অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষকের আয় কমে যাবে, তবে কৃষিপণ্যের উৎপাদন কমবে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই। ফসলে পানি দিতে না পারলে উৎপাদন কম হবে। হয়তো চাষীদের কষ্ট হবে, তার আয় কমে যাবে। তার যে লাভ হওয়ার কথা, সেটা হবে না।’
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য পিম ভ্যান স্ট্রিয়েনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
গত দুই মাসে খুচরা পর্যায়ে তিন দফায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বারবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে কৃষিতে প্রভাব পড়তে পারে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জ্বালানির প্রয়োজন আছে। কৃষি যেহেতু আমাদের একটি মৌলিক বিষয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই হিসেবে বিভিন্ন উপকরণ- সার, রাসায়নিক, পানি, সেচ এগুলোর ওপর আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এদেশের চাষীরা নিজের বউয়ের গয়না কিংবা গরু বিক্রি করেও সার কিনবেন। জমিতে সার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই তারা ঝুঁকি নিতে চান না।’
‘হয়তো উৎপাদন ওই রকম কমবে না। কিন্তু চাষীরা ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু সরকারের হাতে এর (বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি) কোনো বিকল্পও নেই।’
বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার কি ঝুঁকি নিচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সেটা তো ঠিকই। চাষীর উৎপাদন কমাবে না। চাষীদের আয় কমবে। এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ না নিলে এভাবে মাসে মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়তো কি না- জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফ তো সারের দামও বাড়াতে বলে। সারে যে ভর্তুকি দেই, সেটিই তো আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মানে না। তারা সারাজীবন বাধা দিয়ে আসছে। বিএনপির সময় ৯০ টাকা যে সার ছিল, আমরা ১৬ টাকায় দিয়েছি। আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কথা শুনতে গিয়ে অনেককেই বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। তখন তো প্রধানমন্ত্রীর ওপর অনেক চাপ ছিল। তারা (আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংক) বলতো, সারে ভর্তুকি দিলে তোমরা উন্নয়ন করবে কীভাবে? তাহলে স্কুল-কলেজ ও রাস্তাঘাটের কী হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি না, বিনিয়োগ করছি। আমরা সেই বিনিয়োগের ফল পাচ্ছি।’
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধিররা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে ২০০৮ সালে আমাদের তিন মিলিয়ন টন সবজি হতো, বর্তমানে তা ২২ মিলিয়ন টন। পৃথিবীর কোন দেশে ১৩ বছরে সবজির উৎপাদন এতো বেড়েছে!’
ডেল্টা প্ল্যান তৈরিতেও ডাচ বিশেষজ্ঞরা আমাদের সহায়তা করেছেন জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত করা। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার পরিকল্পনায়ও আমরা ডেল্টা প্ল্যান অনুসরণ করবো। তাতে নেদাল্যান্ডসের সহায়তা লাগবে।’
‘গ্রিনহাউসে তারা (নেদারল্যান্ডস) খুবই সফল। অনেক ফসল তারা গ্রিনহাউস থেকে উৎপাদন করেন। এ ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস সরকার আমাদের সহায়তা করতে পারে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আনারস ও কলার মতো বিভিন্ন ফল ও সবজি বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে তা বিদেশে রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশ থেকেও যদি আম-আনারস নিয়ে তা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করে, তাহলে তা আমাদের জন্য একটি ভালো বিষয় হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা ইউরোপ আফ্রিকান কৃষিপণ্য যাচ্ছে। ডাচ প্রতিনিধিরা বলেছেন, বাংলাদেশ কেন এটা করছে না? তখন আমরা বললাম, তোমরা আমাদের কারিগরি সহায়তা দাও। আমাদের ফান্ডিং সাপোর্ট লাগবে। আমরা এখন নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে সেই সহযোগিতা করতে চেষ্টা করছি গত দুই বছর ধরে। আমরা বেশ এগিয়েছি। যেমন ইস্ট-ওয়েস্ট নামের একটি কোম্পানি বাংলাদেশে আসছে।’
Leave a Reply