বিনয় হলো মানুষের একটি মহৎ গুণ। এটা সামাজিক জীবনের প্রাণÑস্বরূপ। এটা ছোট বড় ,ধনী দরিদ্র ও বিদ্বান মূর্খ সকলের মন জয় করে এবং তাদেরকে এক আশ্চর্যজনক প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে । অহংকার ও আত্মদাম্ভিকতার বিরুদ্ধে বিনয় একটি মৌন প্রতিবাদ। এর বিশেষ তাৎপর্য এটা সকলের প্রতি কার্যত ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শনের বাহ্যিক রূপ। এটা পরস্পরের মধ্যে প্রেম ও প্রীতির সৃষ্টি করে এবং আলাহ্র নির্দেশ অনুসারে মানুষকে একতাবদ্ধ হয়ে সুন্দর মধুর জীবন যাপনের আস্বাদনে সহয়তা করে।
অহংকার মানুষের যাবতীয় মানবিক বৈশিষ্টকে নষ্ট করে দেয়। তার সমস্ত গুণাবলী আগুনের মত ভষ্ম করে ফেলে। অহংকারীরা তাই জাহান্নামী হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মশ্লাঘা ও অহমিকা হারাাম।
আত্মীয়তার বন্ধন শক্তিশালী করা একটি মানবীয় মৌলিক অধিকার রক্ষকারী মহৎ গুণ। গোটা মানবজাতি একই আদি পিতা আদমের সন্তান। নূতন নূতন আতœীয়তার যোগসূত্র স্থাপন ছাড়াও মানুষ হিসাবেই তারা সকলে এক। অতএব, আতœীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় রাখা মানুষের কৃত্রিম সহানুভূতির প্রয়াস নহে, বরং এটা প্রকৃতির তাকিদ ও আলাহ্ তা‘আলার পছন্দনীয় নীতি। জুলুম ও অত্যাচার হলো মানুষের এক ঘৃণ্য ব্যবহার। যেখানে বিনয়, মহত্তে¡র ভাবধারা এবং আতœীয়তার সুমধুর সম্পর্ক বিরাজ করে, সেখানে অত্যাচারের কোন স্থান নেই। জুলুমকারীর প্রতি আলাহ্ তা‘আলা অত্যান্ত নাখোশ।
১। মহান ও মর্যাদাবান আলাহ্ তা‘আলা বলেন, “যে ব্যক্তি আমার নিকট এমনভাবে নম্রতা প্রকাশ করে আমি তাকে এমনভাবে উন্নত করি।” ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা আব্দুলাহ ইবনে উমর (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২। মহান আলাহ্ বলেছেন, “ যে ব্যক্তি আমার হক সম্পর্কে বিনয় প্রকাশ করে (বা আমার জন্য নম্যতা প্রদর্শন করে) এবং আমার সামনে বিনয় প্রকাশ করে, আর আমার যমীনে গর্ব প্রকাশ করে না, আমি তাকে উন্নত করতে থাকি, এমন কি শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ইলীয়্যীন পৌঁছিয়ে দিব।” আবূ নূয়াইম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩। দুনিয়াতে যে ব্যক্তি নিজেকে উচ্চ মনে করে থাকে ,আলাহ্ তাকে শেষ বিচারের দিন নীচু করবেন। আর যে ব্যক্তি ইহকালে আলাহ্র সামনে নম্রতা অবল্বন করে তিনি তাকে শেষ বিচারের দিন পূর্ণ জীবন দান করে নিকটে আনবেন এবং জনতার মধ্য থেকে তাকে বাছায় করে নেবেন এবং বলবেন ,“হে আমার উত্তম বান্দা!” মহান ও মর্যাদাবান আলাহ সে দিন বলতে থাকবেন, “আমার নিকটবর্তী হও, আমার নিকটবর্তী হও। তুমি নিশ্চয়ই সে সম্পপ্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত যাদের কোন ভয় নেই এবং যাদের দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই।” ইবনে আসাকির আলোচ্য হাদীসখানা উবাই ইবনে কা‘ব (রা) এর সূত্রে বর্ণনা েেরছেন।
৪। মহান ও মর্যাদাবান আলাহ্ বলেছেন,“ প্রত্যেক নামায আদায়কারীর নামাযই আমি কবুল করি না। আমি শুধু সে ব্যক্তির নামায কবুল করি, যে আমার মহত্তে¡র নিকট নম্রতা প্রকাশ করে, আমার নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজের প্রবৃত্তিকে সংযত করে রাখে, আমার অবাধ্যতার কাজ বারংবার করা থেকে বিরত থাকে, ক্ষুধার্তকে খাবার দান করে, উলঙ্গকে পোশাক দান করে, বিপদগ্রস্তদের প্রতি দয়াপরবশ হয় এবং আগন্তুক অতিথিকে আশ্রয় দান করে এবং এসব করে আমারই