অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের যুদ্ধ দপ্তরকে অবিলম্বে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগে তিনি এ নির্দেশ দেন। তার এই সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে নিরস্ত্রীকরণ কর্মী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “অন্য দেশগুলোর পারমাণবিক পরীক্ষা কর্মসূচির কারণে আমি ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ারকে (যুদ্ধ দপ্তর) নির্দেশ দিয়েছি, আমাদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষাও সমানভাবে শুরু করতে। এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হবে।”
রাশিয়া ও চীনকে যথাক্রমে বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে উল্লেখ করে দাবি ট্রাম্প করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষাগুলো পুনরায় শুরু না করে, তাহলে এই দেশগুলো ‘পাঁচ বছরের মধ্যেই’ আমেরিকার সমকক্ষ হয়ে যাবে। এই পরীক্ষাগুলো থেকে জানা যাবে নতুন ওয়ারহেডগুলো কীভাবে কাজ করছে এবং পুরোনো অস্ত্রভান্ডার এখনো কতটা কার্যকর আছে।”
ট্রাম্পের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ১৯৯২ সালের পর প্রথমবারের মতো সরাসরি পরমাণু পরীক্ষা পুনরায় শুরুর আহ্বান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছেন, বাস্তব পরীক্ষা পুনরায় শুরু হলে তা কয়েক দশক ধরে গড়ে ওঠা পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তিগুলোর (সিটিবিটি) ভিত্তি নষ্ট করবে এবং অন্যান্য দেশগুলোও পাল্টা পরীক্ষা শুরু করতে পারে। এতে বৈশ্বিক নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্ডো অঞ্চলে ২০ কিলোটন ক্ষমতার একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরমাণু যুগের সূচনা করেছিল। কয়েক সপ্তাহ পরই যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা হামলা চালায়।এই ধ্বংসযজ্ঞ ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের নামকে একমাত্র দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যে বাস্তবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সেই ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন নেতার দীর্ঘ প্রচেষ্টাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
তারা আরও সতর্ক করে দিয়েছেন, ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ ইসরায়েল এই পরীক্ষাগুলো থেকে প্রাপ্ত প্রযুক্তিগত জ্ঞান ব্যবহার করে তার নিজস্ব পরমাণু অস্ত্রভান্ডার আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করতে পারে।
তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি এই নির্দেশ দিতে ‘ঘৃণা করেছেন” কারণ এর “ভয়াবহ ধ্বংসক্ষমতা” রয়েছে, কিন্তু “তার কোনো বিকল্প ছিল না!” কারণ তিনি আশঙ্কা করছেন, অন্য পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র তার পরমাণু অস্ত্রভান্ডার আধুনিকায়নে শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে।