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, সে বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষার্থী। যার লেখা বই একজন মহাকাশচারী নিয়ে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। এটা একটা গর্বের বিষয়। আমরা আশা করি জোনাক একদিন অনেক এগিয়ে যাবে। পঞ্চগড়ের মানুষকে গর্বিত করবে। তার দেশের প্রতি কাজ করার আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করেছে।

আজকের বাংলা তারিখ

November ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Oct    
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০


Our Like Page