03 May 2024, 08:50 pm

বিভিন্ন বিষয়ে হাদীসে কুদসীসমূহ (বাংলা অর্থ)

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “তুমি কি খাটিয়ার উপরে কোন ব্যক্তির লাশ দেখনি? দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।
[আলোচ্য হাদীসটি মানুষের স্মৃতিপটে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ তার শেষাবস্থার পাথেয় জোগাড় করার জন্য তাকে সতর্ক করে।]
২. আল্লাহ্ তা‘আলা ইহজগতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুমি আমার বন্ধুদের জন্য তিক্ত হয়ে যাও।” অর্থাৎ তাদেরকে মোতার কুহকে ফেলবে না। দায়লামীী আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।
৩. নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রকাশ্য বিষয় বলতে গেলে তা ইসলাম ও তোমার চরিত্রের যেটুকু সুন্দর হয়েছে এবং তোমার প্রতি যে অঢেল রিযিক বন্ঠন করা হয়েছে। আর গোপনীয় বিষয় বলতে গেলে, হে ইবনে আব্বাস! তোমার যে সমস্ত দোষ তিনি ঢেকে দিয়েছেন। মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেন, “আমি মু‘মিন পুরুষ ও মু‘মিন স্ত্রীলোকদের জন্য তাদের মৃত্যুর পর তাদের সম্পদ থেকে এক-তৃতীয়াংশ নির্ধারিত করে দিয়েছি। সে সম্পদের দরুন আমি তাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে থাকি। আর মু‘মিন পুরুষ ও মু‘মিন স্ত্রীলোকদের এরূপ করে দেই যে ,তারা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আমি তার জন্য সেসব দোষ ঢেকে রাখি যে, যদি  তা আমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত সঙ্গীগণ জানত তবে তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করত।” ইবনে মারদুইয়া, বায়হাকী প্রমুখ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৪. ভাল কাজ দ্বারা যে ব্যক্তি তার দিনের সূচনা করে এবং ভাল কাজ দ্বারাই এর সমাপ্তি ঘটায়, আল্লাহ্ তা‘আলা আপন ফেরেশতাগণকে বলেন, “এর মধ্যবর্তী সময়ের কোন পাপ তার আমলনামায় লিখো না।” তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লœাহ্ ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৫. এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারপর তার চাকরকে তার চেয়ে বেশি মর্যাদায় অধিষ্ঠিত দেখবে। তখন সে আবেদন করবে, হে আমার প্রতিপালক! আমার চাকর আমার থেকে উচ্চতর মর্যাদায় আসীন আছে।” আল্লাহ্ বলবেন, “আমি তাকে তার আমলের প্রতিদান দিয়েছি। আর তোমাকে তোমার আমলের প্রতিদান দিয়েছি। ”দয়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৬. মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার বান্দাদের অন্তরে আমাকে চেনার উপায় হল, তার নিকট আমার মর্যাদার উত্তম অবস্থান, তার পক্ষে আমার নিন্দা না করা, আমার আদেশ পালনে তার শৈথিল্য না করা এবং আমার আদেশ পালনে কাউকেও লজ্জা না করা। ”দয়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৭. মহান ও প্রতাপশলী আল্লাহ্ বলেন, “ইবনে আদম! যদি তুমি আমার দিকে এগিয়ে আস (মন দাও) তবে আমি তোমার অন্তর প্রাচুর্যে ভরে দেব, তোমার সম্মুখ থেকে অভাব দূর করে দিব এবং তোমার আমলকে তোমার জন্য যথেষ্ট করে দিব। অতঃপর তুমি ধনী অবস্থা ব্যতীত ভোর করবে না এব ধনী অবস্থা ব্যতীত তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হবে না। আর যদি তুমি পেচনে ফিরে যাও অথবা আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখ, তবে আমি তোমার সামনে অভাবÑঅনটন উপস্থাপন করবো এং তোমার কাজগুলিকে তোমার জন্য প্রসারিত করে দিব। অর্থাৎ হাজারো কাজ করার পরও তুমি বরং অভাবগ্রস্ত অবস্থায় সকাল করবে এবং সন্ধ্যায়ও অভাবগ্রস্ত থাকবে।” আবুশÑখায়খ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
