16 Dec 2024, 02:35 am

মানবাধিকারকে কালো হাতিয়ারে পরিণত করেছে পাশ্চাত্যের শাসকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি বলেছেন, রাজনৈতিক অভিলাস চরিতার্থ করার কাজে মানবাধিকারের ব্যবহার এই অধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

তিনি বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে নিজের অফিসিয়াল এক্স পেজে দেয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন। পোস্টে তিনি বলেন: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে বছরের একটি দিন ঘোষণা করার যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তা নিয়ে মানব সভ্যতা গর্ব করতেই পারে।  কিন্তু রাজনৈতিক অভিলাস চরিতার্থ করার কাজে মানবাধিকারকে ব্যবহার এবং এই অধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, মানবাধিকার নামক পরিভাষার গ্রহণযোগ্যতাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মানবাধিকার বিষয়ক সর্বজনীন ঘোষণা অনুমোদন করে। এই ঘোষণায় ৩০টি ধারা রয়েছে যা মানবাধিকার সম্পর্কে জাতিসংঘের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করে। এই ঘোষণার ধারাগুলি মানুষের মৌলিক নাগরিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকারগুলি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যা প্রতিটি দেশের সমস্ত মানুষকে উপভোগ করতে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও মানবাধিকারের ধারণাটি বৈশ্বিক পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিক সমাজে স্বীকৃত, কিন্তু আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, অবস্থান ও কর্মের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, মানবাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমাদের নিজস্ব নির্দিষ্ট ও সীমিত সংজ্ঞা রয়েছে।  এই সংজ্ঞা অনুযায়ী তারা যে দেশগুলি পাশ্চাত্যের আধিপত্যের বিরোধিতা করে সেসব দেশের কথিত মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত শুরু করে এবং এ কাজে তারা তাদের নিজস্ব একদেশদর্শী মানদণ্ড কাজে লাগায়।

অথচ, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন দেশে এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও মানবাধিকার ইস্যুটির ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা রয়েছে; কাজেই পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে মানবাধিকারের নিজস্ব সংজ্ঞার ভিত্তিতে অন্যান্য দেশকে বিচার করা সম্পূর্ণ অন্যায়। মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের দ্বৈত মানদণ্ডের বিষয়টি বহুবার ইরানের মতো পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধাচরণকারী দেশগুলোর পাশাপাশি পাশ্চাত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে।

বহু বছর যাবত, পশ্চিমা আধিপত্যের বিরোধী দেশগুলোর বিরুদ্ধে প্রচারণাগত হামলা ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করার হাতিয়ার হিসেবে মানবাধিকারকে ব্যবহার করে আসছে পাশ্চাত্য।  উদাহরণ হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগের কথা উল্লেখ করা যায়।  বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা আইসিসি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তাকে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো স্বাগত জানিয়েছে। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওই একই আদালত যখন গাজায় যুদ্ধাপরাধ করার দায়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তখন পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকা তার তীব্র বিরোধিতা করেছে। বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ আইসিসির সদস্য হওয়ার কারণে এসব দেশ ওই আদালতের যেকোনো রায় মেনে চলতে বাধ্য; কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ নানা অজুহাত তুলে ধরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মার্কিন সরকার আদালতের রায় মানা দূরে থাক, উল্টো আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসের মুসলিম ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ইলহান ওমর এ সম্পর্কে বলেন: বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে ওয়াশিংটন যেসব দাবি করে তা কপটতায় পরিপূর্ণ।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, পশ্চিমারা মনে করে তাদের দেশগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না এবং এ কারণে, তারা তাদের দেশগুলোর বিশেষ করে আমেরিকার মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির প্রতিবেদন, বিবৃতি বা প্রস্তাবের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করে না।

আমেরিকার মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে সেদেশে ভয়ঙ্করভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমেরিকার ইতিহাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অশ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ, তাদের প্রতি মার্কিন পুলিশের ভয়ানক সহিংসতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ, হামলা ও যুদ্ধাপরাধের রেকর্ডে ভরপুর।  ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ, এসব দেশে কুখ্যাত বন্দিশিবির নির্মাণ করে স্থানীয় বন্দিদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো ইত্যাদি ঘটনায় মানবাধিকার রক্ষা করার বিষয়ে আমেরিকার ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার এখন একটি প্রমাণিত বিষয়।

মানবাধিকার রক্ষার দাবিদার ইউরোপীয় দেশগুলোর পরিস্থিতিও আমেরিকার তুলনায় কোনো অংশে ভালো নয়। ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের মতো দেশগুলোতেও অভিবাসীদের পাশাপাশি অশ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক ও সহিংস আচরণের বিষয়টি এখন আর কারো অজানা নয়। ইউরোপীয় দেশগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘন এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এসব দেশই নির্লজ্জের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিশেষ করে পাশ্চাত্যের আধিপত্যবিরোধী দেশগুলোতে মানবাধিকার রক্ষা করার সবক দিতে আসে যা অত্যন্ত হাস্যকর।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 1831
  • Total Visits: 1394412
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১লা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ১৩ই জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ২:৩৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
16171819202122
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018