উদ্দেশ্যে। আমার ইয্যত গৌরবের কসম! নিশ্চয়ই আমার নিকট তার চেহারা সূর্যের আলো অপেক্ষা বেশি উজ্জ্বল, যেহেতু আমি মুর্খতাকে তার জন্য জ্ঞানে পরিণত করি, অন্ধকারকে তার জন্য আলোতে পরিণত করি, সে আমাকে ডাকলে আমি তার ডাকে সাড়া দিই, সে আমার নামে কসম করে তা পালন করলে, আমি তাকে আমার ক্ষমতায় রক্ষা করি এবং আমার ফেরেশতাকুল তার হিফাযত আশা করে। তার দৃষ্টান্ত আমার নিকট এরূপ যেন (সে মানবকুলের মধ্যে এরূপ একজন) বেহেশতগুলোর মধ্যে ফিরদাউসÑযার ফল কোন দিন বিনষ্ট হয় না । আর যার অবস্থার কোনদিন পরিবর্তন হয় না ”দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত হারিসা ইবনে ওহাব (রা) Ñ থেকে বর্ণনা করেছেন।
৫। প্রত্যেক দিন আলাহ্ তা‘আলা বলেন, “আমি তোমাদের পরাক্রমশালী প্রতিপালক। অতএব, যে ব্যক্তি উভয় মানুষের কল্যাণ চায়, সে যেন সর্বশক্তিমানের অনুগত হয়ে চলে।” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা) Ñ থেকে বর্ণনা করেছেন।
৬। শেষ বিচারের দিন নিশ্চয়ই আলাহ্্ তা‘আলা বলবেন,“ আমি তোমাদেরকে কাজ করারা জন্য আদেশ দিয়েছিলাম এবং তোমাদের নিকট থেকে ওয়াদা গ্রহণ করেছিলাম কিন্তু তোমরা তা নষ্ট করে দিয়েছ ,আর তোমরা স্বীয় বংশীয় সম্পর্ককে শ্রেষ্ঠ বস্তু মনে করেছ। অতএব, আজ আমি আমার পরিচয় ও মর্যাদা উচ্চ করব এবং তোমাদের বংশ মর্যাদাকে নীচু করব। সংযমশীল ব্যক্তিগণ কোথায়? তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মুত্তাকী ব্যক্তি আলাহ্র নিকট উত্তম।” হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা আবূ হুরায়রা (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
[[ইহকালে যে ব্যক্তি নিজেকে বা নিজের বংশ পরিচয়কে বড় ও উচ্চ মনে করে, সে আলাহ্ তা‘আলার নিকট হেয় প্রতিপন্ন হয়। আর ইহকালে যে ব্যক্তি নম্র ও বিনয়ী হয় এবং স্রষ্টার নিকট আতœসমর্পণ করে চলে, সে পরিণামে বড় মর্যাদার অধিকারী হয়।]
৭। কোন বান্দার ওপর যখন যুলুম করা হয়, আর সে প্রতিশোধ নেয়ার শক্তি রাখে না এবং এরূপ কোন লোকও থাকে না সে উৎপীড়িতের সহায়ক হয় তখন সে আকাশের দিকে তাকায় এবং আলাহকে ডাকে (স্মরণ করে)। আলাহ্ বলেন, “হে আমার বান্দা ! আমি হাজির আছি, আমি এখন থেকে (দুনিয়া ও আখিরাতে) তোমাকে সাহায্য করব। হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবুদ দারদা (রা) Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন
৮। মহান আলাহ্ বলেছেন, “অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার পরিধেয়। অতঃপর যে ব্যক্তি তার কোন একেটি নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।” ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা)Ñও আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৯। মহান আলাহ্ তা‘আলা বলেছেন,“ শ্রেষ্ঠত্ব , গর্ব ও অহমিকা আমারই। আর ক্ষমতা আমাার গোপনীয় বিষয়। সুতরাং, যে ব্যক্তি আমাার সাথে এর কোন একটি নিয়ে কাড়াকাড়ি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।” হাকেম ও তিরমিযী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা) Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১০। আলাহ্ তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয়ই গৌরব হলো আমার পরিধেয় এবং অহংকার আমার চাদর। অতএব, যে কেহ তা নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে আমি তাকে শান্তি দিব।” তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রা)Ñএরে সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১১। নিশ্চয়ই মহান ও পরাক্রমশালী আলাহ্র তিনটি পোশাক রয়েছে, তিনি গৌরবের পায়জামা, দয়ার জামা এবং অহংকারের চাাদর পরিধান করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি এরূপ যে, আলাহ্ তাকে যে সম্মান দিয়েছেন তা ছাড়া আরো সম্মান দাবি করে, তাকে উপহাসচ্ছলে বলা হয় Ñ“তুমি উপভোগ কর, কারণ তুমি শক্তিশালী, মানী ব্যক্তি।” আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে, আলাহ্ তার ওপর দয়া বর্ষণ করেন। সেÑই সে ব্যক্তি, যে সেই জামা পরিধান করেছে যার জন্য সে উপযুক্ত। আর যদি সে অহংকার করে ,তখন আলাহ্ তার সে চাদরও কেড়ে নেন সে যার যোগ্য । কারণ আলাহ্ তা‘আলা বলেন, “ কোন ব্যক্তিরই সে যোগ্যতা নেই যে, আমার সঙ্গে কাড়াকাড়ি করে এবং আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার না।” হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা আবূ হুরায়রা (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১২। আলাহ্ তা‘আলা বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তুমি যদি মজলুম হও তবে অপর ব্যক্তির বিরুদ্ধে শুধু এ অভিযোগটুকু কর যে, সে তোমার প্রতি জুলুম করেছে। আর যদি অপর ব্যক্তি তোমার বিরুদ্ধে এজন্য অভিযোগ করে যে, তুমি তার ওপর জুলুম করেছ, তবে আমার অভিপ্রায় অনুযায়ী আমি তোমার পক্ষের ও তোমার বিপক্ষের অভিযোগ গ্রহণ করি, আর যদি আমি চাই তবে তোমাদের উভয়কে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত বিলম্বিত করে দেই। তখন তোমাদের উভয়ের জন্য আমাার ক্ষমাকে প্রশস্ত করে দেই।” হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা) Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৩। মজলুম ব্যক্তির দু‘আ মেঘের উর্দ্বে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার জন্য আকাশের দরজাগুলি খুলে দেয়া হয়। আর বরকতময় ও মহান পুতিপালক আলাহ্ বলেন, “আমার ইয্যতের কসম! দেরী হলেও আমি নিশ্চযই তোমাকে সাহায্য করব।” ইবনে হাব্বান আলোচ্য হাদীসখানা আবূ হুরায়রা (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৪। বিদ্রোহী ও জুলুমকারী হইও না, কারণ আলাহ্ তা‘আলা বলেন,“ নিশ্চয়ই তোমাদের জুলুম তোমাদের নিজেদের ওপরেই বর্তাবে।” হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা আবূ বাকরা (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৫। মহান ও শক্তিশালী আল্লাহ্ তা‘আলা (বান্দাদের) অনুসরণ করবেন এবং সেতুর উপর আপন পা স্থাপন করবেন ও বলবেন, “ আমাার ইয্যত ও মহত্তে¡র কসম! আজকে দিনে অত্যাচার আমাকে অতিক্রম করে যেতে পারবে না।” অতএব, তিনি মানুষের একের নিকট থেকে অপর ব্যক্তির অবিচারের প্রতিদান গ্রহণ করবেন: এমন কি তিনি শিং ভাঙ্গা বকরীকে একটি গুঁতা দেওয়ার মাধ্যমে তার প্রতি সুবিচার করবেন।” তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা সাওবান (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৬। মহান ও পরাক্রমশালী আলাহ্ বলেন, “আমি আমার ইয্যত ও মহত্তে¡র কসম করে বলতেছি, নিশ্চয়ই আমি অত্যাচারীর ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করব তাড়াতাড়ি হোক অথবা দেরীতে হোক। নিশ্চয়ই আমি সে ব্যক্তির প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ করব, যে মজলুম ব্যক্তিকে দেখেছে অথচ তাকে সাহায্য করার ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও সাহায্য করেনি।”হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