৮.  মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “উদারতায় আমার চেয়ে বড় আর কে হতে পারে? আমি বান্দাদেরকে বিছানায় রক্ষণাবেক্ষণ করি, যেন তারা আামার অবাধ্য হয়নি। আর এটা আমার বদান্যতা যে, আমি তওবাকারীর তওবা গ্রহণ করি, যেন সে সর্বদা তওবাকারী ছিল। এমন কে আছে যে আমার দরজায় ধাক্কা দিয়েছে, অথচ আমি তার জন্য দরজা খুলেনি? এমন কে আছে, যে আমার নিকট কোন কিছু চেয়েছে অথচ আমি তাকে দেইনি? আমি কি কৃপণ যে , আমার বান্দা আমাকে কৃপনতার জন্য দোষারোপ করবে” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ননা  করেছেন এবং তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন।
৯. মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে আদম সন্তান! জাহান্নামের বদলে জান্নাতকে পছন্দ কর। আর তোমরা তোমাদের আমলগুলো নষ্ট করো না; তা হলে মুখের উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে অনন্তকাল পড়ে থকবে।” রাফেয়ী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১০. মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেন, “হে আদম সন্তান! নিশ্চয়ই বার্ধক্য আমার নূরসমূহের একটি নূর। আমি আমার নূরকে আমার আগুন দ্বারা শাস্তি দিতে লজ্জা অনুভব করি।” আবুশ Ñশায়খ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১১. মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,“আমার সৃষ্টির মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরূপ দুর্বলের সহয়তা করে, যার সহায় কেউ নেই, আমি এ বান্দার রক্ষনাবেক্ষণের যিম্মাদার হলাম।” খাতীব আলোচ্য হাদীসখানা হযরত দীনার থেকে তিনি আনাস (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১২. কোন মু‘মিন ব্যক্তির যখন মৃত্যু হয়, আর তার দুজন প্রতিবেশী বলে, “আমরা তার ব্যাপারে ভাল ব্যতীত কিছুই জানি না।” তা যদি আল্লাহ্ ্ তা‘আলার জ্ঞানে অনুরূপ না ও হয়, তবুও আল্লাহ্ তা“আলা  তার ফেরেশতাগণকে বলেন,“আমার বান্দার অনুকূলে আমার দু‘বান্দার সাত্মগ্য কবুল করে লও। আর তার ব্যাপারে আমার জ্ঞানে যা আছে, তা উপেক্ষা কর।” ইবনুন নাজ্জার আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৮.  মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “উদারতায় আমার চেয়ে বড় আর কে হতে পারে? আমি বান্দাদেরকে বিছানায় রক্ষণাবেক্ষণ করি, যেন তারা আামার অবাধ্য হয়নি। আর এটা আমার বদান্যতা যে, আমি তওবাকারীর তওবা গ্রহণ করি, যেন সে সর্বদা তওবাকারী ছিল। এমন কে আছে যে আমার দরজায় ধাক্কা দিয়েছে, অথচ আমি তার জন্য দরজা খুলেনি? এমন কে আছে, যে আমার নিকট কোন কিছু চেয়েছে অথচ আমি তাকে দেইনি? আমি কি কৃপণ যে , আমার বান্দা আমাকে কৃপনতার জন্য দোষারোপ করবে” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ননা  করেছেন এবং তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন।
৯. মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে আদম সন্তান! জাহান্নামের বদলে জান্নাতকে পছন্দ কর। আর তোমরা তোমাদের আমলগুলো নষ্ট করো না; তা হলে মুখের উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে অনন্তকাল পড়ে থকবে।” রাফেয়ী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১০. মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেন, “হে আদম সন্তান! নিশ্চয়ই বার্ধক্য আমার নূরসমূহের একটি নূর। আমি আমার নূরকে আমার আগুন দ্বারা শাস্তি দিতে লজ্জা অনুভব করি।” আবুশ Ñশায়খ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।১১. মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,“আমার সৃষ্টির মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরূপ দুর্বলের সহয়তা করে, যার সহায় কেউ নেই, আমি এ বান্দার রক্ষনাবেক্ষণের যিম্মাদার হলাম।” খাতীব আলোচ্য হাদীসখানা হযরত দীনার থেকে তিনি আনাস (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

