অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চীনের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর নড়বড়ে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন বিশ্বনেতারা। সফররত বিশ্ব নেতারা শনিবার (১২ নভেম্বর) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সম্মেলনে তারা রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, তাইওয়ান ঘিরে আঞ্চলিক উদ্বেগ, দক্ষিণ চীন সাগর ও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন।
কম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেনে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত আগামী সপ্তাহের ‘জি-২০’ সম্মেলনের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নিতে শনিবার নম পেন পৌঁছান।
আসিয়ান সম্মেলনের সময় কম্বোডিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতার সঙ্গে বাইডেনের পৃথক বৈঠকের কথা রয়েছে। এক সপ্তাহের এ সম্মেলনে বৈশ্বিক নানা জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
সম্মেলনের প্রথম দিন মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন আসিয়ান নেতারা। তারা জানান, মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাজনৈতিক নিরাপত্তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে আছে। দ্রুত শান্তি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন না করলে মিয়ানমারকে একঘরে করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
শনিবারের সম্মেলনে দক্ষিণ কোরীয় নেতা ইউন ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় চীন ও জাপানকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সংলাপের প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে নেতাদের নিয়ে বিশেষ সম্মেলনও থাকবে। এর মাধ্যমে যুদ্ধের প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের মতো বিষয়গুলো মোকাবিলা করা যাবে।
ইউন জানান, উত্তর কোরিয়া যে পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করেছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য হুমকি। এজন্য এক সুরে কথা বলতে হবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাও একই সুরে কথা বলেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কে চিয়াংয়ের সঙ্গে আলোচনায় তিনি দুই দেশের মধ্যে আরও গঠনমূলক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ার কথা বলেন।
বাইডেন তার বক্তব্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক নিয়ম বজায় রাখতে মার্কিন প্রতিশ্রুতির ওপর গুরুত্ব দেবেন বলে জানান একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা। বিশ্লেষকেরা অবশ্য বলছেন, সম্মেলনে বাইডেনের উপস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো নাটকীয় পরিবর্তন ঘটবে না।
তবে ওয়াশিংটন সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান গ্রেগ পোলিং জানান, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার চার বছর মেয়াদে একবারও আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেননি। তবে এবারের সম্মেলনে বাইডেনের উপস্থিতি থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে আবার স্বাভাবিক কূটনীতিতে ফিরেছে তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
এছাড়াও নম পেনের কয়েকটি বৈঠকে যুক্ত হবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবাও রয়েছেন সেখানে। আসিয়ানের সঙ্গে তিনি সহযোগিতা চুক্তি করেছেন। এশিয়ার কয়েকটি দেশের নেতার সঙ্গে তিনি পৃথক বৈঠক করবেন। তাদের কাছে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ঘটনায় নিন্দা জানানোর আহ্বান জানাবেন তিনি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারে অবিলম্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য দেশটির জান্তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার কম্বোডিয়ায় আসিয়ান সম্মেলন চলাকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি। গুতেরেস মনে করেন, মিয়ানমারকে অন্তহীন দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্ত করার এটিই একমাত্র পথ।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে উৎখাতের পর থেকে মিয়ানমার রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্যে আছে। তখন থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, আগামী সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের জোট ‘জি-২০’ সম্মেলন শুরু হচ্ছে। আসিয়ান সম্মেলন থেকে অনেক নেতা সেখানে যাবেন। বালিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন লাভরভ। সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত থাকবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী একযোগে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার মিশরের শারম আল-শেখের রেড সি রিসোর্টে ‘কপ-২৭’ জলবায়ু সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
Leave a Reply