অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কক্সবাজারে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি আস্তানা গড়তে আত্মগোপনে থাকা নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে আটক করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে এই অভিযান। অভিযানে প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি জঙ্গি ও র্যাবের মধ্যে গোলাগুলি হয়। তবে গোলাগুলিতে কেউ হতাহত হয়নি। তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, তিনটা ম্যাগজিন, দেশীয় তৈরি দুটি অস্ত্র, ১১টি কার্টুজ ও আড়াই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরে ঘটনাস্থলে অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বান্দরবানের পাহাড়ে এই জঙ্গি সংগঠন আস্তানা গড়ে তুলে প্রশিক্ষণ নেয়। পরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে পালিয়ে যায় সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বাশার। পরে তারা উখিয়ার কুতুপালং ৭ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপন করেন।
তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে তরুণদের সংগ্রহ করে তারা জঙ্গি সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করে সামরিক প্রশিক্ষণ দেন রনবীর। তাই র্যাবের প্রধান টার্গেট ছিলো রনবীর। রোহিঙ্গা তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে তিনি ক্যাম্পে আত্মগোপন ছিলেন কিনা অথবা কোনো রোহিঙ্গা তরুণ এই সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কমান্ডার মঈন বলেন, গত বছরের আগস্টে কুমিল্লা থেকে ৮ জন তরুণ হিজরতের নামে স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। তাদের খুঁজতে র্যাব ফোর্স নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র একটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পায়। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ওই সংগঠনের বেশকিছু নেতৃত্বস্থানীয় কর্মীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, এরপর গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল থেকে সামরিক শাখার তৃতীয় ব্যক্তি মানিক ও শাওনকে আটক করার পর তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। র্যাব হিজরতের জন্য বের হওয়া নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকা থেকে ৫ জনকে আটক করে। এরপর সামরিক শাখার শাওন ও মানিককে রিমান্ডে এনে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সামরিক শাখার আবুল বাশার ও বোমা বিশেষজ্ঞ তার তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যর ভিত্তিতে রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং সংলগ্ন ইয়াহিয়া গার্ডেন থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় ওই গ্রুপের সাথে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এর আগে গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩৮ জন সদস্য এবং এই সংগঠনকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ও আস্তানা গড়ে তুলতে সহযোগিতা করার অপরাধে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ’র ১৪ জনকে আটক করা হয়। এই সংগঠনের সকল সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
র্যাব-১৫ এর মিডিয়া কর্মকর্তা সহকারি পুলিশ সুপার আবদুস সালাম চৌধুরী জানান, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার শীর্ষস্থানীয় এক নেতাসহ কয়েকজন সশস্ত্র সদস্য অবস্থান করার খবর পেয়ে র্যাবের একটি দল কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও সামরিক প্রধান রনবীর এবং তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে আটক করা হয়।
এদিকে, অভিযানকালের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা চলে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সর্বশেষ নব্য জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আটক করা হয়েছে। ক্যাম্পে জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে।
Leave a Reply