১২. কোন মু‘মিন ব্যক্তির যখন মৃত্যু হয়, আর তার দুজন প্রতিবেশী বলে, “আমরা তার ব্যাপারে ভাল ব্যতীত কিছুই জানি না।” তা যদি আল্লাহ্ ্ তা‘আলার জ্ঞানে অনুরূপ না ও হয়, তবুও আল্লাহ্ তা“আলা  তার ফেরেশতাগণকে বলেন,“আমার বান্দার অনুকূলে আমার দু‘বান্দার সাত্মগ্য কবুল করে লও। আর তার ব্যাপারে আমার জ্ঞানে যা আছে, তা উপেক্ষা কর।” ইবনুন নাজ্জার আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৩. নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা যখন জানাযার নামায পড়ে থাক, তখন মৃত ব্যক্তির প্রশংসা কর এবং তার ভাল কাজের আলোচনা কর। কেননা মহান প্রতিপালক বলেন, ‘তারা সজ্ঞানে যে কাজের সাক্ষ্য দিতেছে, এতে আমি তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করছি।’ আার যা তারা জানে না, এর জন্য তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। বুখারী আলোচ্য হাদীসখানা তাঁর তারীখ গ্রন্থে সংকলন করেছেন, রাবী রুবাই বিনতে মুআওয়ায (রাঃ)।
১৪. আল্লাহর দরবারে ফেরেশতাগণ বলেন, “হে প্রতিপালক! একি কথা যে, তোমার মু‘মিন বান্দা থেকে দুনিয়া আঁচল গুটিয়ে নেয়া এবং তাকে বিপদে পতিত করে ,অথচ সে মু‘মিন?” তখন আল্লাহ বলেন,“তোমরা তার সাওয়াবের ভান্ডার খুলে দাও।” অতএব, যখন তারা সাওয়াব দেখে তখন বলে, হে প্রতিপালক! এর অনুপাতে তার ওপর যে বিপদ পৌঁছেছে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারেনি।” পুনরায় ফেরেশতাগণ বলেন, “হে রব! তোমার কাফির বান্দাকে দুনিয়াতে খুব প্রশস্ততা দান করা হয় এবং তার ওপর থেকে বিপদ আঁচল গুটিয়ে নেয়, অথচ সে তোমার প্রতি কুফরী করে।” তখন তিনি বলেন, “তার প্রতিদানও প্রকাশ করে দাও ।” অতএব, ফেরেশতাগণ যখন তার পরিনাম দেখে তখন বলে, হে রব! দুনিয়াতে তার যা কিছু মিলেছে, উহা তার কোন কাজে আসবে না। ” আবূ নুয়াইম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৫. সকল অঙ্গ প্রতঙ্গের মধ্যে কোনটিকে জিহŸার চেয়ে ভয়াবহ শাস্তি দেয়া হবে না। জিহŸা বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে এরূপ শাস্তি প্রদান করেছেন, যেরূপ শাস্তি দেহের কোন অঙ্গকে দেয়া হয় নাই।” তিনি বলবেন, “তোমার দ্বারা এরূপ একটি কথা বের হতো যা পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত পৌছাত এবং তা রক্তপাত ঘটাত। আমার ইয্যতের কসম! নিশ্চযই আমি তোমাকে এরূপ কঠোর শাস্তি প্রদান করব যা অন্য কোন অঙ্গকে দিব না ।” আবূ নুয়াইম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৬. নিশ্চয়ই (সপ্তাহের) সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ দু দিনে আল্লাহ্ প্রত্যেক মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন, কেবলমাত্র দু ব্যক্তি ছাড়া, যারা পরষ্পরের প্রতি অসন্তুষ্ট। আল্লাহ্ বলেন, তাদেরকে ছেড়ে দাও যে পর্যন্ত সন্ধি না করে।” ইবনে মাজাহ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৭. শেষ বিচার দিবসে প্রত্যেক চক্ষু ক্রন্দনকারী হবে, কেবল সে চক্ষু ব্যতীত, যা আল্লাহ্র ভয়ে দুনিয়াতে ক্রন্দনরত হয়েছিল, আর সে চক্ষুু ব্যতীত, যা হারাম বস্তুসমূহ দেখা থেকে অবনত ছিল এবং সে চক্ষু ব্যতীত যা আল্লাহ্র রাস্তায় জাগ্রত থেকে রাত্রি যাপন করত। আল্লাহ্ তা‘আলা এ বান্দাকে নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করবেন। তিনি বলবেন, “আমার এ বান্দার প্রতি তাকিয়ে দেখ, তার প্রাণ আমার নিকট এবং তার দেহ আমার আদেশ পালনে নিয়োজিত। তার দেহ বিছানা ছেড়ে দিয়ে আমার ভয়ে ও আমার রহমতের আশায় আমাকে আহবান করছে। তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” রাফেয়ী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৮. এমন কোন মুসলমান মৃত্যু বরণ করে না , যার ব্যাপারে তার নিকটতম প্রতিবেশীদের মধ্যে চার পরিবার সাক্ষ্য দেয় যে, তারা তার ব্যাপারে ভাল ব্যতীত কিছুই জানেনা, মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “আমি তার ব্যাপারে তোমাদের মন্তব্য গ্রহণ করলাম, আর তোমরা যা জান না তা থেকে তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” মুসনাদে আহমদ, আবূ ইয়ালা, ইবনে হাব্বান, হাকেম, আবূ নুআইম, বায়হাকী ও দিয়াউল মুক্কাদ্দেসী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন ।
