অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মা নদীর পাড়ে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি মিলেছে। কয়েকদিন ধরেই এখানে নদীর পানি ও পাড়ের বালু থেকে গ্যাসের বুদ বুদ উঠছে। শনিবার (১ নভেম্বর) দিনব্যাপি উপজেলার প্রেমতলীতে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। তারা পরীক্ষার জন্য তিন বোতল গ্যাসও সংগ্রহ করেছে।
স্থানীয়রা বলেন, প্রেমতলী ঠাকুরঘাটের প্রায় অর্ধশত স্থান থেকে বুদবুদ উঠছে। এই স্থানটি পদ্মা নদীর পানিতেই ডুবে ছিল। পানি কমে গেলে গত মঙ্গলবার স্থানীয়রা এই গ্যাসের বুদবুদ লক্ষ্য করেন। পরে তারা বুদবুদের স্থানে দিয়াশলাই জালিয়ে দেখেন বালুর ওপরেই আগুন জ্বলে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন অনেক মানুষ এই বুদবুদ দেখতে ভিড় করেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নদীর কিনারে তিনটি স্থান থেকে প্রতিনিয়ত বুদবুদ উঠছে। সেখান থেকে গ্যাস বের হওয়ার শব্দও পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়টি জানতে পেরে সেদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ ফায়ার সার্ভিসের একটি দলকে পাঠান। তারা দেখে গিয়ে ইউএনওকে এই বুদবুদ ওঠার সত্যতা নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেন ইউএনও।
এরপর শনিবার দুপুরে বাপেক্সের ব্যবস্থাপক (জিওলজি) ও ভূতাত্ত্বিক জরিপের দলপ্রধান এসএম নাফিফুন আরহাম, উপ-ব্যবস্থাপক ইমামুল ইসলাম ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) ব্যবস্থাপক রাসেল কবীর প্রেমতলীর পদ্মা পাড়ে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম।
বাপেক্সের দলটি নদীপাড়ের গ্যাস ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি দেখতে পান। পরে তারা বুদবুদের স্থানগুলো থেকে তিন বোতল গ্যাস সংগ্রহ করেন। তারা নদীর পাড়ে এবং তীর সংলগ্ন পানিতে অন্তত অর্ধশত স্থান থেকে বুদবুদ উঠতে দেখেন। প্রায় ১০০ ফুট দূরে নদীর ওপারে গ্যাস উদগীরণ হচ্ছে কি না তা দেখতে তারা নৌকায় চড়ে সেখানে যান। সেখানে গিয়েও তারা কয়েকটি স্থান থেকে বুদবুদ উঠতে দেখেন।
গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ জানান, গ্যাসের বুদবুদ ওঠার খবর পেয়ে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই ফায়ার সার্ভিসের দলকে পাঠিয়েছিলেন। বাপেক্স এসে নিশ্চিত করেছে, এখানে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে। এ জন্য জায়গাটি সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে যেন কেউ না যান, সেটি বলে দেওয়া হয়েছে। বাপেক্স পরবর্তী কার্যক্রম চালাবে।
বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক জরিপের দলপ্রধান এসএম নাফিফুন আরহাম বলেন, ‘আমরা ডিটেক্টরের মাধ্যমে মিথেন গ্যাসের আশানুরূপ উপস্থিতি দেখেছি। বুদবুদ ওঠার স্থান থেকে আমরা তিন বোতল গ্যাসও সংগ্রহ করেছি। এই গ্যাস ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। তারপর জানা যাবে, আমরা যে ধরনের খনিজ গ্যাস খুঁজি এটা সেটি, নাকি গাছপালা-লতাপাতা পচে তৈরি হওয়া অল্প কিছু গ্যাস। পরীক্ষার পরেই আমরা এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারব।
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে এই এলাকায় সিসমিক সার্ভে (ভূ-কম্পন) জরিপ হয়েছে কি না সেটিও আমাদের দেখতে হবে। এটির মাধ্যমে মানচিত্র আকারে বোঝা যায় মাটির নিচে কোথায় গ্যাস জমে আছে। সিসমিক সার্ভে অতীতে না থাকলে সেটিও আমরা করার উদ্যোগ নেব। পর্যাপ্ত গ্যাসের মজুদ থাকলে সেটি আগামীতে অবশ্যই উত্তোলন করা হবে।’