অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ১৮০ দিনেরও বেশি সময় পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বর্বর আগ্রাসনের ক্ষয়ক্ষতি যখন অব্যাহত রয়েছে তখন হিব্রু মিডিয়ায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর মন্ত্রিসভার কর্মক্ষমতা নিয়ে সমালোচনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ইহুদিবাদী হারেৎজ পত্রিকা এক প্রতিবেদনে লিখেছে, গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে এবং অক্টোবরের ৭ তারিখ থেকে ইসরাইলের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আরো জোর দিয়ে বলা হয়েছে, আমাদের অবশ্যই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে এবং হামাসের কাছে আটকে থাকা আমাদের বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। হারেৎজ পত্রিকায় আরো বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বরখাস্ত করা উচিত।
ইহুদিবাদী গণমাধ্যমটিতে আরো জোর দিয়ে বলা হয়েছে, হামলার অর্ধ বছর পার হয়েছে এবং এখনো সেখানে হামলা অব্যাহত রয়েছে কিন্তু গাজায় পূর্ব ঘোষিত লক্ষ্যগুলো অর্জিত হয়নি। আর এই ছয় মাসে কোন বন্দি তার বাড়িতে ফিরে আসেনি এবং হামাস পরাজিত হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১,৫০০ জন নিহত এবং ইসরাইলিদের সঙ্গে কয়েক হাজার রিজার্ভ বাহিনীকে এই যুদ্ধের জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে। ইসরাইলকে অবশ্যই তার কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা খুবই কম।
হিব্রু-ভাষার দৈনিক পত্রিকা বলেছে, “ইসরাইলি মন্ত্রিসভার ব্যর্থতা কেবল গাজাতেই নয়, উত্তর ফ্রন্টে পরিস্থিতি সমাধান করার এবং উত্তরে ইসরাইলিদের ফিরে আসার জন্য হিজবুল্লাহকে পিছনে ঠেলে দেওয়ার কোনও দিগন্ত নেই।” এই পত্রিকাটি আবারো জোর দিয়ে বলেছে যে দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে প্রতিটি দিক থেকে আরো অবনতি ঘটেছে। আমরা ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পতন প্রত্যক্ষ করছি। ছয় মাস যুদ্ধের পর, ইসরাইল তার সমস্ত বৈধতা হারিয়েছে এবং আগের চেয়ে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিপজ্জনকভাবে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে এবং আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ইহুদিবাদী গণমাধ্যমটি জোর দিয়ে বলেছে, “ইসরাইলের কর্মকর্তারা আলোচনা প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই সামরিক চাপ প্রয়োগকে প্রাধান্য দিয়েছিল এই অজুহাতে যে হামাসের উপর যত চাপ বাড়বে এই যুদ্ধের শর্তগুলো আরও নমনীয় হয়ে উঠবে। কিন্তু এই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেনা নিহতের সংখ্যা ৬০৪ এ ছুঁয়েছে।।”
এর আগে ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় আটক বন্দিদের ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন যে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে ইসরাইলের অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে নেতানিয়াহু ইসরাইলি বন্দিদের বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন না, বরং নিজেকে বাঁচাতে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছিলেন যে এই যুদ্ধ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কর্তৃক নির্ধারিত নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না।
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী গাজায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর পাশবিক হামলায় এ পর্যন্ত ৩৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ৭৫ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার পরিকল্পনায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের ফিলিস্তিনের ভূমিতে অভিবাসনের মাধ্যমে ইসরাইলি শাসনের সৃষ্টি হয় এবং ১৯৪৮ সালে এর অস্তিত্ব ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং ধাপে ধাপে তাদের সব জমি দখল করা হয়েছে।
Leave a Reply