১৯. পিতাÑমাতার অবাধ্য সন্তানকে বলা হবে, “তুমি যে কোন আদেশ পালন কর না কেন, আমি নিশ্চয়ই তোমাকে ক্ষমা করব না।” আর পিতাÑমাতার বাধ্য সন্তানকে বলা হবে, তুমি যা খুশি কর, আমি নিশ্চয়ই তোমাকে ক্ষমা করব।” আবূ নুআইম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২০. যে ব্যক্তি কোন ঋণ গ্রহণ করে এবং তা পরিশোধ করবে বলে নিয়ত রাখে, আল্লাহ শেষ বিচার দিবসে তা তার পক্ষ থেকে আদায় করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন গ্রহণ করে এবং সে পরিশোধ করার নিয়ত রাখে না, তারপর সে মৃত্যুবরণ করে, মহান ও মর্যাদাশীল আল্লাহ্ শেষ বিচার দিবসে বলবেন, “তুমি মনে করেছিলে যে, আমি আমার বান্দার জন্য তার হক গ্রহণ করবো না।” অতঃপর তার সওয়াব থেকে এক অংশ গ্রহণ করা হবে এবং সে দাতার সওয়াবের সঙ্গে যোগ করা হবে। আর যদি কোন নেকী না থাকে ,তবে ঋণদাতার গুণাহ থেকে এক অংশ নেয়া হবে এবং তার উপর চাপানো হবে। হাকেম তিবরাণী প্রমুখ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২১. কোন ব্যক্তি তিনবার “হে রব” বলে না: বরং আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “হে আমার বান্দা! আমি হাজির আছি।” অতঃপর তিনি যা ইচ্ছা তাড়াতাড়ি করেন এবং যা ইচ্ছা বিলম্বিত করেন। দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২২. আল্লাহ তা’আলা বলেছেন “অতঃপর আমি আমার যেসব বান্দাকে নির্বাচিত করেছি তাদেরকে আমি কিতাবের ওয়ারিশ করেছি। আর তাদের কেউ নিজের নফসের প্রতি অত্যাচারী, তাদের কেউ সুবিচারী (মিতব্যয়ী বা সংযমী) এবং কেউ আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে সৎকর্ম সমাপনে অগ্রগামী। অতএব যারা সৎকর্মে অগ্রগামী হয়েছে তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা নিজেদের নফসের উপর অত্যাচার করেছে তারা সেসব লোক, যাদেরকে আল্লাহ স্বীয় রহমত দ্বারা সংশোধন করেছেন। অতঃপর তারাই ঐ সব লোক যারা বলতে থাকবে, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য, যিনি আমাদের দুঃখ দূর করেছেন, নিশ্চয়ই আমাদের প্রভু মার্জনাকারী ও কৃতজ্ঞÑযিনি তাদেরকে নিজ দয়ার আশ্রয়ে অবতরণ করিয়েছেন। উহাতে আমাদের কোন কষ্ট ও ক্লান্তি স্পর্শ করবে না।” ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২৩. মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “বান্দাগণ কোন চাদর দ্বারা তাদের জড়ায় না, যা আমার নিকট অল্প খাবারের তুলনায় বেশি উদ্দেশ্য সিদ্ধকারী। দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা আব্দুলœাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২৪. নিশ্চয়ই মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ যখন জান্নাত সৃষ্টি করলেন এবং উহাতে গাছ রোপন করলেন, তখন তিনি উহাতে “সুবহানাল্লাহি আলহামদু লিল্লাহি লাÑইলাহা ইল্লাল্লœাহু আল্লাহু আকবর ওয়া লা হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” এর গাছ রোপন করলেন। অতঃপর আল্লাহ্ বললেন,“নিশ্চয়ই মু‘মিনগণ সফলকাম হয়েছে। হে আমার জান্নাত ! তুমি কথা বল।” জান্নাত বলল, “আপনি আল্লাহ। আপনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আপনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। যে আমার মধ্যে প্রবেশ করবে, সে সৌভাগ্যশালী হবে।” মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বললেন, “আমার প্রভাবের কসম! আমি সৃষ্টি করেছি আর আমার মহিমা আমার সৃষ্টির ঊর্ধ্বে। সর্বদা ব্যভিচারে লিপ্ত ব্যক্তি, সদা পাপাসক্ত ব্যক্তি এবং পরনিন্দাকারী তোমার ভেতরে কখনও প্রবেশ করবে না।” সিরোজী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে রেওয়ায়েত করেছেন।
