22 Dec 2024, 04:14 pm

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাগরণ ; ইসরাইলের দ্রুত বিলুপ্তির কাউন্ট ডাউন শুরু হওয়ায় ফিলিস্তিনের দখলদাররা আতঙ্কিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে ছাত্রদের ব্যাপক বৈপ্লবিক জাগরণ বা গণ-অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে এই বিপ্লবকে ইহুদি-বিদ্বেষ বলে দাবি করেছেন।

সামাজিক মাধ্যম এক্স বা সাবেক টুইটারে দেয়া এক পোস্টে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। দৈনিক রাই আল ইয়াওম পত্রিকার সম্পাদক আবদুল বারি আতওয়ান এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, আমি আমার জীবনে আর কখনও নেতানিয়াহুর এমন চেহারার মত এমন অশ্রদ্ধাপূর্ণ চেহারা আর দেখিনি।

আবদুল বারি আতওয়ান-এর মতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিরোধী যে ব্যাপক জাগরণ ও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে তা শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের বর্তমান বর্ণবাদী সরকারের পতন না ঘটা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

এটা স্পষ্ট বিশ্ব-জনমতের ওপর নেতানিয়াহুর কর্তৃত্ব শেষ হয়ে গেছে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন প্রবল বিক্ষোভ এর আগে কেবল ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে ও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দেখা গেছে। সেইসব বিক্ষোভের ফলে মার্কিন সরকার ভিয়েতনামে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল এবং পতন ঘটেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের।

নেতানিয়াহু বিশ্ব জনমতের ওপর প্রভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে হাসবারা নামের একটি প্রচারণার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে নিয়ে। মিথ্যার বেসাতি ছড়িয়ে বিশ্বজনমতকে ইসরাইলের পক্ষে বিভ্রান্ত করতে এ প্রতিষ্ঠান  প্রতি বছর ব্যয় করত ১৫০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সব পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ ও অপরাধ আর বর্বরতা ঢাকার এই ব্যাপক প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত  প্রায় বানচাল হয়ে যাচ্ছে তড়িঘড়ি করে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাক-স্বাধীনতা দমনের অভিযানের কারণে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে গাজার জনগণের অসাধারণ প্রতিরোধ, দৃঢ়তা ও শহীদদের রক্তের বরকতে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই গৌরবময় জাগরণ ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকারের আদর্শিক দাবি ও প্রেরণাকে মার্কিন মুল্লুকেরও চলতি বিষয়ে পরিণত করেছে। এ ছাড়াও এ বিষয়টিকে ঘিরে মার্কিন সমাজে ন্যায়বিচারের পুনরুজ্জীবন, স্বাধীনতা ও জাতিগত শুদ্ধি-অভিযান এবং বর্ণবাদ বন্ধ করা সংক্রান্ত  বৈধ সংগ্রাম গড়ে উঠছে ও এ নিয়ে মার্কিন প্রজন্মগুলোর মধ্যে সংঘাতও দেখা দিচ্ছে।

আতওয়ানের মতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের প্রবল জাগরণে ইহুদিবাদী ইসরাইলের আতঙ্কের কয়েকটি বড় কারণ:  

দৈনিক রাই আলইয়াওম-এর সম্পাদক আবদুল বারী আতওয়ান-এর মতে, নেতানিয়াহু ও অন্যান্য ইহুদিবাদী নেতারা এই ভেবে আতঙ্কিত যে ফিলিস্তিনপন্থী এই ছাত্র-বিপ্লব গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপে ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর কারণ প্রথমত: নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদিবাদী লবির এক জোরালো আস্তানা এবং বোস্টনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুরূপ হওয়া সত্ত্বেও এ দুই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয়েছে ফিলিস্তিনপন্থী ও ইসরাইল বিরোধী ছাত্র-বিপ্লব। এর অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রজন্মগুলো কখনও তাদের বাপ-দাদাদের মত ইহুদিবাদের মিথ্যা প্রচার-প্রোপাগাণ্ডায় আর প্রভাবিত হবে না। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই ছাত্ররা যারা গণগ্রেফতার ও দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে তারা সমাজের সাধারণ শ্রেণীর সন্তান নন বরং তারা সমাজের এলিট শ্রেণী তথা মার্কিন কংগ্রেসম্যান, সিনেট সদস্য ও বড় বড় ব্যবসায়ী আর রাজনীতিবিদদের সন্তান। অন্য কথায় এ ছাত্ররা হবে আগামী দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নেতৃবৃন্দ।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররা গাজায় ইসরাইলের নব্য-নাৎসীবাদী হামলার প্রতিবাদে যে বৈপ্লবিক আন্দোলন করছে তার ওপর দমন-পড়ীন চালানোর ইসরাইলি উস্কানি এমন এক বিশ্বাসঘাতকতা যে এ আন্দোলনের নেতারা কখনও তা ভুলবেন না। পরিহাসের বিষয় হল ইসরাইল নিজেকে নাৎসীবাদী বর্বরতার শিকার বলে দাবি করলেও ফিলিস্তিনীদের ওপর আরও বহুগুণ ভয়াবহ বর্বর অপরাধযজ্ঞ চালাচ্ছে ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের ফিলিস্তিনপন্থী এই বৈপ্লবিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই ইহুদি। তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াচ্ছে ও ফিলিস্তিনের নানা প্রতীক ব্যবহার করায় বিষয়টি নেতানিয়াহুর গালে এক ধরনের বড় চপেটাঘাত এবং এ থেকেই এ আন্দোলনকে ইহুদি-বিদ্বেষী আন্দোলন  বলে যে অভিযোগ করছে নেতানিয়াহু তার অসত্যতা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের এই বৈপ্লবিক আন্দোলন বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর ওপর ইহুদিবাদের একচ্ছত্র কর্তৃত্বকে ধ্বংস করেছে এবং ইসরাইলি মানদণ্ডগুলোর প্রতি বিশ্বজনমতকে সমমুখি করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে গণমাধ্যম ও বিশ্ব-জনমতের ওপর ইহুদিবাদের কর্তৃত্ব বিলুপ্ত হচ্ছে।

