December 18, 2025, 10:39 pm
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম আটক ঝিনাইদহের মহেশপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে নারীর আত্মহত্যা বিজিবির অভিযানে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারকারী বাংলাদেশী নাগরিক আটক ও মাদক উদ্ধার মাগুরায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বিদায়ী সাক্ষাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় দূষিত বাতাসের কারণে বছরে অকালে মারা যাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ : বিশ্বব্যাংক আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী  খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবছর বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন ৮ জন গত নভেম্বরে ৫৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৩ জন নিহত ; আহত ১ হাজার ৩১৭
এইমাত্রপাওয়াঃ

ব্রিটেনের রাজপরিবার কতোটা জনপ্রিয় ?

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ব্রিটেনের রাজা হিসেবে তৃতীয় চার্লসের অভিষেক হচ্ছে ৬ই মে, শনিবার। তিনি হবেন ব্রিটেনের ৪০তম রাজা। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে সীমিত কিন্তু জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই রাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে। তার মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মারা যাওয়ার পর তিনি রাজার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। খবর বিবিসি।

রাজার কাজ কী? : রাজা যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্র-প্রধান। তবে তার ক্ষমতা প্রতীকী এবং আনুষ্ঠানিক। তিনি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিদিন ব্রিটিশ সরকারের কাজের রিপোর্ট তার কাছে লাল রঙের চামড়ার একটি বাক্সে করে পাঠানো হয়, যার মধ্যে থাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈঠকের আগে সে সম্পর্কে ব্রিফিং, অথবা কাগজপত্র যাতে তার স্বাক্ষর করা প্রয়োজন।

সাধারণত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রতি বুধবার বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করে তার সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে রাজাকে অবহিত করেন।এসব বৈঠক একান্ত ব্যক্তিগত এবং সেখানে যেসব কথাবার্তা হয় সেগুলোর আনুষ্ঠানিক কোনো রেকর্ড রাখা হয় না।

এছাড়াও রাজার আনুষ্ঠানিক সংসদীয় কিছু ভূমিকা রয়েছে: : সরকার নিয়োগ: সাধারণ নির্বাচনে যে দল জয়ী হয় তার প্রধানকে সরকার গঠনের জন্য বাকিংহাম প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাধারণ নির্বাচনের আগে রাজা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও রাজার ভাষণ: এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে রাজা সংসদীয় বছর শুরু করেন। এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় স্টেট ওপেনিং। হাউজ অব লর্ডসের একটি সিংহাসনে বসে রাজা ভাষণ দেন, যাতে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

রাজার অনুমোদন: যখনই পার্লামেন্টে কোনো বিল পাস হয় সেটিকে আইনে পরিণত করার জন্য রাজাকে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করতে হয়। শেষ যে বছর এরকম রাজকীয় অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়, সেটি ছিল ১৭০৮ সালের ঘটনা।

এছাড়াও প্রত্যেক বছরের নভেম্বর মাসে রাজা বার্ষিক স্মরণ বা রিমেমব্রান্স অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এটি অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের সেনোটাফ বা জাতীয় স্মৃতি স্তম্ভে।

বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব রাষ্ট্রপ্রধান- যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা- ব্রিটেন সফরে আসেন, রাজা তাদের নিমন্ত্রণ জানান। এছাড়াও ব্রিটেনে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদেরও সঙ্গেও তিনি নিয়মিত সাক্ষাৎ করে থাকেন।

রাজা তৃতীয় চার্লস তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানি গিয়েছিলেন যেখানে তিনি পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়েছেন। তিনিই প্রথম ব্রিটিশ রাজা যিনি জার্মান পার্লামেন্টে ভাষণ দিলেন।

ব্রিটিশ রাজা কমনওয়েলথেরও প্রধান। ৫৬টি স্বাধীন দেশ নিয়ে এটি গঠিত এবং এই কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫০ কোটি।

ব্রিটেনের রাজা এই কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে ১৪টির রাষ্ট্র-প্রধান।

রাজা তৃতীয় চার্লসের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কুইন কনসর্ট ক্যামিলা তাকে সহযোগিতা করেন। এছাড়াও রাজ পরিবারের সঙ্গে যে ৯০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক রয়েছে সেগুলোকেও তিনি সমর্থন দিয়ে থাকেন।

এসব দাতব্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এবং যারা ধর্ষণ কিম্বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা ইত্যাদি।

