22 Feb 2025, 04:37 pm

ভোলার তারুয়া সৈকত’সহ চরাঞ্চল অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভোলার ছোটবড় অসংখ্য চরাঞ্চল ও দক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশনের বিস্তৃত বনাঞ্চল ঢালচর, কুকরি-মুকরি, চর পাতিলা, চর লিউলিন ও পর্যটনভূমি তারুয়া সৈকত’সহ জেলার অসংখ্য চরাঞ্চলে অতিথি পাখিদের আগমনে মুখর। অপরুপ এ দৃশ্য যেনো সবুজ বন আর নদীর পানিকে সাজিয়ে তুলেছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমেই শান্ত এ-দ্বীপে প্রশান্তির প্রত্যাশায় সুদূর সাইবেরিয়া হতে অতিথি পাখি এসে পর্যটন প্রেমীদের সঙ্গে ভালোবাসার মেলবন্ধন ঘটায়।

বিচিত্র পাখ-পাখালির মধুময় কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে এখানকার জনপদ। বছরজুড়ে তারুয়ার পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত হরেক রকম পাখিদের কলকাকলিতে সরব হয়ে ওঠেছে। এখানে এখন শীতের সময়টা যেন নতুন রূপ-লাবণ্যের শুভ্রতা ছড়ায়।

ভোলার চরাঞ্চলের পাখি অভিজ্ঞরা জানান, এখানকার চরজনপদে জুলফি পানচিল, গাঙ্গচিল, সোনাজিরিয়া, উত্তরের লেঞ্জাহাঁস, কালোলেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা, ধূসর মাথা টিটি, সিথি হাঁস, খুন্তে হাস, খয়রা চখাচোখি, ছোট পানকৌরী, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ঙ হাঁস, ধূসর বগা, পাতি হাঁস, কালো মাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থ জিরিয়া, গো বগা, মেটে রাজ হাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতি চেগাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।

তাছাড়া মূলত শীত মৌসুমের শুরুতেই সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এখানকার চরাঞ্চলে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মুূখর হয়ে উঠেছে দক্ষিণের এ জনপদ। এখানকার এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ডানা মেলে পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের মনোমুগ্ধময় দৃশ্য যেন ব্যাকুল করে তোলে আগত দর্শনার্থীদের। দুই পাশে পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ আর কলকাকলির শব্দ শুনলে মনে হয় পর্যটক কিম্বা দ্বীপবাসী পাখির দেশেই বসবাস করছেন। গাঙ্গেয় জেলা ভোলার প্রত্যঞ্চলে এখন হরহামেশাই এমন দৃশ্যের দেখা মেলে ।

পাখি বিষেশজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ ধরনের অতিথি পাখির আগমন ঘটে। যার সিংহভাগই আসে ভোলাতে। তাই প্রতিবছর বাংলাদেশ বার্ডক্লাব ভোলাতেই পাখিশুমারি কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিবছর এনসিসি’র আয়োজনে ভোলায় পাখি বরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের লক্ষ্য নির্বিশেষে পাখির পক্ষে জনমত তৈরি করা।

স্থানীয়দের মধ্যে জলজ ও বনবাসী পাখির জীবন ও আবাস, প্রজনন ও খাদ্যাঞ্চল রক্ষার আবেদন ছড়িয়ে দেওয়া।

তথ্যমতে, জেলার চরফ্যাশন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার নদীপথের দূরত্ব পেরিয়ে দক্ষিণ আইচা থানার ঢালচর ইউনিয়ন। বঙ্গোপসাগর ঘেষে ঢালচর থেকে পূর্ব দিকে চর শাহজালাল ও চর আশরাফের মাঝামাঝি বিচ্ছিন্ন ভূমি তারুয়া সৈকত। সেখানকার গুটিকয়েক জনবসতিপূর্ণ এলাকা ব্যতীত পুরো দ্বীপটি-ই জনমানবহীন গহীন অরণ্যাবৃত তারুয়ার যেন পাখিদের এক সবুজ অভয়ারণ্যে রুপ লাভ করেছে। একটু দূরে তাকালেই দেখা যায় দল বেধে সারি সারি পাখির মেলা। এখানকার অন্তত অর্ধশতাধিক চরে আশ্রয় নিয়েছে এসব পাখি। পরিযায়ী পাখিদের আগমনকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন বেড়েছে বনাঞ্চলের সৌন্দর্য, অন্যদিকে পর্যটকরাও ছুটে আসছেন পাখিদের কোলাহলে।

ওই চরের বাসিন্দা আবু মিয়া বলেন, চরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় পরিযায়ী পাখি। দল বেধে পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

অপর পর্যটক রফিকুল ইসলাম বলেন, তারুয়ায় সাইবেরীয় পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ শুনতে অনেক ভালো লাগে। শীত মৌসুমে অনেকে পাখি দেখতে ছুটে আসেন এ সমুদ্র দ্বীপে। বিগত বছরগুলোতেও পাখিদের ভালোবাসার ডাক শুনতে তিনি এসেছিলেন এখানে।

সরেজমিন চরফ্যাশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা ঢালচর, মনপুরা, কলাতলীর চর, চর কুকরি মুকরি, চর শাহজালাল, চরশাজাহান, চর পিয়াল, আলাউদ্দিন চর, চরনিজাম, ডেগরারচর অপরদিকে জেলা সদর ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, রামদেবপুর, বড়াইপুর, কানি বগার চর ও দৌলতখানের নেয়ামতপুর, মদনপুরাসহ বিভিন্ন চরে পাখিদের আনা-গোনায় বেশ সরব হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। সকাল-বিকেল খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় এদের। ডানা মেলে উড়ে চলা ও পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে এসব চরাঞ্চল।

চরবাসীর অভিযোগ, একশ্রেণির অসাধু শিকারি বিষটোপ, ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে আবার ছোট ছোট মাছের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পাখি শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চরে আশ্রয় নেওয়া পাখিরা অনেকটা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।

এছাড়াও পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল, বিচরণভূমি ও খাদ্যের সংকটেও রয়েছে প্রকট। এসব কারণে গত দুইযুগে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে পাখিদের সংখ্যা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রশাসনিকভাবে পাখি শিকারিদের আটক করে সীমিত সময়ের জন্য জেল-জরিমানা দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে পাখিদস্যুদের প্রতিহত করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, যেকোনো পাখি শিকার করলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন সোচ্চার রয়েছে।

এ ব্যাপারে ভোলার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল বলেন, শীতের শুরুতে চরফ্যাশনের বৃহত্তম বনাঞ্চলে পরিযায়ী পাখিদের আগমন শুরু হয়েছে। এখানকার চরগুলো হরেকরকমের পাখিদের জন্য বিখ্যাত। পাখিদের কেউ যাতে শিকার করতে না পারে সেজন্য বন বিভাগের আটটি রেঞ্জে থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। তারা নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

এছাড়াও পাখি শিকার বন্ধে স্পেশাল টিম গঠন ও গোয়েন্দা নরজদারিও বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5816
  • Total Visits: 1612220
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1708

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ২২শে শা'বান, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৪:৩৭

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
     12
2425262728  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018