স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশের কৃষকদের বীজের চাহিদা মেটাতে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় অবস্থিত দত্তনগর কৃষি খামারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। যরা সারাদেশের কৃষকদের নিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম করেন তাদের খবর আমরা কেউ রাখিনা।
প্রায় ৭৭ বছর আগে কলকাতার বিশিষ্ট ঠিকাদার হেমেন্দ্র নাথ দত্ত ব্রিটিশ শাসনকালে এলাকার কিছু মানুষের সহযোগীতায় মহেশপুরের দত্তনগরে সবজি চাষ শুরু করেন। ব্রিটিশ এই নাগরিকের নাম অনুসারে এলাকার নাম দত্তনগর করা হয়।
ঝিনাইদহের মহেশপুরের বিশাল আয়তন ও চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার আংশিক আয়তন নিয়ে অবস্থিত দত্তনগরের হেমেন্দ্র নাথ দত্তের এই সবজি খামার। যা এশিয়ার বৃহৎতম কৃষি খামার গুলোর অন্যতম।
দত্তনগর এ বিশাল খামারের আওতায় ৫টি ফার্ম আছে। সেগুলো হলো মথুরা, গোকুলনগর, করিঞ্চা, কুশাডাঙ্গা ও পাথিলা।
ফার্মগুলোর মোট জমির পরিমাণ ২ হাজার ৭৩৭ একর। আবাদী জমির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার একর। নিচু জমি আছে ৬-শ’একর এবং বিল এলাকা আছে ২শ’একরের উপর। এর মধ্যে মথুরা খামারে ৪শ ৯০ একর, গোকুলনগর খামারে ৫শ ৭০ একর, করিঞ্চা খামারে ৫শ ৭০ একর, কুশাডাঙ্গা খামারে ৪শ ৮০ একর পাতিলা খামারে ৬শ ৩ একর জমিতে আউশ ধান, পাট, গম, মুগ, নেরিকা, কলাই, ভুট্টা, হাইব্রিড ধান, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। এখানে উৎপাদিত বীজগুলো তারা বিএডিসির কাছে হস্তান্তর করেন। এখানকার উৎপাদিত বীজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে এশিয়ার অন্য দেশেও রপ্তানি করা হয়।
এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বীজ উৎপাদনকারী দত্তনগর কৃষি খামারকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ।
এখানে ৫ জন উপ পরিচালক, স্টাফ আছেন ৬০ জন, প্রতিদিন ১ হাজার ৫শ লেবার কাজ করেন।
১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হেমেন্দ্র নাথ দত্তের খামারটি প্রায় ৩ হাজার একর জমির উপর অবস্থিত। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর রসদ সরবরাহকারী ঠিকাদার ছিলেন।
তিনি সেনাবাহিনীর জন্য সবজি সরবরাহের ঠিকাদারি লাভ করেন। তাজা সবজি উৎপাদনের জন্য নজ গ্রামদত্তনগরে এ বিশাল কৃষি খামার গড়ে তুলেন। ১৯৪০ সালে এ এলাকা ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নিভৃত পল্লী। সড়ক ছিল না।
রেলপথে দর্শনা স্টেশনে সবজি বহন করে নিয়ে কলকাতায় পাঠানোও ছিল দুরূহ ব্যাপার। দীর্ঘ সময় লাগায় পচেঁ যেত। তিনি দত্তনগরে হেলিপ্যাড স্থাপন করেন এবং প্রতিদিন হেলিকপ্টারযোগে টাটকা শাক-সবজি কলকাতায় সরবরাহ করে তিনি প্রচুর লাভ করতেন। খামারের কলেবরও বৃদ্ধি করেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর হেমেন্দ্র নাথ দত্ত দত্তনগর খামার ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। এ সময় ম্যানেজার ও কর্মচারিরা খামার দেখাশুনা করতে থাকেন।
১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার দত্তনগর খামার অধিগ্রহণ করে এবং কৃষি বিভাগের উপর পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে। ১৯৬২ সালে ফার্মের যাবতীয় সম্পত্তি কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিএডিসি, বিভিন্ন শস্য বীজ উৎপাদনে খামারটি কাজে লাগায়। অফিস, বাসভবনসহ নানান স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সেচের জন্য বসানো হয় গভীর ও অগভীর নলকূপ। আর ক্ষেতে পানি সরবরাহের জন্য পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হয়। আগে শ্রমিক দিয়ে শস্য কর্তন ও মাড়াই করা হতো এখন বড় বড় মেশিনের সাহায্যে ফসল কাটা ও মাড়াই করা হচ্ছে।
এখানে অফিস ভবন, স্টাফদের বাসভবন রয়েছে। সেচের জন্য রয়েছে ৩৬টি গভীর ও ১৩টি অগভীর নলকুপ এবং ১০টি পাওয়ার পাম্প।
ইতিপূর্বে ফার্মটির যুগ্ম পরিচালক ও উপ-পরিচালকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপচয়ের অধিযোগ থাকলেও বর্তমান যুগ্ম পরিচালক ও উপ-পরিচালকেরা এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দত্তনগর ফার্মটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে রাত-দিন আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।