23 Nov 2024, 08:32 am

বিশ্বকাপে বিশ্বকে চমকে দিবে কাতার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দুয়ারে কড়া নাড়ছে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ফুটবল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে ক্রীড়া– দুনিয়ার এই মহাযজ্ঞ শুরু হতে আর বাকি মাত্র ১১ দিন। মরুভূমিতে ঘেরা কাতারে এই মুহূর্তে তাই চলছে ভীষণ রোমাঞ্চের ছড়াছড়ি। বিশ্বের নানা প্রান্তের অতিথিকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি মরু উপত্যকায় প্রায় সম্পন্ন। সাজিয়ে তোলা হচ্ছে রঙিন আলোয়। এতসব আয়োজন ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ নামে খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরেই। সফল এক আয়োজন উপহার দিয়ে গোটা ফুটবল দুনিয়াকেই চমকে দিতে প্রস্তুত মধ্যপ্রাচের দেশ কাতার।
২০ নভেম্বরে পর্দা উঠবে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের। এই প্রথম এমন মহাযজ্ঞ আয়োজন কাতারের। নয়নাভিরাম অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম তৈরি, খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্টদের থাকা-খাওয়াসহ দর্শকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধার প্রস্তুতিই সেরে রেখেছে কাতার। বিশ্বকাপের দায়িত্ব পেয়েই সকলকে চমকে দেওয়ার কথা বলেছিল তারা। সেই লক্ষ্যে কাতার কতটা সফল তার উত্তর অবশ্য সময়ের হাতে। তবে খরচের নিরিখে যে শুধু ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ এবং এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে ব্যায়বহুল ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপকে ছাপিয়ে গেছে তা নয়, ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭ বিশ্বকাপের একত্রিত খরচকেও ছাপিয়ে গেছে কাতার!
এ যাবৎকালের ইতিহাসে এখন পর্য়ন্ত সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছিল ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে। সেবার সেলেসাওরা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য খরচ করেছিল ১,৩২,৭০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এরপর ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপ আয়োজনে খরচ হয়েছিল ১,০২,৬২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপ আয়োজনের খরচ ১ লাখ কোটি টাকা পেরোয়নি।

ব্রাজিল ও রাশিয়ায় তা পেরোলেও কাতার সকলকে পেছনে ফেলে দিল। কাতার বিশ্বকাপের আয়োজন করতে খরচ হয়েছে ১৭,৬৮,১৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এত পরিমাণ অর্থ খরচের পেছনে একাধিক কারণও রয়েছে। বিশ্বকাপের জন্য কাতারে ৮টি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি তৈরি করতে হয়েছে দলগুলোর জন্য অনুশীলনের মাঠও। মাঠে দর্শক ও ফুটবলারদের নানারকম সুযোগ-সুবিধার জন্যও খরচ হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

কাতারে সব হোটেল মিলিয়ে ঘরের সংখ্যা ছিল কম-বেশি ৩০ হাজার। যার প্রায় পুরোটাই ফিফা অনেক আগে থেকে বুক করে ফেলেছিল। বিশ্বকাপ দেখার জন্য কাতারে প্রচুর সংখ্যক দর্শক উপস্থিত হচ্ছে। তদের জন্য তৈরি করতে হয়েছে হোটেলও। এছাড়া দর্শকদের স্টেডিয়ামে যাতায়াতের জন্য পরিবহনেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। নামানো হয়েছে চার হাজার বাস। এছাড়াও বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়কে আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তুলার জন্যও প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজকরা।
এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে বিতর্কও। যার শুরু হয়েছিল সেই কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকেই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হওয়ার কারণে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনটা যেন পশ্চিমা বিশ্ব কোনোভাবে মেনেই নিতে পারছিল না। এমনকি যারা বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাচ্ছে তারাও নাক সিটকাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজন নিয়ে।

ঠিক এমন পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণকারী ৩২ দেশকে সতর্ক করে দিয়েছেন খোদ ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তার মতে বিশ্বকাপে এসে রাজনীতি নয়, বরং খেলার দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ফিফা সভাপতি। যেখানে তিনি ফুটবলকেই সব কিছুর ঊর্ধ্বে তুলে ধরার কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই চিঠিতে ফিফা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক লিখেন, ‘দয়া করে ফুটবলেই আপানারা সব মনোযোগ নিবদ্ধ করুন। পৃথিবীতে যত আদর্শিক এবং রাজনৈতিক মত-পথ আছে, এসবের সঙ্গে ফুটবলকে কোনোভাবেই গুলিয়ে ফেলবেন না।’
২০১০ সালে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজকের মর্যাদা লাভ করে। এরপর যত বিতর্ক তৈরি হয়েছে দেশটিকে কেন্দ্র করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে; স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য শ্রমিকদের নিম্ন মজুরি দেয়া, অমানবিক আচরণ করা এবং ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে না দেয়ার অভিযোগ। তবে সেইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই স্বপ্নের এই আয়োজনকে ঘিরে এখন পুরোদুস্তর ব্যস্ত সময় পার করছে কাতার। এর মধ্যেই ফুটবলপ্রেমীদের এক খুশির সংবাদ দিল আয়োজকরা। খেলা দেখা যাবে টিকিট ছাড়াই।

যদিও বা এই সুযোগ সবার জন্য নয়। যারা বাইরের দেশ থেকে কাতারে খেলা দেখতে যাবেন কেবলমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে একটি শর্তও ছুড়ে দিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। অবশ্যই একটি হায়া কার্ড বানাতে হবে। এটি টুর্নামেন্ট আইডেন্টিফিকেশন ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এই কার্ডটি থাকলে টিকিটের প্রয়োজন হবে না সমর্থকদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাবর হামুদ জাবর আল নুয়াইমি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

২০ নভেম্বর উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক কাতার। তার পরেরদিন হল্যান্ডের মোকাবিলা করবে সাদিও মানের সেনেগাল। বিশ্বকাপ ঘিরে এখন উৎসবের নগরী কাতারের রাজধানী দোহা। কাতারের সুউচ্চ বড় বড় ইমারত ও দালানকোঠা, রাস্তাঘাট সেজেছে নতুন সাজে। দোহা শহরের সৌন্দর্য উপভোগ ও প্রিয় দলের সমর্থন নিয়ে ব্যস্ত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও। প্রবাসীরা বলছেন, কাতারে এখন সাজ সাজ রব। কিভাবে সাজানো হয়েছে, সেই দৃশ্যই দেখতে এসেছেন তারা। তারা খুবই আনন্দিত যে এখানে বিশ্বকাপ আয়োজন হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 8361
  • Total Visits: 1275267
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২০শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৮:৩২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018