অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাশিয়ার চালানো ড্রোন হামলার ক্ষেত্রে জুলাই মাস ছিল ইউক্রেনের জন্য এক অশান্ত ও ভয়াবহ সময়। সদ্য সমাপ্ত এই মাসে দেশটির বিরুদ্ধে ৬ হাজারেরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া, যা ইউক্রেনে ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে একক মাসে সর্বোচ্চ হামলার রেকর্ড।
এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং ইউক্রেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট। উভয় সংস্থার প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে বিষয়টি সামনে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ড্রোন হামলাগুলোতে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে বহু আবাসিক ভবন, একটি কিন্ডারগার্টেন এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স। এসব হামলা থেকে বেসামরিক অবকাঠামোও রেহাই পায়নি।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই মাসে রাশিয়া ৬ হাজার ২৯৭টি দূরপাল্লার ড্রোন ছুড়েছে— যা জুন মাসের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। কিয়েভ ইনডিপেনডেন্টের তথ্য অনুযায়ী, এই মাসে রাশিয়া ৬ হাজার ১২৯টি শাহেদ ড্রোন ব্যবহার করেছে, যেখানে গত বছরের জুলাইয়ে এই সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৪২৩টি।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাত জানান, বাস্তবে ড্রোন হামলার প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ প্রকাশিত সংখ্যা অনুমাননির্ভর।
আল জাজিরা আরও জানায়, ৯ জুলাইয়ের রাতেই রাশিয়া ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে ৭৪১টি ড্রোন ও ডিকয় ছুড়ে দেয়, যা ২০২৪ সালের পুরো জুলাই মাসের হামলার তুলনায় বেশি। ওই রাতের হামলায় ইউক্রেনের সুমি, দোনেৎস্ক ও খেরসন অঞ্চলে কমপক্ষে আটজন প্রাণ হারান। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অবশ্য ১০টি ড্রোন বাদে বাকিগুলো ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
৯ জুলাইয়ের ওই হামলার ঠিক আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তার প্রশাসন ইউক্রেনকে আরও প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহ করবে। এর আগে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে অস্ত্র সরবরাহে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছিল।
ট্রাম্প বলেন, ‘তাদের নিজেদের রক্ষার সামর্থ্য থাকতে হবে।’ তিনি জানান, ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেথিয়ন কোম্পানির তৈরি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অর্থায়ন করবে।
চলতি পরিস্থিতিতে জুলাই মাসের শেষ দিন পর্যন্ত রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থামেনি। ৩১ জুলাই কিয়েভে চালানো এক ভয়াবহ হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিল পাঁচটি শিশু। আহত হন আরও ১৫৯ জন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, ওই হামলায় রাশিয়া ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ও আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এএফপির তথ্য মতে, জুলাই মাসে রাশিয়া মোট ১৯৮টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ২০২৪ সালের জুন মাস ছাড়া বছরের অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় বেশি।
কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, জুন মাসে রাশিয়া ৫ হাজার ৩৩৭টি ড্রোন ব্যবহার করেছিল, যা জুলাইয়ের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৯ জুন একদিনেই ছোড়া হয়েছিল ৪৭৯টি ড্রোন, যে সময়ের ঠিক আগে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দেশ বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছিল।
অবশ্য চলতি মাসেও তুরস্কে শান্তি আলোচনা চলমান থাকলেও এখনো কোনো স্থায়ী অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করা দেশগুলোর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।