-মার্কিন ছাত্রদের এই বৈপ্লবিক আন্দোলনের ফলে মার্কিন নাগরিকদের সচেতনতা ও এই বিশ্বাস বাড়ছে যে গাজায় ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের প্রতি মার্কিন সরকারের আর্থিক ও সামরিক সহায়তার ফলে সারা বিশ্বে মার্কিন স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হচ্ছে এবং ইহুদিবাদী লবিগুলো ও তাদের সহযোগীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হতে চাপ সৃষ্টি করছে, ফলে মার্কিন করদাতা নাগরিকদের অর্থ বিজাতীয় স্বার্থের পেছনে লোপাট বা বিনষ্ট হচ্ছে। আর তাই মার্কিন ছাত্র-আন্দোলনের সৃষ্ট এ বিষয়টিও তাই ইহুদিবাদীদের জন্য মারাত্মক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ছাত্র বিপ্লবকে দমন করার উসকানি ইহুদিবাদী ফ্যাসিবাদী এবং স্বৈরাচারী শাসকদের পক্ষ হতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার একটি প্রচেষ্টা।  আর তাও করা হচ্ছে এমনসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব প্রতিষ্ঠানকে পশ্চিমারা তাদের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতীক বলে গর্ব করে থাকে।

আতওয়ান তার প্রবন্ধে এক জোরালো মন্তব্যে আরও লিখেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর শান্তিপূর্ণ ছাত্র বিপ্লবের প্রতি নির্লজ্জতা ও অপমানের চূড়ান্ত পর্যায়টি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলিতে সশস্ত্র আধাসামরিক গোষ্ঠী স্থাপনের জন্য ফ্যাসিবাদী ইহুদিবাদী শাসন মন্ত্রিসভার জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইটমার বেন গাভিরের অনুরোধ যাতে ইহুদি প্রতিষ্ঠানগুলিকে “সুরক্ষা” করা যায়।

বেন গভিরের এই অনুরোধের অর্থ হল ইহুদিবাদীদের রক্ষায় এই দেশগুলোর ব্যর্থতা; যে দেশগুলো ভুয়া ইহুদিবাদী রাষ্ট্র গঠন ও ইসরাইলকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভূমিকা পালন করেছে এবং বেন গভিরের এই অনুরোধ এই দেশগুলোর জন্য গত ৭৫ বছরে ইসরাইলের প্রতি তাদের সীমাহীন সমর্থন দেওয়ার পুরস্কার।

এই নিবন্ধ অনুসারে, এটা বলা যায় যে জায়নবাদী নাৎসিবাদ আজ উন্মোচিত হয়েছে এবং আমেরিকান ছাত্রদের মাধ্যমে তার কুৎসিত মুখ থেকে মুখোশ মুছে ফেলা হয়েছে এবং ইসরাইলের দ্রুত বিলুপ্তির কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছে।

এই ছাত্র বিপ্লব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। আশা করা যায় এটি একটি নতুন দেশ প্রতিষ্ঠা করবে যা নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে সক্ষম হবে এবং বিশ্বের নিপীড়িতদের সাহায্য করবে। এ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র বিপ্লবের পর, আমরা ন্যায়বিচার ও সমতার সমর্থনে ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনে একই ধরনের বিপ্লব প্রত্যক্ষ করব।

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4544
  • Total Visits: 1408988
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ১৯শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৪:১৪

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018