November 17, 2025, 4:08 pm
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযানে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ১৮ বাংলাদেশি ও মাদক আটক মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন : সিইসি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছরের কারাদণ্ড রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বুলডোজার প্রবেশে বাধা ; পুলিশ ও ছাত্রজনতার সংঘর্ষ কুমিল্লায় মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় মা ও ভাইকে কুপিয়ে হত্যা ভারতের জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ২৯ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করলো ভারতের কোস্ট গার্ড রাঙ্গামাটিতে অটোরিকশায় বন্যহাতির আক্রমণে ২ জন নিহত সন্ত্রাস মোকাবিলায় অবস্থান হবে কঠোর : ভারতের সেনাপ্রধান মিয়ানমারের মডং শহরের দখল নিয়েছে কারেন বিদ্রোহীরা
এইমাত্রপাওয়াঃ

ভারতে কৃষকরা উৎপাদিত পেঁয়াজ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতের মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের অতিরিক্ত ফলন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বাড়তি ফলনের কারণে এ বছর পেঁয়াজের দাম মুখ থুবড়ে পড়েছে।

পেঁয়াজের দাম এতোটাই কমে গেছে যে কৃষকরা প্রতি কেজি মাত্র দু-তিন টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অবস্থায় অনেক কৃষক ক্ষেতেই তাদের ফসল নষ্ট করে দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আলু, টমেটো সহ বিভিন্ন সবজির কৃষকরা এবছর ফসল নষ্ট করে ফেলছেন বাধ্য হয়ে।

মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার কৃষক কৃষ্ণ ডোংরে এবার সপরিবারে তার পেঁয়াজ চাষের জমিতে হোলিকা দহন ‘অনুষ্ঠান’ করেছিলেন। তার সেই ‘অনুষ্ঠান’-এর ছবিসহ খবর বেশ কিছু জাতীয় সংবাদপত্রে ছাপানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিল সেই ‘দহন’এর ছবি।

এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রঙের উৎসব হোলি। তার আগের দিন গত ছয় মার্চ পালিত হয় ‘হোলিকা দহন’। বাংলায় যাকে ন্যাড়াপোড়া বলেন অনেকে,আর ইংরেজিতে বনফায়ার।

একজন কৃষকের পারিবারিক ‘অনুষ্ঠান’ জাতীয় স্তরের সংবাদপত্রে উঠে আসার কারণ হচ্ছে, তিনি আসলে খড়কুটার বদলে ‘হোলিকা দহন’ করেছেন নিজের ক্ষেতের প্রায় ১৫ হাজার কেজি পেঁয়াজ পুড়িয়ে দিয়ে।

পাঁচ কেজি পেঁয়াজ দশ টাকা : “পনেরো দিন আগে আমি নিজের রক্ত দিয়ে লেখা একটা আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি যেন এসে আমদের সঙ্গে যোগ দেন ওই দিন,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. ডোংরে।

‘অনুষ্ঠান’-এর সময়ে তোলা মি. ডোংরে আর তার পরিবারের জল ভরা চোখের ছবিও ঠাঁই পেয়েছে খবরের কাগজে।

ওটা তো আসলে অনুষ্ঠান ছিল না, সেটা ছিল কয়েক মাসের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পরে ফসল নিজের হাতেই নষ্ট করতে বাধ্য হওয়ার ব্যথা। ব্যাংক থেকে ধার নেওয়া টাকায় চাষ করেও উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পারছেন না মি. ডোংরে। সুদসহ ব্যাংকের দেনা কীভাবে শোধ দেওয়া যাবে সে চিন্তায় দিন কাটছে তার।

মি. ডোংরে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “পেঁয়াজের দামের যা অবস্থা তাতে হয়তো বা আত্মহত্যাই করতে হতো। সেটা করতে পারলাম না, তাই হাতে গড়া ফসলটাই শেষ করে দিলাম।“

ওই চোখের জল-ছবি ধরা পড়ছে ডোংরে পরিবারেরই মতো মহারাষ্ট্রের আরও হাজার হাজার পেঁয়াজ চাষী পরিবারেও।

যেমন পেঁয়াজ চাষী নামদেব ঠাকরে বলছিলেন, “ছোট ছেলেটা ১০ টাকা দামের একটা আইসক্রিম খেতে চাইছিল, দিতে পারি নি। ১০ টাকার আইসক্রিম মানে তো পাঁচ কিলো পেঁয়াজের দাম!”

এ বছর মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ফলন এত বেশি হয়েছে, যে কৃষকরা প্রতি কেজি মাত্র দুই বা তিন টাকা দর পাচ্ছিলেন দু’দিন আগে পর্যন্তও। চাষের খরচ তো তাতে উঠছেই না, উল্টে আড়তে পৌঁছে দিতে গেলে তাদের লোকসানের বোঝা আরও বাড়বে। তাই ক্ষেতের পেঁয়াজ নষ্ট করে ফেলছেন কৃষকরা।

মি. ডোংরে যেমন পুড়িয়ে ফেলেছেন ক্ষেতের পেঁয়াজ, তেমনই ট্র্যাক্টর চালিয়ে ফসল নিজেই নষ্ট করে দিয়েছেন নাসিকের নাইপালা গ্রামের কৃষক রাজেন্দ্র বোঢ়গুঢ়ে।

বিবিসি বাংলাকে মি. বোঢ়গুঢ়ে জানাচ্ছিলেন, “তিন একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম এই মওসুমে। পেঁয়াজ মণ্ডিতে আড়ৎদারের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া পর্যন্ত এক লাখ দশ হাজার টাকা মতো খরচ হয় প্রতি একরের ফসলে।

“এক একরে ১৫০ কুইন্টাল তো হয়, ভাল ফলন হলে ১৭০-৮০ কুইন্টালও হয়। সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এক একরের ফসল থেকে গড়ে আমি দাম পাচ্ছি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা, আমার খরচের অর্ধেক। তো সেই ফসল আড়ত-এ পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য আরও বাড়তি খরচ করে লোকসানের বোঝা বাড়াবো নাকি আমি?” বলছিলেন মি. বোঢ়গুঢ়ে।

কেন এই পরিস্থিতি? : ভারতের মহারাষ্ট্রই এক সময় ছিল পেঁয়াজ চাষের মূলকেন্দ্র। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবত মধ্যপ্রদেশ আর গুজরাতেও পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে। তার ফলে মার খাচ্ছেন মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষীরা।

মহারাষ্ট্রের নাসিকই সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ বিপণন কেন্দ্র। সেখানেই পেঁয়াজের আড়ত হীরামন পরদেশির।

তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন, “আগে শুধু মহারাষ্ট্র আর অন্ধ্র প্রদেশেই পেঁয়াজের মূল চাষটা হত। কিন্তু এখন মধ্যপ্রদেশ আর গুজরাতের চাষিরাও ভাল পেঁয়াজ চাষ করছেন। গুজরাতে তো পেঁয়াজ চাষীদের জন্য সেখানকার সরকার অনুদানও দিয়েছে এবার। আর আমাদের পেঁয়াজের যে বাজার ছিল, সেটা গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ ধরে নিয়েছে অনেকটা। তাই এখানকার চাষীরা মার খাচ্ছে।“

তিনি বলছিলেন, কয়েকদিন আগে পর্যন্তও চাষিরা কুইন্টাল প্রতি (এক কুইন্টাল ১০০ কেজির সমান) তিনশো বা চারশো টাকা দাম পেয়েছে। হোলির পরে বৃহস্পতিবার থেকে আবার বাজার খোলার পরে দাম সামান্য কিছুটা বেড়ে হয়েছে কুইন্টাল প্রতি প্রায় সাতশো টাকা। কিন্তু তাতেও চাষীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যাবে না বলে মনে করেন মি. পরদেশি।

“আমাদের পেঁয়াজ উত্তর আর পূর্ব ভারতে চালান হত বড় পরিমাণে। কিন্তু গুজরাত আর মধ্যপ্রদেশ থেকে উত্তরভারতের বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজ পরিবহনের খরচ অনেকটাই কম লাগে দূরত্বের কারণে। তাই আমাদের থেকে কম দামে ওখানকার চাষিরা পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারছে।”

“এদিকে দুবাই হয়ে পাকিস্তানে যেত আমাদের পেঁয়াজ, শ্রীলঙ্কাতেও রপ্তানি হত। কিন্তু ওই দুটো দেশের যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সেখানে আর পেঁয়াজ পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা,” বলছিলেন হীরামন পরদেশী।

রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনাবিশ বিধানসভায় ঘোষণা করেন যে পেঁয়াজ চাষীদের পাশে দাঁড়াবেন তারা। চাষীদের অনুদান দেওয়ার কথাও হয়তো ঘোষণা করবে বলে কোনও কোনও সূত্র জানাচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের অধীন জাতীয় কৃষি সমবায় বিপণন ফেডারেশন বা ন্যাফেডকে দিয়ে সরকার পেঁয়াজ কিনতে শুরু করেছে।

নাসিকের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হীরামন পরদেশি বলছিলেন, “ন্যাফেড বাজারে নামার পরে সামান্য বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এখন কুইন্টাল প্রতি প্রায় সাতশ টাকা পাচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু ন্যাফেড তো সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ কিনছে। বাকি এই বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজের কী হবে?” সূত্র: বাসস

আজকের বাংলা তারিখ

November ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Oct    
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০


Our Like Page