[আলোচ্য হাদীসে মজলুমের সাহায্য করার জন্য জোর তাগীদ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি মজলুমের যথাসাধ্য সাহায্যার্থে অগ্রসর না হয় আলাহ্ তাকে আখিরাতে শাস্তি দেবেন।]
১৭। মহান ও পরাক্রমশালী আলাহ্ বলেন, “আমি রহমান, আমি রেহম সৃষ্টি করেছি এবং তার নাম আমার নাম থেকে বের করেছি। অতএব, যে ব্যক্তি তাকে মিলিত করে আমি তার সাথে মিলিত হব, আর যে ব্যক্তি তা কর্তন করে , আমিও তাকে কর্তন করব, আর যে ব্যক্তি তা ছিন্ন করে, আমিও তা ছিন্ন করব।’ আহমদ ও বুখারী আলোচ্য হাদীসখানা আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৮। মহান ও বরকতময় আলাহ্ রেহমকে বলেছেন,“আমি তোমাকে নিজ (কুদরতী) হাতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমার জন্য আমার নাম থেকে নামকরণ করেছি এবং তোমার স্থান আমার নিকটবর্তী করেছি। আমাার ইয্যত ও জালালের কসম! আমি নিশ্চয়ই সে ব্যক্তির সাথে মিলিত হব, যে তোমাার সাথে মিলিত হয়। নিশ্চয়ই সে ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব, যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আর যে পর্যন্ত তুমি সন্তুষ্ট না হও সে পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হব না।”হাকেম ও তিরমিযী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৯। মহান আলাহ্ তা‘আলা আসমানগুলো এবং যমীন সৃষ্টি করবাার পূর্বে উম্মুল কিভাবে লিখে রেখেছিলেন ,“নিশ্চয়ই আমি রহমানুর রহীম (পরম দাতা দয়ালু) আমি রেহম (সম্পর্ক) সৃষ্টি করেছি এবং তার জন্য আমার নাম থেকে নামকরণ করেছি। অতএব, যে ব্যক্তি তাকে যুক্ত করে, আমিও তাকে আমার সাথে যুক্ত করব, আর যে ব্যক্তি তা কর্তন করে, আমিও তাকে কর্তন করব।” তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত জাবির (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২০। মহান আলাহ্ বলেছেন, “যে ব্যক্তি তোমাকে মিলিত করে আমিও তাকে মিলাব, আর যে ব্যক্তি তোমাকে কর্তন করে আমিও তাকে কেটে দেব।” ইমাম বুখারী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আয়েশা (রা) Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২১। তাওরাত নামক আসমানী গ্রন্থে লেখা আছে, যে ব্যক্তি তা পছন্দ করে যে, তার হায়াত দীর্ঘ হোক এবং তার জীবিকা বেড়ে যাক, সে যেন আতœীয়তার বন্ধন ঠিক রাখে। তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২২। শেষ বিচার দিবসে শাসকদেরকে হাজির করা হবে। তাদের মধ্যে সুবিচারকও থাকাাবে এবং অত্যাচারীও থাকবে, এমন কি তাদের সকলকে দোযখের সেতুর উপর দাঁড় করান হবে, তারপর আলাহ্ তা‘আলা বলবেন, ‘তোমাদের ব্যাপারে আমার কিছু প্রশ্ন আছে।’ অতঃপর তাদের মধ্যে অত্যাচারী ব্যক্তিকে, শাসন পরিচালনায় যে ঘুষ গ্রহণ করত এবং সে ব্যক্তি, যে প্রতিদ্ব›দ্বী দুই দলের কোন একটির দিকে সাক্ষ্য গ্রহণকালে নিজেকে ঝুঁকাত অর্থাৎ পক্ষপাতিত্ব করত তাদের ছাড় দেয়া হবে না, বরং উভয়কে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবেÑযার গভীরতা সত্তর বছরের পথের সমান হবে। অতঃপর সে ব্যক্তিকে আনা হবে যে হদ্দের (শরীয়তের শাস্তিদানের) ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন করেছিল। আলাহ্ তাকে বলবেন ,“হে আমার বান্দা ! আমি যে আদেশ করেছিরাম তুমি তা অপেক্ষা বেশি শাস্তি কেন দিলে?” তখন সে বলনে, “আমি তোমার স্বপক্ষে তার ওপর রাগ হয়েছিলাম।” আলাহ্ তা‘আলা বলবেন,“আমার ক্রোধ অপেক্ষা তোমার রাগ বেশি হওয়া কি সমীচীন হযেছিল?” তারপর সে ব্যক্তিকে আনা হবে যে হদ্দ পালনে কমতি করেছিল। আলাহ্ তাকে বললেন, ‘হে আমার বান্দা ! তুমি নির্ধারিত হদ্দে কমতি করলে কেন?” সে আরজ করবে , “আমি তার ওপর দয়া করেছিলাাম।” তখন আলাহ্ বলবেন, “আমার রহমত অপেক্ষা কি তোমার দয়া বেশি হয়েছিল?” আবূ ইয়ালা হুজায়ফা (রা)Ñএর সূত্রে আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।
২৩। শেষ বিচারের দিন আলাহ্ তা‘আলা একদল মানুষকে কবর থেকে উঠাবেন। তাদের মুখে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকবে। (তাদেরকে বলা হবে ) ‘তোমরা কি জানো না যে, আলাহ্ তা‘আলা বলেছেন, যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের মাল খায়, নিশ্চয়ই তারা আগুন দিয়ে তাদের পেট পূর্ণ করে এবং অনতিবিলম্বে তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে?” ইবনু আবূ শায়বা আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবি বারযা (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২৪। শেষ বিচার দিবসে মৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর সে বলবে, “হে আমার প্রতিপালক! এ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করুন সে আমাকে কেন হত্যা করেছে?” তখন আলাহ্ তা‘আলা বলবেন,“তুমি কি কারণে তাকে হত্যা করেছ?” সে বলবে, “অমুকের স্বত্বের খাতিরে ……..।” ইমাম নাসাঈ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত জুনদুব রাদিয়ালাহু আনহুর সূত্রে রেওযায়েত করেছেন।
২৫। শাসকগণকে বিচার দিবসে উপস্থিত করা হবে , যারা শাসনে ন্যূনতম বা শৈথিল্য করেছে এবং যারা শাসনে সীমা লংঘন করেছেন, তখন আলাহ্ বলবেন,“তোমরা আমার যমীনের কোষাধ্যক্ষ ছিলে এবং আমার বান্দাদের আশা ভরসা ছিলে, আর তোমাদের মধ্যে আমার ইচ্ছা ন্যস্ত ছিল।” তারপর তিনি সে ব্যক্তিকে বলবেন, “যে হদ্দ পালনে ত্র“টি করেছিলে, তুমি যে কাজ করেছ তার প্ররোচক কে ?” জবাবে সে বলবে, “আমি তার প্রতি দয়া করেছিলাম।” তখন তিনি বলবেন , “তুমি কি আমার বান্দার প্রতি আমার চেয়ে বেশি দয়ালু ?” আর যে ব্যক্তি হদ্দের সীমা লংঘন করেছিল, তাকে বলবেন,“তুমি যা করেছ কিসে এটা করতে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে?” সে বলবে ,“আমি রাগের বশে এমন করেছি।” তখন আলাহ বলবেন,“(হে আমার ফেরেশতাগণ!) তাদেরকে নিয়ে যাও এবং তাদেরকে জাহান্নামের কোন খুঁটির সাথে বাঁধ। আবূ সাঈদ নাক্কাশ আলোচ্য হাদীসখানাা হযরত আনাস (রা) থেকে বণ্যনা করেছেন।
[শাসনকর্তার পক্ষে বিচারকার্যে শিথিলতা দেখানো অথবা অন্যায়ভাবে শাস্তি প্রদান উভয়ই আলাহ্র নিকট অত্যাচারের শামিল। তজ্জন্য আলাহ্ কঠোর শাস্তি দেবেন।]
২৬। শেষ বিচার দিবসে অন্যায়ভাবে নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীর হাত ধরে আলাহ্ তা‘আলার সামনে হাযির হবে এবং তার শির থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। আর সে বলতে থাকবে , হে আমার প্রতিপালক ! আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করুন, সে কি জন্য আমাকে হত্যা করেছিল? তখন আলাহ্ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন,“তুমি কি জন্য অমুক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে?’ অভিযুক্ত ব্যক্তি জবাবে বলবে, “আমি তাকে অমুক ব্যক্তির সম্মানের জন্য খুন করেছিলাাম।” তখন তিিিন বলবেন, “তা আলাহ্রই (অর্থাৎ ইয্যত আলাহ্রই)।” তিবরাণী আলোচ্য হাদীসখানাা আব্দুলাহ মাসউদ (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
Leave a Reply