অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। এমন পরিস্থিতিতে রোজা রেখে গরমে অতিষ্ঠ মানুষ রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। দাবদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে ক্ষেত্রের ফসল। ব্যাঘাত ঘটছে কারখানার উৎপাদন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালতে কাজে। সব মিলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
দেশের কয়েকটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামে বিদ্যুৎ কখন আসে আর কখন যায় তা বলা দুষ্কর। প্রচণ্ড গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ফ্রিজের খাবার নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসা চলছে না ঠিক মতো। ঈদের আর দুই-একদিন বাকি থাকলেও গরমের কারণে মার্কেটমুখী হচ্ছে না ক্রেতারা।
চট্টগ্রামের দোকানী আব্দুল করিম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ঈদ উপলক্ষে এই সপ্তাহে বিক্রি বাড়বে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।
গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) থেকে সামগ্রিক বিদ্যুতের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় ৬.২% কমেছে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আগের সাত দিনের তুলনায় চাহিদা প্রায় ১৫% বেড়েছে।
দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বুধবার (১৯ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রী নসরুল হামিদ মঙ্গলবার রাতে একটি ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দ, এ বছর গ্রীষ্ম, সেচ মৌসুম এবং রোজা একসাথে হওয়াতে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে সেটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের পূর্ব প্রস্তুতির স্বাক্ষরও রেখেছি। কিন্তু গত ৫০ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙ্গে বর্তমানে যে নজিরবিহীন দাবদাহ চলছে তাতে ধারণার চেয়েও বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ফলে দেশের অনেক জায়গায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ভোগের জন্য আমরা আন্তরিক সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করছি। সেইসাথে সবার অবগতির জন্য জানাতে চাই পরিস্থিতি উত্তরণে বিদ্যুৎ বিভাগ সর্বাত্মক কাজ করছে। খুব শীঘ্রই আবারও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরে আসবে। সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দ, ধৈর্যধারণের জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
এদিকে তাপমাত্রা না কমা পর্যন্ত ভোগান্তি কমবে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। গত কয়েক দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় এসি ও ফ্যান বেশি চলছে। পাশাপাশি রমজান ও সেচ মৌসুম চলার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা এক লাফে অনেক বেড়েছে। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সূত্রমতে, ১৭ এপ্রিল চাহিদার বিপরীতে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিলো। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বাস্তবে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ সচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তবে আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে। কারণ অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাহিদা কমবে। এ ছাড়া আমাদের দুয়েকটা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে সমস্যা ছিলো, সেগুলো উৎপাদনে আসবে। পাশাপাশি এ তাপমাত্রাও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply