নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরা সদর উপজেলার পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের ঘোড়ামারা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী পারু মিয়ার স্ত্রী হাফসা বেগম (৩৬) স্থানীয় সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের খপ্পরে পড়ে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ার অভিযোগ দিয়েছেন এবং লাভলী বেগম তার ছেলে নাজমুলের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১২ লাখ টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে হাফসা বেগমকে অভিযোগ করেন। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের পরিচয় হলো আফসা বেগমের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ঘোড়ামারা গ্রামের নজরুল শিকদারের স্ত্রী লাভলী বেগম (৫৫), ভিটাসাইর গ্রামের মঞ্জুর মোল্লার পুত্র মারুফ মোল্লা (৩২) ও মেহেদী মোল্লা (৩০)।
মোকাম মাগুরার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মৌ: ফৌ: কা: বি: আইনের ৯৮ ধারায় মামলা হয়েছে। ঘটনা হলো হাফসা বেগমের স্বামী পারু মিয়া দীর্ঘ দিন মালয়েশিয়া রাস্ট্রে থাকে। সন্ত্রাসীরা ভুল বুঝাইয়া গত ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী ৩ শত টাকার ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে সহি করিয়ে নেয় এই স্ট্যাম্পে কিছু লেখা ছিলো না এবং সেই সাথে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক মাগুরা শাখা যাহার হিসাব নম্বর ০১৭৩১২২০০০০৮৬৬৯ এর চেক বই সহ চেকের ২টি পাতায় স্বাক্ষর করে নেয়। বিবাদীপক্ষ মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতে পারে বা জাল-জালিয়াতি করিয়া মূল্যবান দলিলপত্র করতে পারে সেজন্য চেক ও স্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য S/W ইস্যু মাগুরা সদর থানার ওসিকে আদেশ প্রদান করে মোকাম মাগুরার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
মো: দ: বি: ৩৮৫/৩৮৬/৫০৬/১১৪ ধারায় মামলার সূত্রে আসামি ৩ জন হলো হাফসা বেগমের দূরসম্পর্কের আত্মীয় এবং লাভলী বেগমের আত্মীয় মারুফ মোল্লা ও মেহেদী মোল্লা। মেহেদী মোল্লার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে হাফসা বেগমের উপর, যার কারণে হাফসা বেগম তাদেরকে তার বাড়িতে আসতে নিষেধ করে। আর এর জন্য ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী মারুফ ও মেহেদী মোল্লা বাদী হাফসা বেগমের বাড়িতে এসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ১৩ ফেব্রুয়ারী রাত ১০ টার সময়ে ২৫ হাজার টাকা নেয় আর ১৮ ফেব্রুয়ারী তারিখে বাকি টাকা দিতে হবে। হাফসা বেগমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে পুত্র সন্তান হাসিবুলকে খুন করিবে বলে হুমকি দেয়। পুনরায় ১৮ ফেব্রুয়ারী তারিখে রাত ১০ টার সময়ে হাফসার বাড়িতে এসে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় মেহেদী মোল্লা চাইনিজ কুরাল দিয়ে হাফসার পিঠে আঘাত করলে তিনি ভয়ে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে দেয়। ঘটনার বিষয়ে স্বাক্ষী ঘোড়ামারা গ্রামের মৃত হানেফের পুত্র মোঃ আকবর মৃধা, আকবর মৃধার স্ত্রী মোছাঃ রোকেয়া বেগম, আকবরের পুত্র টুকু মিয়া, ইসলাম মোল্লার পুত্র জাহিদ সহ আরও লোকজনকে বললে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারী রাত ১০ টার সময়ে মারুফ, মেহেদী ও লাভলী ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। আর টাকা না দিলে হাফসার ছেলে হাসিবুলকে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ করে খুন করিয়া লাশ গুম করে ফেলিবে বলে হুমকি দেয়। এরপর আড়পাড়া ইউসিবি ব্যাংকের শাখা ৭৮৬৩২৪১০০০০১৫৩৯৯ একাউন্টে টাকা না দিলে তোদের সবাইকে খুন করে ফেলবো।
৮ মার্চ তারিখে মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোছাঃ হাফসা বেগমকে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।
সৌদি প্রবাসী নজরুল শিকদারের স্ত্রী লাভলী বেগম জানান, ধর্ম আত্মীয় করে ছিলাম ২-৩ বছর হলো হাফসার ভাই ফারুক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। তার স্ত্রী মোছাঃ সুমি খাতুনের সাথে পরিচয় করে দেয় হাফসা বেগম। সেনাবাহিনীর সদস্য ফারুকের দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায় এই সুবাদে আফসার ভাবি সুমির সাথে কথা হয় আমার। ছেলে নাজমুল কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে আমার স্বামী নজরুল শিকদারের কাছে থেকে ৫ লাখ টাকা এবং আমি নিজে বিভিন্ন সময়ে ৭ লাখ টাকা দেয়, চাকরি না দিতে পারায় চাপ দিয়ে তার মধ্যে থেকে টাকা দিয়েছে আফসা প্রায় ১ লাখ টাকা। লাভলী বেগম আরও জানায়, হাফসা বেগম প্রতিবেশীদের হাস, মুরগী ধরে চুরি করে বিক্রি করেছে এবং মালিক গ্রামের জিন্দারের স্ত্রী রাবিয়া খাতুনের কাছে থেকে ১ লাখ টাকা চিটিং করে নিয়েছে। আর ভায়নার মোড়ের ফল ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ৩০ হাজার টাকা ফাঁকি দিয়ে নিয়ে নেয়। লাভলী বেগম সবশেষে বলেন, সেনাবাহিনীর চাকরি দেওয়ার কথা বলে তারা আমাকে কাগজে মোড়ানো হলুদ খামের ভিতর পারু মিয়ার সার্টিফিকেট দেয় পরে আমার ভাগ্নে মারুফ দেখে বলে এসব ভুয়া কাগজপত্র। তিনি আরও জানান আমিও মামলা দায়ের করেছি হাফসার বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর বেশ কয়েকজন লোক অভিযোগ করে বলেন চিটারি বাটপারি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হাফসা বেগম। স্বাক্ষী হিসেবে রহিমা খাতুন, মঞ্জিলা খাতুন, মারুফ, নীলা সহ বেশ কয়েকজন আফসার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে বলে নাজমুল কে সেনাবাহিনীর চাকরি দেওয়ার কথা বলে লাভলী বেগমের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মঞ্জিলা আরও জানায় ব্যাংকের চেক নেওয়ার সময় আমি লাভলী বেগমের সাথে ছিলাম।
পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ লিয়াকত আলী জানান, লাভলী বেগম ও হাফসা বেগম ধর্ম আত্মীয় হয়ে ছিলো। একসাথে খাওয়া দাওয়া, বাড়িতে যাতায়াত, একসাথে শুয়ে থাকাসহ সবকিছু করেছে। তাদের মধ্যে টাকা নিয়ে লেনদেন হয়েছে বলে শুনেছি এব্যাপারে উভয় পক্ষের স্বাক্ষী লোকজনের কাছে শুনলে সব ঘটনা জানা যাবে।
Leave a Reply