বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন পোশাক শ্রমিকেরা। সোমবার (২ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে আটটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। এতে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সড়ক অবরোধকারীরা আনোয়ারা ড্রেস মেকার্স লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। তাঁরা জানান, এক বছর ধরেই শ্রমিকদের বেতন নিয়ে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। সর্বশেষ তিন মাস ধরে তাঁদের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না। বেতনের নিশ্চয়তা না পেলে তাঁরা সড়ক ছাড়বেন না।
বেলা ১১টায় সরেজমিন দেখা গেছে, কারখানার সামনে দুই পাশের সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় বসে রয়েছেন শ্রমিকেরা। একটি অংশে সড়ক বিভাজকের কাঁটাতার খুলে সেটি সড়কে টানিয়ে দিয়েছেন কিছু শ্রমিক। সড়ক দিয়ে কোনো যান চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়কের আধা কিলোমিটারজুড়ে অন্তত ৫০০ শ্রমিককে দেখা যায়। শ্রমিকদের অবস্থানের ফলে আশপাশের সড়কগুলো ও আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কের দুই নম্বর গেট র্যাম্পেও যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে।
অবরোধকারী মো. রহিম বলেন, ‘বেতন চাইলে একবার বলে ১০ তারিখ দেওয়া হবে, আরেকবার বলে ২০ তারিখ। এভাবেই তিন মাস ধরে চলছে। বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।’ ফাতেমা বেগম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ন্যায্য পাওনার জন্য সড়কে নেমেছি। পাওনা আদায়ের নিশ্চয়তা চাই। এরপর সড়ক থেকে চলে যাব।’
সোমবার বেলা ১১টায় বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় অবরোধের কারণে যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয় মানুষকে।
শ্রমিকদের পাওনার বিষয়ে জানতে পোশাক কারখানাটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর মুঠোফোনে কল করা হয়। তিনি পরিচয় জানার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর আর কল রিসিভ করেননি। জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মুহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেছেন।
ফৌজদারহাটে দাঁড়িয়ে থাকা ডাম্পরট্রাকে পেছনে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ২ জন নিহত
বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ডাম্পরট্রাকে পেছনে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের ধাক্কায় দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত এবং আহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী।নিহতরা হলেন– নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরের সৈয়দপুর এলাকার মৃত কালা মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন (৬২) এবং রহিমা বেগম।
তাদের মধ্যে আনোয়ার ঘটনাস্থলে এবং রহিমা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বার আউলিয়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ আব্দুল মমিন বাংলা বলেন, ‘একটি ডাম্প ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। পেছন থেকে মাইক্রোবাস ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসে থাকা একজনের ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়েছে। আরেকজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। আহত দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাইক্রোবাসটি নারায়ণগঞ্জ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত ও আহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী।’
চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে ৩ লাখ লিটার চোরাই তেল জব্দ

বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বন্দরের অদুরে কুতুবদিয়ায় সাগরে তেল পাচার কালে নোঙ্গররত দুইটি জাহাজই আটক করেছে কোস্টগার্ড। পোর্টল্যান্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজ থেকে ৩ লাখ ৫৬ হাজার লিটার চোরাই তেল এমটি ডলফিন-১৯ নামে আরেকটি জাহাজে পাচারের সময় এ দুটি জাহাজই আটক করা হয়েছে ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) পানামা পতাকাবাহী এমটি ডলফিন-১৯ নামে জাহাজ পাকিস্তান থেকে মোলাসেস দ্রব্য নিয়ে মোংলা বন্দরের উদ্দেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাহাজটি মোংলায় না গিয়ে গোপনে চট্টগ্রামের বহিঃনোঙরে এসে অবৈধভাবে পোর্টল্যান্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আনুমানিক ৩ লাখ ৫৬’হাজার লিটার জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে।
একপর্যায়ে বেআইনিভাবে তেল সংগ্রহ করায় কোস্টগার্ড সদস্যরা জাহাজ কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে পোর্ট ও কাস্টমস থেকে বাংকারিং এর বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জাহাজ দুটিকে আটক করা হয়।
জানা গেছে, পোর্টল্যান্ড প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজুমদার এবং তার তেল সরবরাহকারী ওটি ইউনিয়ন জাহাজটির মালিক বরিশাল এর সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত।
চট্টগ্রাম বন্দর শেডে পড়ে থাকা ২৯৭ গাড়ি নিয়ে বিপাকে শুল্ক বিভাগ

বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বন্দরের খোলা শেডে পড়ে থাকা ২৯৭টি গাড়ি নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে শুল্ক বিভাগ। মামলা থাকায় ১৯৫টি গাড়ি যেমন নিলামে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, আবার বাকি ১০২টি গাড়ি আদৌ চলাচল উপযোগী রয়েছে কি না তা জানতে রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছে। অথচ এসব গাড়ি দ্রুত শেড থেকে সরিয়ে নিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২০ বছরের বেশি সময় চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে পড়ে থাকা ২৯৭টি গাড়ির মধ্যে ১৯৫টির বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে উচ্চ আদালতে। অবশেষে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আমদানি করা এসব গাড়ি ডেলিভারি না হওয়ায় ঢাকা পড়ে ঘন জঙ্গলে। এগুলো সরিয়ে নিতে বন্দরের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হলে অনুসন্ধানে নামে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। এরপরই বেরিয়ে আসে মামলা সংক্রান্ত নানা তথ্য।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, অন্যান্য গাড়ির জাহাজ যখন আসে, তখন আগের গাড়িগুলোর কারণে নতুন গাড়ি রাখতে হিমশিম খেতে হয়। আর পুরাতন গাড়িগুলো সরাতে পারলে জায়গা যেমন খালি হবে, তেমনি বাড়বে রাজস্বও।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন বলেন, আমদানিকারকের টাকা বাইরে ইতোমধ্যে চলে গেছে। কিন্তু এগুলো থেকে কাস্টমস কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। তাছাড়া গাড়িগুলো বর্তমানে চলাচলেরও অনুপযোগী।
মামলা জটিলতায় আটকে যাওয়া ১৯৫টি গাড়ি আপাতত নিলাম কিংবা স্ক্র্যাপ হিসেবে কেটে ফেলার সুযোগ থাকছে না। অপরদিকে মামলা না থাকা বাকি ১০২টি গাড়ি নিলামে তোলা যাবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। বিশেষ করে ২০ থেকে ২২ বছর আগে আমদানি করা এসব গাড়ি চলাচল উপযোগী কিনা তা নিশ্চিত হতে বিআরটিএর কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হবে। সেখানে ইতিবাচক ফলাফল এলেও প্রশ্ন থেকে যাবে পুরাতন ও জরাজীর্ণ গাড়ি রাস্তায় নামতে পারবে কি না তা নিয়ে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, যদি আইনি জটিলতায় নিলামে গাড়িগুলো বিক্রি করা সম্ভব না হয় ও চলাচলের অনুপযোগী হয়, তাহলে এগুলো ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
এদিকে, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে গাড়িগুলো নিলাম কিংবা আমদানিকারকের বিপরীতে ছাড় করার ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নেতারা।
বারভিডার সহ সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকার বেশি অর্থ পাওয়ার আশায় গাড়িগুলো নিলামে তোলার চেষ্টা করে। তবে এতে লাভ তো হয়ই না, উল্টো গাড়িগুলো আরও নষ্ট হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, শেডে দামি মডেলের প্রাইভেট কার-পাজেরো-মাইক্রোবাস যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বেশ কিছু পিকআপ এবং ট্রাক।