২৫. নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শেষ বিচার দিবসে আমার উম্মতের মধ্যকার এক ব্যক্তিকে সমুদয় সৃষ্টির ওপর দিয়ে চিৎকার করে আহবান করা হবে। অতঃপর তার জন্য  নিরানব্বইটি দপ্তর খোলা হবে, এর প্রতিটির দৈর্ঘ্য দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। অতঃপর বরকতময় ও মহান আল্লাহ্ বলবেন, তুমি কি তার কোন কিছু অস্বীকার কর?  সে বলবে না প্রভু! আল্লাহ বলবেন, আমার রেকর্ড রক্ষক লেখকগণ কি তোমার প্রতি কোন অবিচার করেছে? সে বলবে রা প্রভু” তিনি বলবেন, তোমার কি কোন আপত্তি আছে?” লোকটি ভয় পাবে এবং বলবে না! তখন তিনি বলবেন,“নিশ্চয়ই আমার নিকট তোমার একটি সওয়াব আছে। আর নিশ্চয়ই আজ তোমার উপর কোন যুলুম করা হবে না। অতঃপর আল্লাহ তার জন্য একটি লিপি খুলবেন, তাতে লিখা, “আশহাদু আলÑলা ইলাহা ইল্লাল্লœাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহ।” সে বলবে হে আমার রব! এই ছোট লিপিটি এই বিরাট দপ্তরগুলির তুলনায় এমন কি?” তিনি বলবেন তোমার প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। অতঃপর যাবতীয় রেকর্ড এক পাল্লায় রাখা হবে, আর এ লিপিটি অপর পাল্লায়। রেকর্ডগুলি হালকা হয়ে যাবে এবং লিপিটি ভারী হবে।” ইবনে মাজাহ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা বরেছেন।
২৬. মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “তোমরা আমার আরীফ ও হাদীস বিশারদ বান্দাদের জান্নাতে অথবা দোযখে অবতরণ করবে না যে পর্যন্ত তোমাদের রব তাদের মধ্যে কোন মীমংিসা করে না দেন।” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২৭. একদা রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যে বসা ছিলেন। হঠাৎ দেখলাম, তিনি হাসলেন এবং তাঁর মধ্যবর্তী দাঁতগুলি প্রকাশিত হয়ে পড়ল । তখন হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল ! আপনাকে কিসে হাসিয়েছে ? “আমার মা-বাবা আপনার জন্য উৎসর্গিত হউক।” তিনি বললেন,“ আমার উম্মতের মধ্যে দু’ব্যক্তি মর্যাদাশীল রবের সামনে হাটু গেড়ে বসল, তারপর একজন বলল, হে প্রভু! আমার জন্য অমার ভাইয়ের নিকট থেকে যুলুমের ক্ষতিপূরণ আদায় কর।” তখন মহান আল্লাহ্ বললেন, “তুমি তোমার ভাইকে কি করবে ? তখন তার সওয়াবের কোন কিছুই বাকী নেই, সে বলল, “হে প্রভু, সে আমার গুনাহর বোঝা বহন করুক।” রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উভয় চক্ষু থেকে কান্নার অশ্রæ প্রবাহিত হল। তারপর তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই এটা সে ভয়বহ দিনের জন্য: সে লোকগণ এর মুখাপেক্ষি হবে যে, তাদের বোঝা বহন করে নিয়ে যাওয়া হোক।” তখন মহান আল্লাহ তলবকারীকে বললেন, “তোমরা চক্ষু উত্তোলন কর এবং লক্ষ্য কর।” তখন সে বলল, “আমি স্বর্ণ নির্মিত শহরসমূহ ও রাজপ্রসাদ দেখতেছি। এর চূড়াগুলো মণিমুক্তা খচিত: এটা কোন শহীদের জন্য ?” তিনি (আল্লাহ্) বললেন, “যে দাম দেয় তার জন্য।” সে বলল, হে প্রভু, কে এর মালিক হবে?” তিনি বললেন তুমি এর মালিক হবে।” সে বলল কিসের বিনিময়ে ?” তুমি তোমার ভাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিনিময়ে।” সে বলল “হে আমার রব! আমি নিশ্চয়ই তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন, “তা হলে তোমার ভাইয়ের হাত ধর এবং জান্নাতে প্রবেশ করাও।” আল্লাহ্র রসূল নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা কর। কারণ নিশ্চয়ই আল্লাাহ্ মুসলমানদের মধ্যে মীমংিসা করেন।” হাকেম ও বায়হাকী প্রমুখ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্বাদ ইবনে শাইবার সূত্রে রেওয়ায়েত করেছেন।
