অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : টাঙ্গাইল জেলায় দীর্ঘ ১১ বছর যাবত রমজান মাস জুড়ে বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করে আসছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রিবেণী।
টাঙ্গাইল শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রিবেণী’র উদ্যোগে বিনামূল্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ‘মাসব্যাপী সবার জন্য ইফতার’- এর আয়োজন করা হয়েছে।
ব্যতিক্রমী মহৎ উদ্যোগ ত্রিবেণী- টাঙ্গাইল এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাচ-১৯৯২।
প্রথম রমজান থেকে অসহায় গরীব কিংবা পথচারী- সবাইকে সেখানে প্রতিদিন বিনামূল্যে ইফতারি করানো হচ্ছে। প্রতিদিনের ইফতারির মেনুতে রয়েছে মুড়ি, খেজুর, পিয়াঁজু, বেগুনি, চপ, মুড়ি, জিলাপি, শসা, শরবতসহ বেশ কয়েকটি আইটেম। সপ্তাহে তিন দিন ইফতারিতে দেয়া হচ্ছে খিচুরি-মাংস।
প্রতিদিন ৩০০ জন রোজাদার এখানে ইফতার করছে। এতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সংগঠনের সদস্যদের নিজস্ব তহবিল থেকে এ খরচ বহন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে আসরের নামাজের পর দেখা যায়, ইফতারের সামগ্রী দিয়ে প্লেট সাজাচ্ছে ভলান্টিয়াররা । আর ইফতার করার জন্য সারিবদ্ধভাবে লোকজন বসে আছেন। কেউ স্কুলছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী, আবার অনেকেই ভ্যানচালক, রিকশাচালক, পথচারী, ভিক্ষুক-বেশিরভাগই অসহায় এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।
ইফতার করতে আসা শাহাদত হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে বিনামূল্যে প্রায়ই ইফতার করে থাকি। আমি দোয়া করি তারা যেন ভবিষ্যতে আরো বড় কল্যাণকর কাজ করতে পারে।
ভ্যান চালক মো. করিম জানান, তিনি শহরে ভ্যান চালান। ভ্যান চালিয়ে কোন মতে তার সংসার চলে। এ অবস্থায় উন্নতমানের ইফতার কিনে খাওয়ার সামর্থ তার নেই। তিনি ইফতার করতে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। শহীদ মিনারে উন্মুক্ত ইফতার মাহফিল দেখে সেখানে ইফতার করলেন।
পথচারী আজমত আলী প্রথম এখানে ইফতার করতে এসেছেন । ত্রিবেণীর এ উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান। তার মতো অনেক পথচারীও এখানে ইফতার করেছেন। তবে এখানে গরীব এবং দুস্থ লোকজনের সংখ্যা বেশি।
ইফতারের সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে রীতিমতো ভিড় লেগে যায়। শুধু গরীব ও অসহায়রা নন, টাঙ্গাইল শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জন্যও এখান থেকে বিনামূল্যে ইফতার দেওয়া হয়।
ইফতারে নিয়োজিত কর্মচারী এরশাদ মিয়া জানান, তারা ১৩ জন কর্মচারী এখানে কাজ করছেন। বিনামূল্যে ইফতার খাওয়ানোর কাজ করতে পেরে তারা নিজেদেরকে ভাগ্যবান এবং ধন্য মনে করেন। এখানে ধনী-গরীব সব শ্রেণির লোকই ইফতার করেন। রোজাদারদের জন্য রয়েছে বহু আইটেমের ইফতার সামগ্রী।
ইফতার করতে আসা পথচারীরা জানাই, হাতে সময় কম থাকায় রাস্তার পাশেই এমন আয়োজন দেখে তারা ইফতার করতে এসেছেন। ইফতার করে আমরা সন্তুষ্ট। আয়োজনদের কাছে দাবি গরীব ও অসহায়দের জন্য এমন আয়োজন প্রতিবছর যেন অব্যহত থাকে।
ত্রিবেণীর সদস্য সুকুমার ভট্টাচার্য জানান, এগার বছর ধরে রমজানে মাসে আমরা বিনামূল্যে সবার জন্য ইফতারের আয়োজন করে আসছি। করোনার কারণে ২০২১ এক বছর এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। প্রতিদিন ৩০০ রোজাদার মানুষ এখানে ইফতার করেন। মূলত পথচারী ও গরীব মানুষের জন্য এমন আয়োজন করা হয়ছে। টাঙ্গাইল শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও সদর থানার মোট ৬৫ জন সদস্যদের জন্যও এখান থেকে বিনামূল্যে ইফতার দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সপ্তাহের চারদিন সাধারণ ইফতারি বুট, মুড়ি, ছোলা, পিয়াজু, খেজুর, কলা, জিলাপি ও শরবত দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তিনদিন দেওয়া হচ্ছে খিচুরি মাংস।
ত্রিবেণীর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামিমুর রহমান বাবু বাসস কে জানান, এমন কাজ করতে আমাদের খুব ভালো লাগে। আগামীতে এ ধারা অব্যহত থাকবে। বৃত্তবানরা এবং বিভিন্ন সংগঠন যদি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাহলে দেশে সবাই পবিত্র রমজান মাসে ভালো ইফতার করার সুযোগ পাবে। এছাড়া ত্রিবেণীর পক্ষ থেকে বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মসজিদে সবারজন্য মাস ব্যাপী বিনামূল্যে কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ত্রিবেণী- টাঙ্গাইলের সভাপতি মমেনুর ইসলাম বাপ্পি বাসস কে জানান, প্রথমে ২০১৪ সালে আমরা ত্রিবেনীর উদ্যোগে এ ধরণের আয়োজন করেছিলাম। পরের বছর ২০১৭ সালে বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাচ-১৯৯২ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর থেকে আমরা এ দুই সংগঠন মিলে প্রতিবছর বিনামূল্যে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আসছি। ত্রিবেণীর ৬০ জন এবং এসএসসি ১৯৯২ ব্যাচের ৬০ জন মোট ১২০ জন সদস্যের আর্থিক সহযোগিতায় আমরা প্রতি বছর মাস ব্যাপী বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করে থাকি। এ বছর আমাদের মোট বাজেট ধরা হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। তিনি আরো জানান, তাদের সংগঠনের প্রতিটি সদস্যই স্বত:স্ফুর্তভাবে এ অর্থের যোগান দেন।