22 Jan 2025, 10:57 am

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকায় পানির অবকাঠামো ধ্বংস ও বেসামরিক লোকদের সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে গণহত্যামূলক কার্যকলাপের জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।

জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, বিশেষভাবে পানি সমস্যার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থা তাদের নতুন প্রতিবেদনে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছে যে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড গাজাবাসীকে পানি থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাকৃত একটি পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা, যা সম্ভবত হাজার হাজার মানুষের মৃতুর কারণ এবং ভবিষ্যতেও আরো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজা উপত্যকায় বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পানি পেতে ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে।’ রিপোটে বলা হয়, এ ছাড়া সোলার প্যানেল পাওয়ারিং ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট,  জলাধার ও  খুচরা যন্ত্রাংশের গুদাম ও সেইসাথে জেনারেটর চালাতে ব্যবহার্য জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করাসহ পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর ইচ্ছাকৃত ক্ষতিসাধন করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ , মেরামত কর্মীদের ওপর হামলা এবং মেরামত সামগ্রী আমদানিও বাধাগ্রস্ত করেছে।

প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার অস্তিত্ব আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবে ইসরায়েল গাজায় তাদের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। অবরুদ্ধ অঞ্চলে সহায়তা পৌঁছানোর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেছে।

প্রায় এক বছর ধরে তৈরি করা এইচআরডব্লিউ প্রতিবেদনটি কয়েক ডজন গাজাবাসী, পানি ও স্যানিটেশন কর্মী, চিকিৎসক এবং সাহায্য কর্মীদের সাথে সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি স্যাটেলাইট চিত্র, ছবি, ভিডিও এবং ডেটা বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এটি বলেছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তথ্যের জন্য অনুরোধ জানালে তার জবাব দেয়নি।

এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, পানির অভাব ও পানিবাহিত রোগ গাজাবাসীর জনজীবনকে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। অধিকার গোষ্ঠীটি ইসরায়েলকে গাজায় পর্যাপ্ত পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অবিলম্বে নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম সৃষ্ট গণহত্যা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা  নেওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে  সামরিক সহায়তা ও অস্ত্র বিক্রি বা স্থানান্তর বন্ধ, লক্ষ্যবস্তুভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যালোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 

গাজায় পানি অবকাঠামো ধ্বংসে ইসরায়েরের প্রচেষ্টার প্রতি নিষেধাজ্ঞা চায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভয়াবহ গণহত্যা ও অপরাধযজ্ঞ ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যর্থতায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি। তিনি বলেছেন, বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তেল আবিবকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বুধবার কায়রোয় ডি-এইটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ২১তম সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন।

আরাকচি বলেন, “আন্তর্জাতিক সমাজ গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।” ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই ব্যর্থতার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে তেল আবিবের প্রতি ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা।”

আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠেয় ডি-এইট শীর্ষ সম্মেলনের প্রতি ইঙ্গিত করে আরাকচি আশা প্রকাশ করেন যে, শীর্ষ সম্মেলন থেকে গাজা, লেবানন ও সিরিয়ায় আগ্রাসন বন্ধ করতে ইসরাইলকে কঠোর বার্তা দেয়া সম্ভব হবে।

আজ আরো পরে মিশরের রাজধানী কায়রোয় উন্নয়নশীল আট দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা ডি-এইটের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ডি-এইটের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে, ইরান, বাংলাদেশ, তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া।

সম্মেলনে অংশ নিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বুধবার রাতে কায়রো পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস ডি-এইট সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বলে ঢাকা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে।

গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক ব্যর্থতায় ডি-৮ সম্মেলনে ইরানের দুঃখ প্রকাশ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইহুদিবাদী ইসরাইলের বড় মিত্র হিসেবে আমেরিকা এবং জার্মানি ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালানোর ব্যাপারে দখলদার সামরিক বাহিনীকে পরিপূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে।

গতকাল (সোমবার) শেষ বেলায় সামাজিক মাধ্যম এক্স পেইজে দেয়া এক পোস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি একথা বলেন।

তিনি জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক বেন সৌলের সাম্প্রতিক মন্তব্য তুলে ধরেন। বেন সৌল বলেছেন, এই দুটি দেশ ইসরাইলে রপ্তানি করা অস্ত্রের শতকরা ৯৯ ভাগ সরবরাহ করে। এজন্য তিনি আমেরিকা ও জার্মানির নিন্দা করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেন, তারা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে রাতারাতি যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে। তাদের সরবরাহ করা অস্ত্রে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে।

বেনসৌলের এই মন্তব্যের আলোকে ইসমাইল বাকায়ি বলেন, আমেরিকা এবং জার্মানি ইহুদিবাদী ইসরাইলের কাছে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখে গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালাতে পরিপূর্ণ সহায়তা করছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থতা ও আইনগত রীতিনীতি উপেক্ষা করার জন্য ইরানি মুখপত্র ওয়াশিংটন এবং বার্লিনের নিন্দা করেন। একই সাথে তিনি বলেছেন, এসব দেশ আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের বিষয়টিও উপেক্ষা করেছে। তাদের এই ভুল পদক্ষেপ এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সামরিক সংঘাত শুরুর পর এ পর্যন্ত আমেরিকা দখলদার ইসরাইলকে ১,২৫০ কোটি ডলারের সরাসরি সামরিক সহায়তা দিয়েছে। অন্যদিকে জার্মানি ৯ কোটি ৪০ লাখ ইউরোর অস্ত্র সরবরাহ করেছে। হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে- এ দুটি দেশ একদিকে ইসরাইলকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করছে, অন্যদিকে তারা বারবার যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

 

     

আমেরিকা-জার্মানি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহায়তা করছে : ইরান

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনারা গানবোট থেকে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে যাতে অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।

গাজার যে শরণার্থী শিবিরে ইসরাইল এই বীভৎস্য হামলা চালিয়েছে সেটি তেল আবিবের ঘোষণা করা নিরাপদ অঞ্চলে অবস্থিত। অর্থাৎ ইহুদিবাদী বাহিনী তাদের ঘোষণা করা নিরাপদ অঞ্চলেও বিভৎস্য হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনিদেরকে হতাহত করছে। নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের এই বর্বর হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এই হামলায় সেখানকার একটি পোস্ট অফিসও ধ্বংস হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ইহুদিবাদী বাহিনী এই শিবিরের একটি আবাসিক ভবনকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় যাতে অন্তত ৪০ জন শহীদ এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বলা হচ্ছে- এখনো বিধ্বস্ত ভবনের নিচে অনেকে চাপা পড়ে রয়েছেন, তাদেরকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করা যায়নি।

এদিকে, গতকাল ইহুদিবাদী ইসরাইলি বাহিনী গাজা শহরের মধ্যাঞ্চলের শিল্প এলাকায় একজন ফিলিস্তিনি ফটো সাংবাদিক এবং অন্য এক তরুণকে বিমান হামলার মাধ্যমে হত্যা করেছে। এর পাশাপাশি গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলের শেখ রাদোয়ান মহল্লায় বিমান হামলা চালিয়ে আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুস সালাম এবং তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। খান ইউনুস শহরে অন্য এক হামলায় তিন ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন।

 

গাজার নিরাপদ অঞ্চলের শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ৩৪ জন নিহত