২৮. যখন শেষ বিচার দিবস হাযির হবে, তখন মহান ও মর্যাদাশীল আল্লাহ্ বলবেন, “কোথায় তারা, যারা নিজের চক্ষু ও কর্ণ শয়তানের বাদ্য হতে পবিত্র রেখেছিল? তাদেরকে আলাদা কর।” তখন ফেরেশতাগণ তাদেরকে মিশক ও আম্বরের স্তুপের উপর আলাদা করবেন। অতঃপর তিনি ফেরেশতাগণকে বলবেন,“তাদেরকে আমার পবিত্র ও মর্যাদার কীর্তন শুনাও।” তাঁরা তাদেরকে এরূপ আওয়াজ শুনাবেন যার সমতুল্য সুর কোন শ্রবণকারী কখন শুনেনি। দারু কুতনী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২৯. আমার উম্মতের মধ্যকার অনুগ্রহশীল ব্যক্তিদের নিকট নিজের প্রয়োজন উপস্থাপন কর, তোমাদেরকে ভরণÑপোষণ সরবরাহ করা হবে, অথবা তোমরা সফলকাম হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, “আমার রহমত আমার বান্দাদের অনুগ্রহশীল ব্যক্তিদের মধ্যে। আর কঠিন প্রাণ বিশিষ্ট মানুষের নিকট প্রয়োজন উপস্থাপন করবে না। তাহলে তোমাদেরকে রিযিক দেওয়া হবে না এবং তোমরা সফলকাম হবে না । কারণ অল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে আামর ক্রোধ রয়েছে।” হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিবরাণী হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। ইবনুল জাওযী তাঁর মওযু‘আত কিতাবে এর উল্লেখ করেছন।
৩০. কোন এক ব্যক্তি জীবনে কখন ও নেক কাজ করেনি । কিন্তু সে জনগণকে ঋণ দিত। সে তার কর্মচারীকে বলে দিত , বিনা কষ্টে যতটুকু দিতে পারে তা গ্রহণ করবে। আর যা না দিতে পারে তা করো এবং ক্ষমা করে দিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবে। অতঃপর যখন সে মৃত্যুবরণ করল, আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কখনও কোন নেকী করেছ?” সে বলল, “না, তবে আমার একটি কর্মচারী ছিল। আমি জনগণকে ঋণ দিতে অভ্যস্ত ছিলাম। অতঃপর যখন আমি তাকে তাগাদা করতে প্রেরণ করতাম বলে দিতাম, যা সহজে দিতে পারে তা গ্রহণ করবে। আর যা পরিশোধ করতে কষ্টসাধ্য তা ছেড়ে দিও এবং ক্ষমা করে দিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।” আল্লাহ্ বললেন, “তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। ” নাসায়ী আলোচ্য হদীসখানা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩১. তাওরাতে লেখা রয়েছে, যার কোন মেয়ে বার বছর বয়সে পৌছে অথচ সে তাকে বিবাহ দেয়না অতঃপর সে কোন পাপ কাজ করে, তবে এর সে পাপ তার ওপর বর্তে। ইমাম বায়হাকী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
[পরিণত বয়সে পৌছার সাথে সাথেই মেয়ের বিবাহ দানের ব্যাপারে সচেতন হওয়া পিতা মাতার ওপর আবশ্যক।]
৩২. নিশ্চয়ই তওবা পাপকে ধৌত করে ফেলে এবং সাওয়াব সমূহ পাপকে দুর করে দেয়। আর বান্দা আরামের সময় যখন তার রবকে স্মরণ করে, তখন তিনি বিপদের সময় তাকে রক্ষ করেন। আর এটা এজন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আমি কখনও আমার বান্দার জন্য দুটি নিরাপত্তা একত্র করি না এবং তার জন্য কথনও দুটি ভীতি একত্র করি না। যদি সে ইহজগতে আমার ভয় থেকে নিরাপদে আছে মনে করে, তবে আমি তাকে সে দিন ভয় দেখাব, যে দিন আমি আমার বান্দাকে সমবেত করব। আর যদি সে আমাকে ইহজগতে ভয় করে, তবে আমি যেদিন আমার বান্দাহগণকে জান্নাতে সমবেত করব, সেদিন তাকে নিরাপদে রাখব। তার জন্য নিরাপত্তা স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে আমি ধ্বংস করব তাদের মধ্যে তাকে ধ্বংস করব না।” আবু নুয়ইম আলোচ্য হাদীসখানা শাদ্দান ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩৩. যে ব্যক্তি তিনটি কাজে লিপ্ত হল সে নিশ্চয়ই পাপকাজ করল। যে ব্যক্তি অন্যায় কাজের জন্য পতাকা উড়ল, যে ব্যক্তি মাÑবাবার অবাধ্য  হল, অথবা অত্যাচারীর সঙ্গে চলাফেরা করল তাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে