অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দূর দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা।
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও দেখা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসকের। এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হতে হচ্ছে তাদের। কাগজে কলমে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে বেড রয়েছে মাত্র ৩১টি। হাসপাতালটিতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৩০-৩১ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জন রোগী। রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এমন একটি হাসপাতালে ২১ জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ৩ জন। খালি রয়েছে ১৮ টি পদ। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে আরো ২৯ টি পদ খালি রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের এ হাসপাতালে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে ৩ জন মেডিকেল অফিসার রয়েছে। বাকী ১৮ টি পদ শুন্য রয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন মেডিকেল অফিসার, একজন গাইনী কনসালটেন্ট, একজন মেডিসিন কনসালটেন্ট, একজন এ্যানেসতেশিয়া কনসালটেন্ট, এজন ডেন্টাল কনসালটেন্ট, একজন ইউএইচএফপিওসহ মোট ১৮টি পদ খালি রয়েছে।
এছাড়াও ২য় শ্রেণীর নার্স পদে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখা রয়েছে ৩০ জন। এর মধ্যে রয়েছেন ২৮ জন। এ পদে খালি রয়েছে আরো ২ জন। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণীতে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা রয়েছে মোট ১৪২ জন। এর মধ্যে রয়েছেন ১২২ জন। এ পদে খালি রয়েছে এখনো ২০ জন। চতুর্থ শ্রেণীতে মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে মোট ১৯ জন। রয়েছেন ১২ জন। এ পদে খালি রয়েছে আরো ৭ জন।
সরজমিনে সদর হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ লাইন থাকলেও অনেকেই তাদের কাঙ্খিত ডাক্তরকে দেখাতে পারছেনন। যারা ডাক্তার দেখাতে পারছেন তারা খুশি। আর যারা পারছেন না তারা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
আশাশুনি উপজেলার ডুমুরপোতা গ্রামের বৃদ্ধ করিম গাজী জানান, প্রায় এক মাস ধরে হার্ট, ডায়াবেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এখানে ভর্তি রয়েছি। এখানে কোন সরকারী ওষুধ দেয়না, সব আমার বাইরে থেকে নিতে হয়। এ হাসপাতালে চিকিৎসক খুবই কম রয়েছে। ভালো চিকিৎসা হচ্ছেনা। রোগী আসলেই এখান থেকে চলে যায় অন্য হাসপাতালে।
একই উপজেলার সোতকনা গ্রামের শরিফুল ইসলামের স্ত্রী নুরজাহান জানান, এখানে ঠিকমত ডাক্তার থাকেনা। সকালে একবার ডাক্তার রাউন্ড দেয়। আর সারাদিন কোন ডাক্তার আসেনা। রাতে ৯য়টার পর একবার একজন ডাক্তার আসেন। তাও আবার ডাকলে আসেন। না ডাকলে আর আসেননা।
আশাশুনি উপজেলার শ্রীকলা গ্রামের মৃত আনসার গাজীর স্ত্রী বৃদ্ধা নজমোন বিবি জানান, এখানে ডাক্তার খুবই কম। সকালে একবার ডাক্তার আসে। আর সারা দিন কেউ আসেনা। আর এখানে যে খাবার দেয়া হয় তার মান তেমন ভালো না বলে জানান।
মানিকখালী গ্রামের গণি মোড়লের কন্যা ময়না খাতুন জানান, শরীরের নানা সমস্যা নিয়ে ভর্তি রয়েছি আজ তিন দিন হলো। গরীব মানুষ কম খরচের জন্য সরকারী হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এখানে এসে কোন লাভ হচ্ছেনা। ডাক্তার নেই। তার উপর এখানার পরীক্ষা নীরিক্ষার যন্ত্রপাতিও ভালো নেই। এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।
আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আশিকুর রহমান জানান, জনবল সংকটের কারনে রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে ১৩ জন মেডিকেল অফিসার, একজন গাইনী, একজন মেডিসিন ও একজন এ্যানেসতেশিয়া কনসালটেন্ট, একজন ডেন্টাল কনসালটেন্ট, একজন ইউএইচএফপিওসহ মোট ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র তিনজন মেডিকেল অফিসার। ইনডোর, আউট ডোর ও ইর্মাজেন্সি সবই এ তিনজনকে সামাল দিতে হচ্ছে। এতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। যা আমাদের জন্যও খুবই কষ্টকর। রোগীরাও পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা থেকে পাচ্ছেন না। আগে এখানে আলট্রসোনোসহ সব পরীক্ষা নীরিক্ষা হতো কিন্তু এখন জনবল সংকটের কারনে আগের মত হচ্ছেনা। এছাড়া নার্সসহ অন্যান্য পদেরও অনেক জনবল কম রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম জানান, উপজেলা সদরের এ হাসপাতালটিতে জনবল সংকেটর কারনে চিকিৎসা সেবা অনেক ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
Leave a Reply