অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দখলদার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইসরাইলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে হিব্রু ভাষার গণমাধ্যম ওয়ালা জানিয়েছে, তেল আবিব ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর হাতে আটক ২৯ বছর বয়সী ইসরাইলি বন্দী এরবিল ইয়াহুদকে মুক্ত করার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের আলাদাভাবে কাজ করতে বলেছে। পার্সটুডে জানিয়েছে, তেল আবিব ঘোষণা করেছে এই ইহুদিবাদী বন্দীকে আগামী শনিবারের আগে মুক্তি দিতে হবে যাতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা উত্তরাঞ্চলে ফিরে যেতে পারে। এই শর্ত ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হচ্ছে।
দখলদার ইসরাইলের সম্প্রচার সংস্থা ঘোষণা করেছে, তেল আবিব এবং মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে যোগাযোগ চলছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও ঘোষণা করেছে, উত্তরাঞ্চলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি এই ইহুদিবাদী বন্দীর মুক্তির সাথে সম্পর্কিত। এরবিল ইয়াহুদ ইসরাইলি সরকারের মহাকাশ কর্মসূচির একজন সামরিক প্রশিক্ষণার্থী।
নেতানিয়াহুর তৎপরতা থেকে এটা স্পষ্ট, এরবিল ইয়াহুদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধে তার পরাজয়ের চাপ কমানোর চেষ্টা করছেন।
গাজায় হামলা চালানোর আগে নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, তিনি সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে হামাসকে ধ্বংস করবেন এবং প্রতিরোধ সংগ্রামীদের হাতে আটক ইহুদিবাদী সৈন্যদের মুক্ত করবেন।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছেন। এই পরাজয় ইহুদিবাদী মহলে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে, এর জেরে বেশ কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
ইতিমধ্যে হামাস এবং ইসলামী জিহাদ ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নতুন শর্তের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
হামাস নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছেন ইহুদিবাদ নারী এরবিল প্রতিরোধ বাহিনীর হাতে আটক রয়েছে এবং তিনি জীবিতই আছেন। ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের একটি দায়িত্বশীল সূত্রও জোর দিয়ে বলেছে, এই ইহুদিবাদী বন্দীর মুক্তির বিষয়টি যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলীর কাঠামোর মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে।
শনিবার হামাস এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে ইসরায়েলি সরকার গাজার আল-রশিদ স্ট্রিট বন্ধ রেখে এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের উত্তরাঞ্চলে ফিরে যেতে বাধা দিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম তীরের জনগণ মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ফিলিস্তিনি জনগণ নাবলুসের বেইতা উপশহরে প্রতিরোধের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে এবং হামাসের নেতা মুহাম্মদ দেইফ ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নাম উচ্চারণ করে প্রতিরোধের প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দী নাসর বারহাম দাউদকে স্বাগত জানায়।
শনিবার সন্ধ্যায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির পর চারজন ইহুদিবাদী মহিলা বন্দীকে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রেড ক্রসের কাছে চারজন মহিলা ইহুদি বন্দী হস্তান্তরের সময় হামাসের যোদ্ধাদের হাতে কিছু অস্ত্র দেখা গেছে। এই অস্ত্রগুলো ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিশেষ ফোর্সের অস্ত্র। এই অস্ত্রগুলো সম্ভবত আল-আকসা তুফান অভিযানের সময় হামাসের হস্তগত হয়েছে।
১৫ মাস ধরে নৃশংস গণহত্যার পরও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার পর গত ১৫ জানুয়ারি ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করতে বাধ্য হয় দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল। চুক্তিটি ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা কার্যকর হয়েছে।
Leave a Reply