সে নিশ্চয়ই গুনাহ করল। ইবনু মানী প্রমুখ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩৪. মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আঃ) কে হাজার প্রকার শিল্প বাণিজ্য শিখালেন এবং তাকে বললেন, “তুমি তোমার ছেলেকে ও সন্তানÑসন্তুুতিকে বল, যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করতে না পর, তবে এ সকল শিল্পÑবাণিজ্য দ্বারা দুনিয়া তলব কর। আর দ্বীনের পরিবর্তে (দুনিয়য়াকে) তা তলব করো না, কারণ দ্বীন শুধু আমার জন্য নির্ধারিত। যে ব্যক্তি দ্বীনের পরিবর্তে দুনিয়া তলব করে সে ধ্বংস হোক।” হাকেম আলোচ্য হদীসখানা আতিয়া ইবনে বাশীর মাযানী রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩৫. এমন দুজন মুসলমান নেই যারা সাক্ষাত করে এবং একজন তার সঙ্গীর হাত ধরে : বরং আল্লাহ্র উপর আবশ্যক হয়ে যায় তাদের দোয়া বিশেষ ভাবে কবুল করা এবং তাদেরকে ক্ষমা না করে তাদের হাত পৃথক না করা। আর এমন কোন সম্প্রদায় নেই, যারা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য সমবেত হয়, এটা দ্বারা শুধু তাঁর দয়া ছাড়া আর কিছু চায় না, তাদের প্রসঙ্গে আকাশ থেকে জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা করে এই বলে ঃ তোমরা মজলিশ ত্যাগ কর এ অবস্থায় যে, তোমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছ। আমি “তোমাদের অপরাধগুলো সওয়াবে পরিণত করে দিয়েছি।” আহামদ প্রমুখ আলোচ্য হদীসখানা হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩৬. শেষ বিচার দিবসে এক ব্যক্তি তার পিতার সাক্ষাত পাবে এবং বলবে, “হে পিতা! আমি তোমার কিরূপ ছেলে ছিলাম ?” সে বলবে, “উত্তম ছেলে।” ছেলে বলবে, “হ্যাঁ।” তা হলে আজ কি তুমি আমার আদেশ পালন করবে?” সে বলবে, “হ্যাঁ।” তা হলে আমার পরিধেয় ধর । তখন সে তার পরিধেয় ধরবে। তারপর সে চলতে থাকবে এমন কি আল্লার্হ নিকটে এসে পৌছাবে এবং তার প্রয়োজন উপস্থাপন করবে। আল্লাহ্ বলবেন, “হে আমার বান্দা ! তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে চাও প্রবেশ কর।” সে বলবে, “হে প্রভু! আমার পিতা আমার সঙ্গে আছে। আর নিশ্চয়ই আপনি প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন আপনি আমাকে অদ্যকার দিনে অপমানিত করবেন না।” আল্লাহ্ তার পিতাকে একটি হায়েনাতে পরিনত করে দিবেন এবং তা জাহান্নামে পড়ে যাবে। সে তার নাকে ধরবে। আল্লাহ্ বলবেন, হে আমার বান্দা! এটা কি তোমার পিতা ? ” সে বলবে, “না প্রভু! আপনার ইয্যতের কসম!” বায্যার আলোচ্য হাদীসখানা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩৭. নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ কতিপয় প্রাণী অকৃতি পরিবর্তন করবেন। আর যখন মানুষ কোন একটি অপরাধে লিপ্ত হয়, তারপর আল্লাহ্ বলেন, “সে আমার প্রতি বিদ্রæপ করেছে।” অতঃপর আল্লাহ্ তার আকৃতি পরিবর্তন করে দেন। অতঃপর শেষ বিচার দিবসে আল্লাহ তাকে মানুষ করে পুণর্জীবন দান করবেন। বুখারী আলোচ্য হাদীসখানা দুর্বল হাদীস হিসাবে রেওয়ায়েত করেছেন।
৩৮. নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ তিনটি বস্তু ছাড়া অন্য কিছু সরাসরি নিজ (কুদরতী) হাতে সৃষ্টি করেননি। তিনি যাবতীয় বস্তুকে বলেছেন “হও”। তখনই তা হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ যখন আদম ও ফিরদাউসকে নিজ (কুদরতী) হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং একে (ফিরদাউসকে) বলেছেন: আমার ইয্যত ও মর্যাদার কসম! তোমার মধ্যে কোন কৃপণ আমার সান্নিধ্যে বাস করতে পারবে না। আর কোন নির্লজ্জ ব্যক্তি তোমার সুগন্ধ পাবে না।” