অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দীর্ঘ চার বছর পর গাজীপুরের কোনাবাড়ীর বাঘিয়া এলাকার আলোচিত স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশন (পিবিআই)। হত্যাকাণ্ডে জড়িত নিহতের ভাতিজা উচ্ছাস সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার দুপুরে পিবিআইয়ের সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে কোনাবাড়ী থানার বাঘিনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত উচ্ছাস সরকার নিহত মমতাজ বেগমের আপন ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের ভাতিজা। বাবার সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য ভাতিজা উচ্ছাস সরকার ও ছেলে নিলয় সরকারকে সঙ্গে নিয়ে বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন ভাই আব্দুর রশিদ
জানা গেছে, নিহত মমতাজ বেগম রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পূর্ব নাখালপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। তিনি ঢাকার নাকালপাড়ার হলি মডেল কিন্ডার গার্ডেন ইংলিশ বেইজড বাংলা মিডিয়াম স্কুলে জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পিবিআই জানায়, ২০১৯ সালের ১ মার্চ বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মমতাজ বেগম বাসা থেকে বের হয়ে তার বাবার বাড়ির (জিএমপি কোনাবাড়ী থানার বাঘিয়া গ্রামের) উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরের দিন সকাল আটটার দিকে মমতাজের চাচাতো বোন আম্বিয়া তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মমতাজের মেয়েদেরকে মায়ের লাশ পাওয়ার তথ্য জানায়। তিনি জানান, বাঘিয়া ডিসপুকুর পাড়ার মন্ডল বাড়ির পার্শ্বের ইটের দেয়াল বেষ্টিত শফিউল্লাহর পরিত্যাক্ত বাড়ির ফাঁকা জায়গায় মমতাজ বেগমের লাশ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনায় ওই বছরের ৩ মার্চ তার বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। কোনাবাড়ী থানার মামলা নম্বর-০৩।
কোনাবাড়ী থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করার পর এর তদন্তভার গাজীপুরের পিবিআইকে দেওয়া হয়। গত রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাঘিনা এলাকা থেকে আলোচিত স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামি উচ্ছাস সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত উচ্ছাস সরকারের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, ঘটনার দিন মমতাজ বেগম সন্ধ্যার পর ঢাকার নাখালপাড়া থেকে কোনাবাড়ী এলাকায় তার আপন ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের বাড়িতে আসেন। এরপর মমতাজ ও তার ভাই আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা জমি ও টাকা নিয়ে আলোচনায় বসেন। আলোচনার একপর্যায়ে ভাই আব্দুর রশিদ বোনকে তাকে টাকা না দিয়ে স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন।
আর শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এরপর মমতাজকে আব্দুর রশিদের ছেলে নিলয় সরকার উপস্থিত সবার সামনে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর গ্রেপ্তারকৃত আসামী আব্দুর রশিদের ভাতিজা উচ্ছাস সরকার, আব্দুর রশিদ ও তার ছেলে নিলয় সরকারসহ অন্যান্য সহযোগীরা পরিকল্পনা করে যে, তাদের গ্রামে মন্ডল বাড়ির এলাকায় লাশটি ফেলে রাখলে মন্ডল বাড়ির লোকজনকে মমতাজ বেগম হত্যা মামলায় ফাঁসানো সহজ হবে।
কারণ মন্ডল বাড়ির লোকজন এরআগেও মন্ডল বাড়ির সাধু হত্যা মামলায় আব্দুর রশিদ ও তার ছেলে নিলয় সরকারকে একটি মামলায় আসামি করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা মমতাজের লাশ মন্ডল বাড়ির বাউন্ডারির মধ্যে ফেলে রেখে চলে যায়।
এ বিষয়ে পিবিআইর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান বলেন “নিহত মমতাজের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়ার আসামিদের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ছিল। ঘটনার দিন মমতাজের আপন ভাই আব্দুর রশিদের বাড়িতে আসেন। জমি জমা ও টাকা পয়সার সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য মমতাজ ও তার ভাইসহ অন্য আসামিরা আলোচনায় বসেন।
আলোচনার এক পর্যায়ে টাকা না দিয়েই মমতাজকে স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর করতে বলেন। মমতাজ ওই স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় তাকে মারধর করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।