ফারুক আহমেদ, মাগুরা : মাগুরা জেলা প্রশাসন থেকে ২০২৫ সালের ৬ অক্টোবর জারি করা স্মারক নম্বর: ০৫.৪৪.৫৫০০.০০৯.০৯.০৪৭.২৫-৬৩৬–এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—কোনো লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা আসন্ন মৌসুমে পরিচালনা করা যাবে না।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩ ও সংশোধিত আইন ২০১৯ অনুযায়ী-ইটভাটা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
মাগুরায় বৈধ ভাটা মাত্র ৩টি, অবৈধ ৯৯টি ভাটা, মাগুরা জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য মতে, মাগুরায় মোট ইটভাটা রয়েছে ১০২টি। এর মধ্যে আইন অনুযায়ী বৈধ ৩টি ইটভাটার মধ্যে শালিখা উপজেলায় শাহেদ ব্রিকস, দেয়াডাঙ্গা, মেসার্স পিয়ালস ব্রিক্স শতখালী ও অটো ব্রিক্স কৃষ্ণপুর/কছুন্দি, মাগুরা সদর। বাকি ৯৯টি ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে কোনো লাইসেন্স ছাড়াই চলছে, যার বেশিরভাগই স্থায়ী চিমনি বিচ্যুত, পরিবেশ ছাড়পত্র নেই, ফিটনেস নেই, মাপ ১০/৫/৩–এর মানদণ্ড মানে না, এমনকি বেশ কিছু ভাটা কৃষিজমি দখল করে স্থাপন করা।এগুলোই এখন জেলার পরিবেশ-দূষণ, কৃষি উৎপাদন হ্রাস, নদী ভরাট, গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যাওয়ার মূল কারণ।
অবৈধ ইটভাটার কারণে মাগুরাi পরিবেশের ওপর ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে। বায়ুদূষণ ও জনগণের শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি, স্ট্যান্ডার্ড চিমনি না থাকায় ধোঁয়া নীচু স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত।ক্ষুদ্রকণা (PM-2.5/PM-10) স্বাভাবিক সীমার বহু ওপর। মাগুরা জেলা জুড়ে রাস্তাঘাট ধ্বংস, ভাটায় অতিরিক্ত মাটি ও ইট বহনের ট্রাকে রাস্তা নষ্ট। মাগুরা সদর–মহম্মদপুর–শালিখা–শ্রীপুরের প্রতিটি উপজেলাতেই, ইউনিয়ন রাস্তা সংযোগ সড়ক গ্রামীণ ব্রিজ–কালভার্ট নিয়মিত ভেঙে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ইটভাটার ট্রাক ও ট্রলি ৩–৪ গুণ অতিরিক্ত ওজন বহন করে চলাচল করে। ফসলি জমি নষ্ট মাটি কাটার কারণে কৃষি উৎপাদনে ধস, অবৈধ ভাটার মালিকেরা
ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়, পুকুরের পাড় ভেঙে নেয়, নদীর তীর কেটে ইট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে, এতে তিন ফসলি জমি এক ফসলিতে পরিণত হচ্ছে। নদী–নালা ভরাট ও জলবায়ুগত ক্ষতির পাশাপাশি মাগরা, নবগঙ্গা, চিত্রা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাটা ছাই পড়ে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে।
খোলা মাঠে কয়লা পোড়ানোয় জেলায় মাইক্রোক্লাইমেট পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়ছে।
স্মারকে জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন“লাইসেন্সবিহীন কোনো ইটভাটা যেন চালু হতে না পারে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ”নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্দেশ, অবৈধ বা চিমনি–বিহীন ইটভাটা স্থাপনের চেষ্টা দেখা মাত্রই ইউএনও ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। এ থেকে স্পষ্ট—জেলা প্রশাসন অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে আর কোনো শিথিলতা দেখাবে না।মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নের রায়নগর গ্রামে টপ টেন ইটভাটা ও গড়াই অবৈধ ইটভাটা মালিকদের বক্তব্য, অনেক বছর ধরে ভাটা চালাচ্ছি, এখন লাইসেন্স পাওয়াটা কঠিন। আমরা আবেদন করেছি কিন্তু অনুমোদন ধীরগতিতে আসে। বসুন্ধরা ব্রিকস সাচানী রাউতড়া, মালিক মাহবুব আলম বলেন, চিমনি নির্মাণে খরচ বেশি। আমরা ধীরে ধীরে বিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি। সিন্ধাইন মহাম্মদপুর মীর ব্রিক্স এর মালিক শিবলু বলেন, ক্ষমতা থাকলে অনেককে ম্যানেজ করে অবৈধ ভাটাও চালানো যায়।