অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তান। দেশটিতে জ্বালানির সংকট রয়েছে এবং একইসঙ্গে ঘাটতি রয়েছে জ্বালানি কেনার জন্য নগদ অর্থেরও।
এই পরিস্থিতিতে ব্যারেল প্রতি ৫০ মার্কিন ডলারে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে রোববার (১২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে ব্যারেল প্রতি ৫০ মার্কিন ডলারে অপরিশোধিত তেল কিনতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান। যদিও এই মূল্য ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের কারণে বিশ্বের শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭ এর আরোপিত প্রাইস ক্যাপ থেকে ব্যারেল প্রতি কমপক্ষে ১০ ডলার কম।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেল প্রতি ব্যারেল ৮২.৭৮ মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, অর্থনৈতিক সংকটের জেরে পাকিস্তান বর্তমানে উচ্চ বৈদেশিক ঋণে জড়িয়ে পড়েছে এবং দেশটির স্থানীয় মুদ্রার মূল্যও ব্যাপক হারে কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে ক্রুড তেল কিনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।
দ্য নিউজের মতে, ভর্তুকিমূল্যে অপরিশোধিত তেলের জন্য পাকিস্তানের অনুরোধে রাশিয়া ঠিক তখনই সাড়া দেবে যদি পাকিস্তান অর্থপ্রদানের পদ্ধতি, প্রিমিয়ামসহ শিপিং খরচ এবং বীমার মতো প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে।
অবশ্য মস্কো থেকে অপরিশোধিত তেলের প্রথম চালান আগামী মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে একটি বড় চুক্তির পথ প্রশস্ত করবে বলে পত্রিকাটি বলেছে। এছাড়া রাশিয়ার বন্দর থেকে অপরিশোধিত তেলের চালান পৌঁছাতে ৩০ দিন লাগবে যার অর্থ পরিবহন খরচের কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০ ডলার থেকে ১৫ ডলার বৃদ্ধি পাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের আরেক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’ পত্রিকার মতে, রাশিয়া প্রাথমিকভাবে তেল চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে পাকিস্তানের গুরুত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তবে দ্য নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের ভূখণ্ডে খরচ নির্ণয় করতে পাকিস্তান প্রথমে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের একটি ট্যাংকার আমদানি করবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তান যেহেতু নগদ মার্কিন ডলারের সংকটে রয়েছে, তাই চীন, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-সহ বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় রাশিয়াকে অর্থ পরিশোধ করবে।
অবশ্য রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কেনার চেষ্টা পাকিস্তান এবারই প্রথম করছে না। গত বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল দাম কমানোর দাবি করলেও রাশিয়া তার অপরিশোধিত তেলে ৩০ শতাংশ ছাড় দিতে অস্বীকার করেছিল। যদিও রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল কেনা পাকিস্তানকে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি এবং অর্থপ্রদানের সংকট নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
এর আগে গত বছর সমুদ্র পথে রপ্তানিকৃত রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ মার্কিন ডলারে বেঁধে দিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো। এরপর ডিসেম্বর থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরও হয়েছিল। এর ফলে পশ্চিমাদের সমুদ্র পথে আসা রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার বা এর চেয়ে কম দামে কিনতে হবে।
তবে মস্কো সেসময় বলেছিল, পশ্চিমাদের মূল্য বৃদ্ধি মেনে চলা দেশগুলোর কাছে রাশিয়া তেল বিক্রি করবে না। যদিও আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কেনার প্রক্রিয়াটি নিয়ে সমন্বিত চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান।
Leave a Reply