মাদকাসক্তি বর্তমান বিশ্বে ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাদক শব্দটি শুনলে বেশিরভাগ মানুষই বিচলিত হয়। ভয় পায়। আর মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ঘৃণা ও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়।
মাদকাসক্তি একটি ব্যাধি। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মের বিপথগামিতাও এই সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। মাদকদ্রব্য, ধূমপান ও তামাক সেবন মানুষের অকাল মৃত্যু এবং স্বাস্থ্যহানির অন্যতম প্রধান কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশের বড় অংশের জনগোষ্ঠী কিশোর ও তরুণ। যে কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বলা হয় ইয়ুথ ডিভিডেন্ট। দেশের শতকরা ৪৯ জনে বয়স ২৪ বা এর নিচে অর্থাৎ শতকরা ৪৯ জন বয়সে তরুণ। বেসরকারি হিসাব মতে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। ইয়াবা সেবনকারী শতকরা ৮৫ ভাগই তরুণ যুবসমাজ। ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। যা গবেষণায় প্রমাণিত। ধূমপানে অভ্যস্ততার মধ্য দিয়ে তরুণরা মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে। পরবর্তীতে ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেন, আফিস, কোডিন, মরফিন, এলএসডিসহ বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে মাদকাসক্তরা কিডনি, লিভার, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্ম নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। মাদকের সঙ্গে জড়িত অসাধু চক্র আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের মাদকের রাজ্যে টানতে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করছে অসাধু মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীরা।
আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় সামাজিক অপরাধের বিস্তার ঘটাচ্ছে। সন্তানের কাছে বাবা পরম নির্ভরতার স্থান। স্ত্রীর কাছে স্বামী নিরাপত্তার অনুষঙ্গ। সম্প্রতি বগুড়ায় এক পাষন্ড স্বামী তার স্ত্রী ও এক বছর বয়সী ছেলেকে স্থানীয় একটি হোটেলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। নেশার টাকার জন্য গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নিজ ঘরে টানা দুই দিন দুই দফায় আগুন দেয় কামরুজ্জামান নামের এক মাদকাসক্ত। এতে বাড়ির পাঁচ কক্ষের সব আসবাব পুড়ে যায়। ঈশ্বরদীতে ইপিজেডে এক নারী কর্মী নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন। তার ওপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাবেক স্বামী। তার অপরাধ, তিনি মাদকাসক্ত সাবেক স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসারের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিলেন না। সম্প্রতি, ঢাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের গার্ডরুমের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ কনস্টেবল কাউসার আলী এসএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে তার সহকর্মী কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে হত্যা করে। এ দুর্ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন শাখরুখও আহত হন। ঘাতক পুলিশ কনস্টেবল মাদকাসক্ত ছিলেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা আছে। মাদকাসক্তি সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন মাদক সংক্রান্ত অপরাধ। মাদকের খরচ জোগাতে কিশোর ও কিশোরী উভয়ই এই অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনাকারী গ্যাংয়ের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। মাদক ব্যবসা, হত্যা, খুন, এলাকাতে আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, রাস্তায় পরিকল্পিত সংঘাত তৈরির মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বিভিন্ন অভিযান ও গ্রেপ্তার বাড়লেও কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন নতুন গ্যাংয়ের নাম। ফলে মাদক সমস্যা প্রতিরোধে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। উদ্বেগজনক বিষয় হলোÑ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সম্পৃক্ততা! সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় অন্যতম বড় অনুষঙ্গ হলো ইন্টারনেট। শিক্ষা,স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসাবাণিজ্য সবখানেই ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগণ্য ভূমিকা এখন দৃশ্যমান। পক্ষান্তরে, কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের অপব্যবহারও আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় তের কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। দেশে শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে খোলামেলাভাবেই বিক্রি হচ্ছে মাদকজাতীয় দ্রব্য। অসাধু মাদক ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা ক্রেতাদেরকে (বিশেষত: তরুণ জনগোষ্ঠী যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বেশি ব্যবহার করে) তারা নিজেদের মধ্যে নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে মাধ্যমটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি ফেসবুক। