অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুরে একই রাতে সাবেক ইউপি সদস্যর মা ও ছেলে বউয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ওই ইউপি সদস্যর স্ত্রীকে মুমূর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা ধারনা করছেন চুরির উদ্দেশ্যে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে খাবারের সাথে বিষাক্তদ্রব্য মিশিয়ে রেখেছিলো। ওই খাবার খেয়ে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রাথমিক তদন্ত থেকে থানা পুলিশ জানিয়েছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য চুরির নাটক সাজিয়েছে দুর্বৃত্তরা। যদিও এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাতে মৃত লালমোন নেছা (১০২) বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মৃত দেলোয়ার হোসেনের মা। এছাড়া মৃত রিপা আক্তার (২৩) দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী। গুরুতর অসুস্থ সাবেক ইউপি সদস্যর বিধবা স্ত্রী মিনার বেগমকে (৫৫) স্থানীয় বাহেরচর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আমরা কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক থেকে দেড়শ’ গজ দূরত্বের ওই ঘটনাস্থল যাই। তবে আমরা সেখানে গিয়ে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি, তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালে নেওয়ার পর লালমুন নেছা ও রিপা আক্তারকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপর অসুস্থ্য মিনারা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিবেশী এক নারী টয়লেটে যেতে ঘর থেকে বের হন। তখন তিনি বাড়ির মধ্যে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অবস্থান দেখতে পান। ওইসময় তিনি ডাকাডাকি করা সত্বেও ওই ব্যক্তি কোনো উত্তর না দিলে ওই নারী ঘরের ভেতর থেকে টর্চলাইট আনতে যান। ফিরে এসে ওই ব্যক্তিকে আর পাননি। পরে সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ঘরের দরজা খোলা দেখে তিনি (নারী) ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না আসায় তিনি ভয়ে ডাকচিৎকার দিলে আশপাশের বাড়ির লোকজন সেখানে জড়ো হন। পরে স্থানীয়রা মিলে ঘরের ভেতর গিয়ে তিন নারীকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং থানা পুলিশকে খবর দেন।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশের দফাদার মো. আবু হানিফ জানান, কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ভূতেরদিয়া এলাকার এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও ভিড় করেছেন। তিনি বলেন, রাতে ওই বাড়িতে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী, মা ও ছেলের বউ ছাড়া কেউ ছিলেন না। স্থানীয়রা সন্দেহ করছেন চুরির জন্য খাবারের সাথে কিছু মিশিয়ে ওই পরিবারের তিনজনকে অচেতন করা হয়েছিল। আর সেই বিষক্রিয়া বেশি হওয়ায় দুইজনের মৃত্যু ও একজন অচেতন হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়েছেন।
তবে সার্বিক আলামত দেখে চুরির জন্য নয়, হত্যাকান্ডের জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলেও কেউ কেউ সন্দেহ করছেন।
তিনি বলেন, ঘরের এক পাশে একটি ছোট আকারের সিঁদ কাটা হয়েছে। তবে সেটি দিয়ে কোনো মানুষের চলাচল করা সম্ভব নয়। কেদারপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম জানান, ওই বাড়িতে চারটি ঘর রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি ঘরে লোক থাকে। আরেকটি ঘর তালাবদ্ধ। তিনটি ঘরে কোনো পুরুষ ছিল না।
ইউপি সদস্য আরও বলেন, দেলোয়ার মেম্বর জীবদ্দশায় একজনের কাছে জমি বিক্রি করার কথা বলে টাকা নিয়েছিল। কিন্তু জমির দলিল দিতে পারেননি। তার উত্তরাধিকার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে বুধবার ওই জমির দলিল দিয়েছেন। জমির দলিল দিলেও তারা কোনো টাকা পাননি।
তিনি আরও জানান, জমির দলিল দেয়ার পর দেলোয়ারের ছেলে বরিশাল নগরীর কর্মস্থলে ও মেয়ে স্বামীর বাড়িতে ফিরে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, জমির দলিল দেয়ায় দুর্বৃত্তরা বুঝেছিল ঘরে টাকা রয়েছে। তাই হয়তো রাতের খাবার অথবা পানির সাথে বিষ মিশিয়ে রাখা হয়েছিল।
জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড বলে মনে হয়েছে। বিষয়টি ভিন্নখাতে রুপ দেওয়ার জন্য চুরির ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
Leave a Reply