অভিষেক অনুষ্ঠানে কী হবে? : ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে এই অভিষেক অনুষ্ঠানে রাজা ও কুইন কনসর্টকেও মুকুট পরানো হবে। এই অভিষেক অনুষ্ঠান মূলত অ্যাংলিকান খৃস্টানদের একটি ধর্মীয় সভা যা আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি পরিচালনা করে থাকেন।

এসময় রাজার মাথায় ও হাতে “পবিত্র তেল” লেপন করা হয় এবং রাজকীয় প্রতীক হিসেবে তিনি রাজদণ্ড ও রাজগোলক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্বে রাজা তৃতীয় চার্লসের মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ডের মুকুট পরিয়ে দেবেন আর্চবিশপ। এটি একটি স্বর্ণের মুকুট যা ১৬৬১ সালে তৈরি করা হয়েছিল।

সেন্ট এডওয়ার্ডের মুকুট

রাজকীয় অনুষ্ঠানের জন্য টাওয়ার অব লন্ডনে যেসব সামগ্রী বা ক্রাউন জুয়েলস সংরক্ষিত আছে, সেন্ট এডওয়ার্ডের মুকুট তার মধ্যমণি। শুধুমাত্র অভিষেকের মুহূর্তেই রাজা বা রানি এই মুকুটটি পরে থাকেন।

রাজার অভিষেক একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। সরকার এর খরচ বহন করে এবং এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে কারা যোগ দেবেন সেই তালিকাও তারা তৈরি করে।

রাজপরিবারে আর কারা আছেন? : রাজা চার্লস ও তার প্রথম স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়নার বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম। রানির মৃত্যুর পর তিনি হন প্রিন্স অব ওয়েলস এবং ডিউক অব কর্নওয়াল। ডিউক অব ক্যামব্রিজের আগের মর্যাদাও তার রয়েছে।

ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় তিনিই এখন এক নম্বরে। তার স্ত্রী ক্যাথরিন প্রিন্সেস অব ওয়েলস, ডাচেস অব কর্নওয়াল এবং ডাচেস ক্যামব্রিজ। তাদের তিন সন্তান: প্রিন্স জর্জ, প্রিন্সেস শার্লট এবং প্রিন্স লুইজ।

প্রিন্সেস রয়্যাল (প্রিন্সেস অ্যান) রানীর দ্বিতীয় সন্তান এবং একমাত্র কন্যা। যখন তার জন্ম হয় তখন উত্তরাধিকারের ক্রমতালিকায় তিনি ছিলেন তিন নম্বরে। কিন্তু এখন তার অবস্থান ১৬তম স্থানে। ১৯৮৭ সালে তাকে প্রিন্সেস রয়্যাল উপাধি দেওয়া হয়। তার দ্বিতীয় স্বামী ভাইস-এডমিরাল টিমোথি লরেন্স। প্রথম স্বামী ক্যাপ্টেন মার্ক ফিলিপ্সের সঙ্গে তার দুই সন্তান: পিটার ফিলিপ্স ও জারা টিনডাল।

ডিউক অব এডিনবরা (প্রিন্স এডওয়ার্ড) রানীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। তার স্ত্রী ডাচেস অব এডিনবরা সোফি রিজ-জোন্স। তাদের দুই সন্তান: লেডি লুইজ উইন্ডসর এবং আর্ল অব ওয়েসেক্স (জেমস মাউন্টব্যাটন-উইন্ডসর)

বাকিংহাম প্রাসাদের রাজ পরিবারের সদস্যরা

ডিউক অব ইয়র্ক (প্রিন্স এন্ড্রু) রানীর দ্বিতীয় পুত্র। সাবেক স্ত্রী ডাচেস অব ইয়র্ক সারা ফার্গুসনের সঙ্গে তার দুই কন্যা: প্রিন্সেস বিয়াট্রিস এবং প্রিন্সেস ইউজিন। যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে ২০১৯ সালে বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর প্রিন্স এন্ড্রু তার রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে যান। জেফরি এপস্টেইন যৌনকাজের জন্য মেয়ে পাচার এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় আত্মহত্যা করেছিলেন। প্রিন্স এন্ড্রুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে তিনি ভার্জিনিয়া জিওফ্রেকে ধর্ষণ করেছিলেন। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রিন্স এন্ড্রু যুক্তরাষ্ট্রে তার বিরুদ্ধে করা যৌন হামলার মামলার নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগকারী মিস জিওফ্রের সঙ্গে আদালতের বাইরে সমঝোতা করেন, এজন্যে তিনি কতো অর্থ দিয়েছেন তা প্রকাশ করা হয়নি।

