ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরা মহাসড়কের ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ জনজীবন,হুমকিতে জনস্বাস্থ্য। মাগুরা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
এটি খুলনা বিভাগের একটি জেলা। সড়ক পথে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী থেকে মাগুরার দূরত্ব ১৬৮.৫ কিলোমিটার। গুরুত্বপূর্ণ মাগুরার এ অংশের প্রধান মহাসড়ক হলো আলমখালী টু ওয়াপদা, ভায়নামোড় টু সীমাখালী মহাসড়ক। তেমনি এ জেলার ১০৪৯ বর্গ কিলো মিটার আয়তনে জনসংখ্যা রয়েছে ১০,৩৩,১১৫ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব: প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৯৪ জন। এজেলার এক তৃতীয়াংশ জনগণ উক্ত মহাসড়ক দুটি বেশি ব্যবহার করেন।আলমখালী মহাসড়ক টুওয়াপদা-ভায়নামোড় টু সীমাখালী মহাসড়ক আনুমানিক ৪৬ কিলোমিটার ঘুরে দেখা যায়, যানবাহন চলাচলের কারণে অতিরিক্ত ধুলাবালির দূষণে অতিষ্ঠ জনজীবন ও হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। মুখে মাস্ক, রুমাল ব্যবহার করেও স্বস্তি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, অতিরিক্ত ধুলাবালি উড়ছে মহাসড়কে। এতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিশু, বৃদ্ধা, পথযাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দার আবাসস্থলে বসবাসে অতিষ্ঠ জনজীবন ও হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। যানবাহন চলাচলের কারণে প্রধান আঞ্চলিক মহসড়ককে কুয়াশার মতো ধুলা উড়তে দেখা গেছে। মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে আইন অমান্য করে ওভার লোড নিয়ে বেপরোয়া গতিতে উন্মুক্তভাবে বালু বহন করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ চাকার ডাম্প বালুবাহী ট্রাক। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হলেও রহস্যজন কারনে প্রতিরোধে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। এসব যানের চাকার আঘাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নির্মিত সড়কটি ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়ছে বলে আশংকা সচেতন মহলের। প্রতিদিন এলাকাবাসীসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পরিবহন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা।
কেবল সড়কের ক্ষতি নয়,অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাগুরা রাজধরপুর বালুমহালের ইজারাদার আকিদুল ইসলাম ২ কোটি ৫৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং ঘষিয়াল বালুমহালে আবুল কালাম আজাদ ১কোটি ৩০ লক্ষ টাকা, ফান্ডে প্রদান করে বালুমহালের ইজারা নিয়েছেন। রাজধরপুর এবং ঘোষিয়াল বালুমহাল থেকে প্রতিদিন ১০ চাকার ডাম্প ট্রাকে করে দিন-রাতওভারলোড বালুবাহী গাড়ি উপজেলার বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। ১০চাকার ডাম্প বালুবাহী ট্রাক নামছে নদীর তীরে। এসব ট্রাকে করে ১১ থেকে ১৪ টন বালু বহন করা হচ্ছে।আর অনভিজ্ঞ চালকরা বেখেয়ালভাবেই চালাচ্ছে। সরকারি সম্পদের ক্ষতি দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও প্রতিরোধে রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসন-পুলিশ সদস্যদের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে বালুবাহী লাইসেন্স বিহীন ডাম্প ট্রাক। কিন্তু এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো আইন প্রয়োগ হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি গাড়িতে বালুর পরিমান উল্লেখ করা কথা থাকলেই নেই টোকেনে বালুর পরিমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাম্প ট্রাকের চালক বলেন, আমরা চালক ৮ শতফুট বালু নেয়ার কথা তবে আমাদেরকে অভার অতিরিক্ত লোড করে তারা দিচ্ছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলোবালি উড়ে রাস্তার দু’পাশের ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। ইট ভাটার টাকা বালুমহাল, জলমহল সব যাচ্ছে কি এলআর ফান্ডে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির কাছ থেকে মাঠ প্রশাসনের সংগৃহীত এলআর (লোকাল রিলেশন্স) তহবিলকে চাঁদাবাজি বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ আছে, এই তহবিলের সিংহভাগই খরচ হয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আপ্যায়ন আর কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজে। এই তহবিল গঠন এবং এর ব্যবহারে অর্থ বিভাগের কোনও অনুমোদন নেই।
তবে এ বিষয় মোঃ আব্দুল কাদের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাংবাদিকদের বলেন, পৌরসভার আওতাধীন উল্লেখযোগ্য মহাসড়ক গুলোর ধুলাবালি অপসারণের ব্যবস্থা চলছে দুই-একদিনের মধ্যেই মহাসড়কের উপর থেকে বালুগুলো সরানো হবে।
৩ ডিসেম্বর দুপুরে মাগুরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম বলেন, অনিবন্ধিত যানবাহন দেশ ও রাষ্ট্রের ক্ষতিকারক এমন যানবাহনের বিষয় আমরা আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।
মাগুরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, সড়ক নষ্টের অন্যতম কারণ ওভার লোড বহন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডাঃ শামীম কবির বলেন, ধুলাবালিতে বিভিন্ন রোগের জীবাণু থাকে। কমবয়সী ও বেশি বয়সী মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ধুলাবালি মানব শরীরের ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। এছাড়া সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, টনসিল প্রদাহ, গলাব্যথা, অ্যাজমাসহ হতে পারে বিভিন্ন রোগ।
Leave a Reply