অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন সংকট বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন, রাশিয়া ওই শর্ত নাকচ করে দিয়েছে।
বাইডেন গত পরশু (শুক্রবার) বলেছিলেন রাশিয়া যদি ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা সরিয়ে নেয় তাহলেই তিনি ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে সংলাপে বসবেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ বিষয়ে বলেছেন, মস্কো নিঃসন্দেহে এ ধরনের প্রস্তাব মানবে না এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাকরন পুতিনের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশের পর বাইডেনও ইউক্রেন সংকট বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করে ওই শর্ত দিয়েছিলেন। বাইডেন ও ম্যাকরন ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে পুতিনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার বিষয়েও একমত হয়েছেন।
পুতিনের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠকের আগ্রহ মানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আগের নীতি থেকে পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া! অতীতে ইউক্রেনে হামলার কারণে বাইডেন পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
বাইডেনের নীতি পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হচ্ছে ইউক্রেনকে অস্ত্রের বন্যায় ভাসিয়ে দেয়ার কারণে এখন ন্যাটো জোট ও মার্কিন অস্ত্র ভাণ্ডারে অস্ত্র আর গোলাবারুদের ঘাটতি দেখা গেছে। ন্যাটো জোটের অনেক দেশই আর ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে আগ্রহী নয়। ইতালি বলেছে, দেশটির সংসদের অনুমতি ছাড়া ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো আর সম্ভব নয়। জার্মানিসহ ইউরোপের আরও অনেক দেশেরও একই অবস্থা। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদেও রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর জন্য বাজেট অনুমোদন কঠিন হয়ে যাবে। মার্কিন সরকার এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে দুই হাজার কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
ব্রিটেনসহ মার্কিন সরকারের মিত্ররা ইউক্রেনকে অস্ত্রের চালান দেয়া অব্যাহত রেখে এটাই চেয়েছে যে রাশিয়াকে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধে ব্যস্ত রেখে দেশটির অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করা। রাশিয়া মনে করে যে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থ ও অস্ত্র পাওয়ার কারণেই ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেন বিষয়ে বাইডেনের নীতিতে পরিবর্তনের আরেকটি কারণ হল ইউরোপের অর্থনৈতিক, জ্বালানী ও সামাজিক সংকট দেখা দেয়ায় এইসব সংকট থামাতেই ইউরোপীয় নেতারা যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বাইডেনের ইউক্রেন নীতিতে পরিবর্তনের আরেকটি বড় কারণ হল পশ্চিমা নেতারা এখন যুদ্ধ-জয়ের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ইউক্রেনের সেনারা কেবল খেরসন অঞ্চল ছাড়া আরও কোথাও তেমন একটা সাফল্য দেখাতে পারেনি। রাশিয়ার দখলে যাওয়া ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধারের আর কোনো আশু সম্ভাবনা নেই। উপরন্ত শীতকাল চলে আসায় ইউক্রেনের সেনাদের শিগগিরই সক্রিয় হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।
Leave a Reply