ডিউক অব সাসেক্স (প্রিন্স হ্যারি) উইলিয়ামের ছোট ভাই। তার স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল। তাদের দুই সন্তান: প্রিন্স আর্চি এবং প্রিন্সেস লিলিবেট। এই রাজকীয় দম্পতি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঘোষণা করেন যে তারা রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন এবং পরে তারা ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে যান।

উত্তরাধিকারের প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে? : ব্রিটিশ সিংহাসনে উত্তরাধিকারের এই ক্রমতালিকায় বলা হয়েছে বর্তমান রাজার মৃত্যু হলে কিংবা তিনি সিংহাসন ছেড়ে দিলে রাজ পরিবারের কোন সদস্য পরবর্তী রাজা বা রানি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এই তালিকায় প্রথমেই যিনি রয়েছেন তিনি রাজার প্রথম সন্তান।

রাজকীয় এই উত্তরাধিকারের নিয়ম ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়েছে যার ফলে সিংহাসনে আরোহণের ক্ষেত্রে পুত্ররা তাদের বড় বোনদের চেয়ে অগ্রাধিকার পাবেন না। রাজা তৃতীয় চার্লসের পর যিনি রাজা হওয়ার তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছেন তিনি প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স উইলিয়াম।

এই তালিকার দুই নম্বরে রয়েছেন উইলিয়ামের বড় সন্তান প্রিন্স জর্জ। তিন নম্বরে তার কন্যা প্রিন্সেস শার্লোট। চার নম্বরে প্রিন্স লুইস এবং প্রিন্স হ্যারির অবস্থান পঞ্চম।

ব্রিটিশ রাজপরিবার কতোটা জনপ্রিয় : রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেকের আগে রাজ-পরিবার সম্পর্কে জনগণের মনোভাব জানতে একটি জনমত সমীক্ষা পরিচালিত হয়।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে বেশিরভাগ মানুষ রাজতন্ত্র অব্যাহত রাখার পক্ষে। তাদের সংখ্যা ৫৮ শতাংশ। আর ২৬ শতাংশ চায় নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করা হোক।

রাজ পরিবারের প্রতি ব্রিটেনের বিভিন্ন বয়েসের লোকজনের মনোভাব একেক রকমের। তাদের প্রতি বয়স্ক লোকজনের সমর্থন বেশি। তরুণ প্রজন্মের কাছে রাজপরিবারের আবেদন তুলনামূলকভাবে কম।

জরিপে অংশগ্রহণকারী যাদের বয়স ৬৫-এর উপরে তাদের ৭৮ শতাংশ রাজা-রানির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪, রাজপরিবারের প্রতি তাদের সমর্থন সবচেয়ে কম, মাত্র ৩২ শতাংশ। কিন্তু এই গ্রুপের ৩৮ শতাংশ নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণ করার পক্ষে। বাকি ৩০ শতাংশ বলেছে এবিষয়ে তারা কিছু জানে না।

অল্পবয়সীরা রাজপরিবারের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তাদের সংখ্যা ৭৮ শতাংশ।

রাজপরিবারের সদস্যরা কোথায় থাকেন : রাজা তৃতীয় চার্লস এবং কুইন কনসর্ট ক্যামিলা বাকিংহাম প্রাসাদে বাস করেন। এর আগে তারা লন্ডনের ক্ল্যারেন্স হাউজ এবং গ্লস্টারশায়ারের হাইগ্রোভে সময় ভাগাভাগি করে থাকতেন।

রাজ-পরিবারের অন্যান্য বাসভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে উইন্ডসর ক্যাসল, নরফোকের স্যানড্রিংহাম, এডিনবরায় প্যালেস অব হলিরুডহাউজ এবং অ্যাবার্ডিনশায়ারের ব্যালমোরাল ক্যাসল।

প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস ২০২২ সালের অগাস্টে পশ্চিম লন্ডনের কেনসিংটন প্যালেস ছেড়ে উইন্ডসর এস্টেটের অ্যাডেলেইড কটেজে চলে যান। সূত্র : বিবিসি

 

আজকের বাংলা তারিখ

December ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Nov    
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  


Our Like Page