November 18, 2025, 1:11 am
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযানে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ১৮ বাংলাদেশি ও মাদক আটক মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন : সিইসি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছরের কারাদণ্ড রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বুলডোজার প্রবেশে বাধা ; পুলিশ ও ছাত্রজনতার সংঘর্ষ কুমিল্লায় মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় মা ও ভাইকে কুপিয়ে হত্যা ভারতের জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ২৯ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করলো ভারতের কোস্ট গার্ড রাঙ্গামাটিতে অটোরিকশায় বন্যহাতির আক্রমণে ২ জন নিহত সন্ত্রাস মোকাবিলায় অবস্থান হবে কঠোর : ভারতের সেনাপ্রধান মিয়ানমারের মডং শহরের দখল নিয়েছে কারেন বিদ্রোহীরা
এইমাত্রপাওয়াঃ

নড়াইলে টাকা ছাড়াই ছেলে পেলেন পুলিশে চাকরি ; খুশিতে কাঁদলেন মা

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ‘আগে যেটা চেয়েছি আজ পেলাম তার চেয়ে বেশি কিছু। আমার ছেলের বাবা নেই, ছেলেকে টাকা দিয়ে চাকরিতে ঢুকাবো সে সামর্থ্যও নেই। অনেকে বলে টাকা ছাড়া চাকরি হবে না। আমার ছেলে তো টাকা ছাড়াই পুলিশে নিয়োগ পেল।’

কথাগুলো বলছিলেন সদ্য ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পাওয়া সাব্বির হোসাইন রনির মা রুনা বেগম। তিনি নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন।

বুধবার (২২ মার্চ) সকালে নড়াইল জেলা পুলিশের আয়োজনে পুলিশ লাইন্সের ড্রিলশেডে সদ্য চূড়ান্ত নিয়োগপ্রাপ্ত জেলার ২৭ জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলকে ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানান জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় নিয়োগপ্রাপ্তদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সাড়ে ৩ হাজার প্রার্থীর মধ্যে প্রাথিমক বাছাইয়ে জেলার ৯৩৯ জন তরুণ-তরুণী গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে শারীরিক সক্ষমতা, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৫৭ জন তরুণ-তরূণী ২৩ ফেব্রুয়ারি মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ওই দিনই মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণ (পুরুষ) কোটায় ১৫ জন, পোষ্য কোটায় (পুরুষ) পাঁচজন, এতিম কোটায় (পুরুষ) একজন, আনসার কোটায় (পুরুষ) একজন, সাধারণ কোটা (নারী) দুইজন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় একজন নারী ও দুইজন পুরুষ নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

মেডিকেল ও পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে মোট ২৭ জন নারী-পুরুষকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নড়াইল জেলা থেকে পুলিশ ট্রেনিংয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হয়।

সংবর্ধনা ও সংবাদ সম্মেলন নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তাদের অভিভাবকরা অনুভূতি জানানোর সময় পুলিশ লাইন্সে ড্রিলশেডে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সদ্য নিয়োগ পাওয়া এতিম মো. নাঈম শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এতিম। তিন বছর বয়সের সময় বাবার মানসিক সমস্যার কারণে মা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। ছোট বোনটা হামাগুড়ি দিয়ে চলে। আমিও ছোট তখন বাবা মারা যান। তখন থেকে দাদি, ফুফু, চাচাদের কাছে বড় হইছি। যতটুকু পারছি অর্থকষ্টের মধ্যে দিয়ে পড়াশোনা চালানোর চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, ধারদেনা করে সব চাকরিতে আবেদন করছি, কিন্তু কোনোটায় রিটেন (লিখিত পরীক্ষায়) টিকছি কিন্তু ভাইভাতে বাদ গেছি। চাকরির বয়স এবারের নিয়োগে শেষ, চাকরি হবে না জানি তারপরও টাকা ধার করে আবেদন করছিলাম। জানাশোনা বন্ধুবান্ধব সবার ফোনে পুলিশ পরীক্ষার মেসেজ আসলো, আমার টায় আসেনি। আমার কাকা বললো বসে থেকে কি করবা কোম্পানিতে একটা চাকরি ঠিক করছি ঢাকায় চলে আয়। আমিও ব্যাগ গোছালাম হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো পরীক্ষার জন্য।
কাকারে বললাম শেষ চেষ্টাটা করি, এবারের পরীক্ষাটা দেই।

পরীক্ষা দিতে আসলাম পুলিশ লাইন্সে। প্রথম দিনের পরীক্ষা, দ্বিতীয় দিনের মাঠের পরীক্ষায় টিকলাম। তৃতীয় দিনে ১৬শত মিটার দৌড় শেষে বসেছিলাম। মাঠের অনেক সিনিয়র পুলিশর ভাইয়েরা আমার সম্পর্কে শুনলেন। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে কিছু টাকা দিয়ে বললেন- বাবা রিটেনের জন্য একটা বই কিনে মন দিয়ে পড়ো, প্রস্তুতি ভালো করে নাও, মন খারাপ করো না। আমি স্যারের পরামর্শ মতো বই কিনে ওই বাকি দিনগুলোতে ভালো করে প্রস্তুতি নিলাম। আমি ভাবতে পারনি আমার চাকরি হবে। দাদি, চাচা, ফুফুদের কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। আমার পোশাকের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে নিয়োগের পর এসপি স্যার ২ সেট পোশাক বানিয়ে দিয়েছেন। পুলিশে টাকা ছাড়া চাকরি হয়, আমার মতো এতিম ছেলে তার প্রমাণ। বাবা-মা নেই কিন্তু আল্লাহ আমাকে বড় একটা পুলিশ পরিবার দিয়েছেন।

শামসুন্নাহার বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। আমাদের বংশে কোনো সরকারি চাকরিজীবী নেই। বাবার আর্থিক অনটনের মধ্যে কষ্ট করে পড়াশোনা করে পুলিশের চাকরি পেয়েছি, এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। রিটেন পাস করার পর এলাকার অনেকে বলছিলো- টাকা ছাড়া চাকরি হবে না। নিজেরা খেতে পারি না টাকা দেবো কোথা থেকে? পুলিশ সুপার স্যারের স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্যই মেধা ও যোগ্যতার বলে চাকরি পেয়েছি।

ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও জেলা পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন বলেন, ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, তিনি চেয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশিং ব্যবস্থা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা ও পুলিশ প্রধানের (আইজিপি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমরা প্রতিনিধি হয়ে শুধু দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। চাকরি নয় সেবা এই প্রতিপাদ্য নড়াইল জেলায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। নিয়োগ পদ্ধতির স্বচ্ছতায় চাকরি পাবে নিজ যোগ্যতায়। ইনপুট ভালো না হলে কখনো আউটপুট ভালো আশা করা যায় না। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে পুলিশ বাহিনীকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দেশের জনগণকে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেবেন।

তিনি আরও বলেন, সবাই আমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, কিন্তু ধন্যবাদ আমার প্রাপ্য নয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সিস্টেমটাই এমন করা হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশ বাস্তবায়ন করে নড়াইলে যোগ্যদের বাছাই করে নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছি।

 

আজকের বাংলা তারিখ

November ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Oct    
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০


Our Like Page