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে তারা প্রথমে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়, তারপর মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে। পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হয়। ফ্যাশন হিসেবে অসংখ্য তরুণ আজকাল মাদক সেবনের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এগুলো মানুষকে ক্ষতিকর নেশা সেবনে উদ্বুদ্ধ করে। বিষণ্নতা থেকে মাদক গ্রহণ, এমনকি জীবনকে বিপন্ন করে তুলছেন অনেকে। তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার হতে বিরত রাখতে হবে। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি।
আমাদের আশপাশে আত্মীয় পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব যে কারও মাদকাসক্তি সমস্যার কথা জানলে তাকে সবাই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। এমনকি তার পরিবারের প্রতি বিভিন্ন অপবাদমূলক ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে। যেমনÑ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে অপমান করা, যোগ্যতা থাকলেও কর্মক্ষেত্রে চাকরিচ্যুত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন নেতিবাচক আচরণ রয়েছে। ফলে একজন মাদকনির্ভর ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবারও অনেক সময় সমাজের এই সমস্ত নেতিবাচক আচরণের ভয়ে মাদক সমস্যা সমাধানের জন্য কারো কাছে সহায়তা চাইতে লজ্জা ও সংকোচ করেন। এই সমস্যা সামনে নিয়ে আসতে চান না। ফলস্বরূপ সমস্যার তীব্রতা যখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়, তখন মাদকনির্ভর ব্যক্তির সমস্যার ধরণ অনুযায়ী কি ধরণের চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন তা না বিবেচনা করেই চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেন, আবার কখনো বিয়ে দেয়া, তার ওপর শারিরীক ও মানসিক অত্যাচারসহ বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। মাদকাসক্তদের শাষণ বা ঘৃণা অবহেলা না করে তাকে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে নিরাময় কেন্দ্রে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দেয়া দরকার। যাতে তারা সমাজের বোঝা না হয়ে সুস্থ হয়ে আবার পরিবারে ফিরে আসতে পারে। মাদকদ্রব্য আমাদের সমাজে চরম বিরূপ প্রভাব যে ফেলে তার প্রমাণ রয়েছে অসংখ্য। দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে প্রায় প্রতিনিয়তই মাদকের কারণে পরিবার ও সমাজের ওপর দিয়ে বয়ে যায় দুর্ভোগের কালো ছায়া। মাদকাসক্ত ব্যক্তির হাতে মা, বাবা, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়স্বজন খুনের ঘটনা ঘটে বার বার।
মাদকাসক্ত ঐশী রহমানের কথা দেশের কোনো মানুষের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের নিজ বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাহফুজুর রহমান-স্বপ্না রহমান দম্পতির কন্যা মাদকাসক্ত ও বিকারগ্রস্ত মাত্র ১৯ বছর বয়সি কন্যা ঐশী রহমান নিজে তার বাবা-মাকে হত্যা করে। ঐশীর পরিবার-পরিজনদের মধ্যে কারো ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। ১৭ আগস্ট ঐশী নিজে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করে। এরপর ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। ঐশী রহমান শিশা, গ্যালোজ, ইয়াবা, হুইস্কি ও গাঁজা সেবন করত বলে জানা যায়। মাদকের ফলে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে ঐশী।
বাংলাদেশে কমপক্ষে ৬৫ লাখ মানুষ সরাসরি নানা ধরনের মাদক সেবন করে থাকে। এদের মধ্যে শতকরা ৮৭ ভাগ পুরুষ ও ১৩ ভাগ নারী। অর্থাৎ মোট মাদকসেবীর মধ্যে ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার পুরুষ এবং ৮ লাখ ৪৫ হাজার নারী। এরমধ্যে শিশু বিশেষ করে পথশিশুরা রয়েছে। আর মাদক ব্যবসায় নানাভাবে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ। অবৈধভাবে মাদক আমদানির জন্য প্রতি বছর কমপক্ষে দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি দেশি মুদ্রা পাচার হয়। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের একটি জরিপে এসব তথ্য ওঠে আসে।