অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজশাহীতে এবার ভূট্টা থেকে তৈরি হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব পলিব্যাগ। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ভুট্টার স্টাচ থেকে পরিবেশ বান্ধব পলিব্যাগ তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক। পচনশীল এই পলিব্যাগ তৈরি করে বিদেশেও রপ্তানি শুরু করেছেন তিনি।
জৈব উপাদানে তৈরি এই পলিব্যাগগুলো সাড়া ফেলতে শুরু করেছে স্থানীয় বাজারে। রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। তবে আইন ভঙ্গ করে পলিথিন ব্যাগের সহজলভ্যতা ও অবাধ ব্যবহারে মাথা তুলে দাঁড়ানো নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
তরুণ উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক জানান, ব্যবসার পাশাপাশি দীর্ঘদিন পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করায়-ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প কী হতে পারে তা নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এটি খুঁজতে গিয়েই জৈব উপাদানের তৈরি কাচামাল ব্যবহারে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরির কৌশল রপ্ত করেন তিনি।
২০২২ সালের দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল এলাকায় গড়ে তোলেন ক্রিস্টাল বায়োটেক নামের-পরিবেশবান্ধন ব্যাগ তৈরির প্রতিষ্ঠান। ইফতেখারুল হকের কারখানায় পলিথিনের বিকল্প যে ব্যাগগুলো তৈরি হয়, তার কাঁচামাল তৈরি হয় ভুট্টা থেকে। পলিথিন ব্যাগের চেয়ে বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ও টেকসই। আর ব্যাগগুলোর কাঁচামাল জৈব পদার্থ হওয়ায় দ্রুত মাটিতে মিশে যায় ফলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার কোনো কারণ নাই।
তার কারখানায় বিভিন্ন সাইজের প্রতিপিস ব্যাগ সাড়ে চার টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। রাজশাহীতে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ডোর টু ডোর গিয়ে এই পলিথিন সম্পর্কে অবগত করা হচ্ছে। যারা পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করেন ও সচেতন তারা সহজেই বিষয়টি বুঝে এই পণ্য সম্পর্কে পজেটিভ ধারণা নিয়ে ব্যাগ গুলো কিনছেন।
এই ব্যাগটি ব্যাপকভাবে বাজার দখল না করতে পারলেও প্রাথমিকভাবে রাজশাহীতে প্রায় ১০-১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বড় বাজার ধরতে করণীয় সম্পর্কে উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগগুলোর চাহিদা বাড়ছে। অতি সূলভ মূল্যে বা ফ্রিতে জনগণ বাজারে পলিথিন পাচ্ছে। আবার ভোক্তা পর্যায়ের যারা ব্যবসায়ী যেমন- মুদি দোকানদার, সবজি বাজার, মাছের বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সর্বশ্রেণির ব্যবসায়ীরা যদি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও আইনে নিষিদ্ধ বাজারে প্রচলিত পলিথিন সম্পর্ক সচেতন হয় সেগুলো পরিহার করে পরিবেশ বান্ধন পলিথিনে নজর দেয় তাহলে বড় বাজার ধরা সম্ভব। তিনি আশা করেন ভবিষ্যতে এই শিল্পের বিকাশ ঘটবে।’
সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে উদ্যোগ গ্রহণ করলে বড় বাজার পাওয়া সম্ভব হবে। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে এই শিল্পের ব্যাপক বিকাশ হবে। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারী সহায়ত চান এই উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে তার উৎপাদিত পলিব্যাগ রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে দেশে এর কাঁচামাল তৈরির ব্যবস্থা না থাকায় তা আমদানি করায় বাড়ছে এর উৎপাদন খরচ।’
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘পরিবেশ বান্ধব এই পলিথিনের বাজারজাত করণ বা প্রচার প্রচারণার জন্য যে পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন সেটা জেলা প্রশাসন করবে। অবৈধ পলিথিনের বাজারজাত যাতে না হতে পারে সেটি লক্ষ্য রাখা হবে। পাশাপাশি অফিসিলায় কাজে যত ধরনের পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো পরিহার করে এই পরিবেশ বান্ধব ব্যাগগুলো ব্যবহার করবো।
Leave a Reply