অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে সমাহিত হতে চান পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত সুইডিশ বিচারপতি সৈয়দ আসিফ শাহকার। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় শেষ দিনগুলো বাঁচতে চান মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত এই যুদ্ধবন্ধু। ইচ্ছার কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে পাকিস্তানকে পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশের একটি খ্যাতনামা টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো :
১৯৭১ সালে পাঞ্জাবের হরোপ্পার সৈয়দ আসিফ শাহকার ২২ বছরের তরুন। পাঞ্জাব স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট নামের নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ এবং কবিতায় তরুন শাহকার বিরোধিতা করেছিলেন। পরিনামে দেশদ্রোহী হিসেবে কারাদন্ড ভোগ করতে হয়েছে।
একুশে টেলিভিশনকে একান্ত সাক্ষাতকারে বিচারপতি সৈয়দ আসিফ তুলে ধরেন কারান্তরীণ নির্যাতনের সেই ভয়াবহতা।
তিনি বলেন, “সেদিনের নির্যাতনের কথা মনে পড়লে এখনো দুঃস্বপ্নের মতো শিউরে উঠি। পুলিশের নির্যাতনে আমি একা হয়ে পড়েছিলাম সেই চর্চার সেলে।”
বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়েও ভুলে যাননি বাংলাদেশকে। মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের ভূমিকে সেজদা করেছেন পরম মমতায়।
তিনি বলেন, “তখন সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম পাকিস্তানি জনগনের কাছে। আমি তাদের কাছে দেশদ্রোহী হিসেবে ঘৃণিত হয়েছিলাম। আমাকে মুক্তিবাহিনীর এজেন্ট বলা হয়েছিলো। এটা ছিলো আমার প্রতি চূড়ান্ত শান্তির মাত্রা।”
তার মতে, পাকিস্তানের রাজনীতিক কিংবা সামরিক শাসকরা বাঙালীর মানবাধিকার হরণের মাধ্যমে ইতিহাসে ট্রাজেডির পটভূমি তৈরি করেছিলো।
তিনি বলেন, “যখন আমি ঢাকায় পা রাখলাম, বাংলাদেশের মাটিকে মাথা নত করে সম্মান জানিয়েছি। সেজদা দিয়েছিলাম। এটা তো শহীদের ভূমি, এটা তো মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমি । সম্মানিত বোধ করেছিলাম। তাই এই মাটিতেই সমাহিত হতে চাই, এটাই আমার ইচ্ছা।”
তিনি আরও বলেন, ” পাকিস্তানী রাজনীতিক ও সামরিক শাসকরা কখনও বাঙ্গালীদের হাতে ক্ষমতা দিতে চায়নি। পাকিস্তানের জনগনকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিলো। তারা অভিযোগ করেছিলো যে বাঙালীরা পাকিস্তানী নয়, তারা দেশদ্রোহী। তারা ভারতের এজেন্ট।”
তিনি বলেন, এটি ইতিহাসের বড় ট্রাজেডি ছিলো যে সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠদের দেশদ্রোহী বলতো ।
বলেন, “আমি তাদের (পাকিস্তানকে) বলেছি- তোমাদের বাংলাদেশের কাছে ফিরে যাও। অনুসরণ করো এবং গ্রহণ করো তোমাদের নায়ক এবং অগ্রজ হিসেবে। তোমাদের যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা অন্য কোথাও যেতে হবে না। অগ্রগতি এবং উন্নয়নের জন্য তোমরা বাংলাদেশের নেতৃত্ব অনুসরণ করো ।”
২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই যুদ্ধবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করে। মানুষের ভালোবাসা এবং সম্মান তাকে আপন করেছে। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বিবেচনায় নাগরিকত্বের সুযোগ চেয়েছেন।
আমৃত্যু বাংলাদেশের জন্য কাজ করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সৈয়দ আসিফ। বলেছেন, “একজন বিদেশি কিংবা পর্যটক হিসেবে আমি বাংলাদেশে আসতে চাই না। আমি আসতে চাই বাংলাদেশি পরিচয় নিয়ে। এবং আমি এখানে বসবাস করতে চাই। জনগনের জীবনযাত্রায় অংশ হতে চাই। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার চিঠি পড়ে আমার ইচ্ছাকে। ”
Leave a Reply