অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের সম্মান জানাতে ১ ডিসেম্বরই ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হওয়া উচিত। বাসস’র সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি আজ একথা বলেন।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালনের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’সহ বেশ কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সংগঠন সম্প্রতি ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি, মুক্তিযোদ্ধারাও মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণা করার দাবি তুলছেন। এরই প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘কোন যুক্তি ছাড়াই আমি মনে করি, মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘদিন ধরে যেহেতু ১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দিবস করার দাবি জানিয়ে আসছেন, তাই এটা ১ ডিসেম্বরই হওয়া উচিত। ’
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি যে এটা খুবই ন্যায্য দাবি। এটা হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের সুপারিশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিটিং এর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছি। আশা করছি তিনি বিষয়টি সহৃদয়তার সাথে বিবেচনা করবেন। কেননা, একদিন আমরা থাকবো না, কিন্তু স্মৃতিটা ধারণ করবে দিবসটি। কেন এ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল -এই দিবস উদযাপনের মাধ্যমে তা আগামী প্রজন্মের মানুষ জানতে পারবে।’
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে প্রবাহমান সংগঠন আমরা একাত্তরের চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান বলেন, ২০১৪ সাল থেকে পহেলা ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালিত হচ্ছে। আমি মনে করি যে, মুক্তিযোদ্ধা দিবস বা মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা দিবস একটা থাকা দরকার। এটা হলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুক্তিযুদ্ধটা জীবিত থাকবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃণাল সরকার বাসসকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি দিবসের দাবি দীর্ঘদিনের। আমি মনে প্রাণে চাই যে পহেলা ডিসেম্বর হোক বা ডিসেম্বরের অন্য কোন দিন হোক সরকারিভাবে একটা ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ ঘোষণা করা হোক।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স বাড়ছে। কাজেই একসময় মুক্তিযোদ্ধাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা যদি এ জগৎ সংসার ছেড়ে চলে যান, মুক্তিযুদ্ধটাকে তো থাকতে হবে। তাই এরকম একটি দিবস সারা জাতির উদযাপন করা অত্যন্ত জরুরী। এই দিবস পালনের মধ্যে দিয়ে আমাদের মননে, মনে, নিত্যদিনের জীবনে এবং ইতিহাসে আমাদের জাতীয় জীবনে সেটা অহর্নিশ চলতেই থাকবে।
সরকারিভাবে একটি মুক্তিযোদ্ধা দিবস প্রতিষ্ঠিত হলে জাতিগতভাবে আমরা একটা উদযাপনের মধ্যে থাকবো। স্মরণের মধ্যে থাকবো। তাই, জাতীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস যদি ঘোষিত হয়, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ রাখতে বিপুল ভাবেই অবদান রাখবে বলে মনে করেন এই সংগঠক।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর এক বৈঠকে ১ ডিসেম্বরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ ঘোষণার সুপারিশ করা হয়। ওই বৈঠকে কমিটির সভাপতি মো. শাজাহান খানের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সুনির্দিষ্ট কোন মুক্তিযোদ্ধা দিবস না থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে পক্ষকালব্যাপি এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে আমরা একাত্তর সংগঠনটি। ০১-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিভৃতচারী মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সম্মান জানাবেন এই সংগঠনের সদস্যরা। একইসঙ্গে তারা যাদের পরিবার, পরিজন, প্রতিবেশী মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদেরকে স্ব-উদ্যোগে শুভেচ্ছা জানাতে আহ্বান জানাচ্ছে এই সংগঠন। এইসব শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছাতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের সন্তানদের।
সংগঠনের চেয়ারপারসন মাহবুব জামান বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হল, একাত্তরকে আমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনা। অর্থাৎ এটা এখন ৫১-৫২ বছর আগের ঘটনা নয়, সবসময় যাতে এটা জাগরুক থাকে আমাদের প্রাণে সেজন্যই আমরা একাত্তর কাজ করছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দেব।
তিনি বলেন, এই সম্মাননা জানানোয় কোনো অফিসিয়াল আনুষ্ঠানিকতার বাধ্যবাধকতা নাই। কোন আড়ম্বর নাই। কোনো ক্রেস্ট নাই। কোনো মেডেল নাই। আমরা কেবল তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে মনে করিয়ে দিচ্ছি এবং তাঁর সাথে আমরা নতুন প্রজন্মে র সংযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছি। তার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করাটাও কিন্তু সম্মান। তাকে একটা ফুল দেয়াও একটা সম্মান। সবসময় ক্রেস্ট দিতে হবে বা একটা অনুষ্ঠান করতে হবে সেটা জরুরী না। আমাদের সংগঠনের মূল ভাবনাটা হচ্ছে একাত্তরকে আমরা জীবনের একটা অংশ করতে চাই। প্রতিমুহূর্তে একাত্তর যাতে আমাদের সাথে থাকে এভাবে আমরা সমস্ত পরিকল্পনাগুলো করি।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে একইভাবে বিভিন্ন জেলায় এবং দেশের বাইরে যারা মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদেরকেও সম্মাননা জানাতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
Leave a Reply