ফ্যামেলি হেলথ ইন্টারন্যাশনাল নামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রতি বছর শুধু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রায় তিন‘শ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এ দেশে প্রবেশ করে। ফ্যামেলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশে আনুমানিক ৩২ রকম মাদকের খোঁজ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে মাদকাসক্তির প্রধান শিকার যুব ও তরুণ সমাজ। যুব ও তরুণ সমাজ জাতির প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচিত। তরুণ ও যুবরাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের চালিকাক্তি। এদেরকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই পরিবার থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সি সন্তানরা কখন কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মেলামেশা করছে; সেসব বিষয়ে অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। এ ছাড়া মাদকাসক্তির যেসব কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হতাশা। হতাশা রোধে যুব ও তরুণ সমাজের জন্য নিয়মিত লেখাপড়া, খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা, বই পড়ার দিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সর্বোপরি যুব ও তরুণ সমাজের মনে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে পারলে মাদকের করালগ্রাস থেকে যুব ও তরুণ সমাজ রক্ষা পাবে। মাদকের কারণে দেশে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা। মাদকের ভয়ংকর আগ্রাসন থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি মাদকবিরোধী গণসচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। সরকার বা কোনো একক সংস্থার পক্ষে মাদকবিরোধী সংগ্রামে শতভাগ জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য দল-মত নির্বিশেষে দেশের সব মানুষকে মাদকবিরোধী আন্দোলনে শরিক হতে হবে। কোন এলাকায় মাদকের আখড়া বলে বিবেচিত হলে তা ধ্বংসকরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তবেই সম্ভব একটি মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া।
মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে তার মধ্যে একটি পুরোনো সংস্থা সাংহাইতে স্থাপন করা হয় ১৯০৯ সালে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই সংস্থার কাজকে অনুমোদন করে মডেল হিসেবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ থেকে বলা হয়, ‘মাদক একটি জনস্বাস্থ্যবিরোধী প্রক্রিয়া। এটি নিরাপত্তা ও মঙ্গলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ না করলে এটি একটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
মাদক নিয়ন্ত্রণে আরো একটি উপায় হতে পারে ডোপ টেস্ট। মূলত, যারা নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে ওই নেশাজাতীয় পদার্থের কিছুটা হলেও থেকে যায়। আর সেটিই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। কোনো ব্যক্তি আদৌ মাদকাসক্ত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় তাকেই ডোপ টেস্ট বলে। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মূত্র বা রক্ত, আবার কখনো দুটির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মাদক গ্রহণ করা ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শেষ এক সপ্তাহে মুখের লালার মাধ্যমে, শেষ দুই মাস রক্তের মাধ্যমে, শেষ বার মাস বা এক বছরে চুল পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যায় মাদকের নমুনা। বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সব চাকরিতে প্রবেশকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে মাদক পরীক্ষার সনদ বা ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয়। আবার চাকরিতে থাকাকালীন কোনো কর্মচারী বা কর্মকর্তার আচরণ সন্দেহজনক হলে যে কোনো সময় তার ডোপ টেস্ট করানোও হতে পারে।
একজন মাদকাসক্ত অপরাধী নয়, অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা করলে সে একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে আবার সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চরম ঘৃণার চোখে দেখা হয়। এতে সমাজের ভালো থেকে মন্দই বেশি হয়। কেউ জন্ম থেকে মাদকাসক্ত হয় না। যেসব কারণে একজন মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে উঠে তার কারণ চিহ্নিত করে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মাদকের করালগ্রাস থেকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক : এম এ কবীর, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সভাপতি, ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি।
Leave a Reply