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩৯. যাকে চারটি বস্তু দেওয়া হয়, সে চারটি বিষয় থেকে মাহরুম হয় না। যাকে দু’আ দেওয়া হয় তাকে দু’আ গ্রহণ থেকে মাহ্রুম করা হয় না, কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “তোমরা আমাকে আহব্বান কর, আমি তোমাদের আহব্বানে সাড়া দিব।” আর যাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের গুণ দেওয়া হয় তাকে আধিক্য থেকে মাহ্রুম করা হয় না, কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “যদি তোমরা শোকর গুজার হও, তবে আমি তোমদেরকে আরও বেশি দেব।” যাকে ক্ষমা প্রার্থনার স্পৃহা দেওয়া হয়, তাকে ক্ষমা থেকে মাহ্রুম করা হয় না, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি মহা ক্ষমাকারী।” আর যাকে তওবার প্রবণতা দান করা হয়, তাকে তওবা কবুল থেকে মাহরুম করা হয় না, কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “তিনিই তাঁর বান্দার তওবা কবূল করেন।” বায়হাকী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৪০. তোমাদের কেউ যেন নিজেকে নিকৃষ্ট ও তুচ্ছ না করে । যদি সে আল্লাহ্র এমন কোন আদেশ দেখতে পায় যাতে কথা বলা তার উচিত, কিন্তু সে এ প্রসঙ্গে কোন কথা বলে না , অতঃপর সে আল্লাহ্ তা‘আলার মুখোমুখি হবে। যে অবস্থায় সে তা (অর্থাৎ আল্লাহ্র আদেশ প্রসঙ্গে কথা বলার সুযোগ) নষ্ট করে দিয়েছে। তখন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলবেন, “এ প্রসঙ্গে কথা বলতে তোমার কিসে নিষেধ করেছিল?” সে বলবে মানুষের ভয়।” আল্লাহ্ বলবেন, “তোমার ভয় করার বেশি হকদার আমিই ছিলাম।” তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে রেওয়ায়েত করেছেন।

৪১. যখন চুল ঝুলানো হয়, অহঙ্কারের সাথে চলাফেরা করে এবং শ্রোতার কথায় কান দেয় না, মহান ও মর্যাদাশীল আল্লাহ্ বলেন, “আমি আমার সত্ত¡ার কসম করে বলছি, আমি তাদের কতিপয়ের দ্বারা অপর কতিপয়ের উপর অকল্যাণ প্রেরণ করব।” খারায়েতী আলোচ্য হাদীসখানা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৪২. যাকে চারটি বিষয় কবুল করা হয়, তাকে চারটি বস্তু দেওয়া হয়। এর তাফসীর আল্লাহ্র কিতাবে যাকে যিকির করার প্রবণতা দেওয়া হয় তাকে আল্লাহ স্মরণ করেন। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, আর“আমাকে তোমরা স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব।” আর যে ব্যক্তিকে দু‘আ দেওয়া হয়, তাকে দু‘আর পারিশ্রমিকও দেওয়া হয়। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “আমাকে ডাক, আমি তোমদের ডাকে সাড়া দেব।” আর যাকে কৃতজ্ঞতা দেয়া হয়, তাকে করুণার প্রাচুর্যও দেওয়া হয়। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর- নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে আরো বেশি দিব।” আর যাকে ক্ষমা প্রার্থনার তাওফীক দেওয়া হয়, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকটে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাকারী।” বায়হাকী অলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৪৩. কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত কোরআন যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফিরে না যায়। অতঃপর আকাশের চারিদিকে মৌমাছির গুণ গণ শব্দের ন্যায় কোরআনের গুণ গুণ শব্দ হতে থাকবে। তখন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলবেন, “তোমার কি হয়েছে?” কোরআন বলবে, “আমি তোমার নিকট থেকে বের হয়েছিলাম এবং তোমার নিকট ফিরে আসব। আমাকে তিলাওয়াত করা হয়, কিন্তু আমার বক্তব্য অনুযায়ী কাজ করা হয় না।” তখন কোরআনকে উঠিয়ে নেয়া হবে। দায়লামী অলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5540
  • Total Visits: 692488
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1125

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ ইং
  • ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৮:৫০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018