01 Oct 2024, 05:58 pm

মাগুরায় ৩৪ তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে আলোচনা সভা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি :  মাগুরায় ৩৪ তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২৪ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। “মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য: বিশ্বব্যাপী প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে দিবস পালন করা হয়। মঙ্গলবার ১ অক্টোবর সকাল ১০ টার সময় মাগুরা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষ চাঁদের হাট এ মাগুরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়য়ের সহযোগিতায় প্রবীণ দিবসের আলোচনা সভা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয় উপপরিচালক মোঃ জাকির হোসেন ও সঞ্চালনায় মাগুরা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ জাহিদুল আলম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, এডিসি আব্দুল কাদের, মাগুরা সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা ঝুমুর সরকার, মাগুরা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ বাবলুর রহমান।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মাগুরা জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন,  জাহিদ হোসেন, কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ, ইতিহাসবিদ ও সমাজসেবক ডাঃ তাসুকুজ্জামান, রোভা ফাউন্ডেশন ইডি কামরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরেশ কান্তি সাহা, এ্যাডভোকেট আহম্মেদ, প্রবীণ হিতৈষী সংঘ সাধারণ সম্পাদক মোঃ নওশের আলী, মাগুরা সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ডাঃ এম আর খান, মাগুরা সিভিল সার্জন ডাঃ শামীম কবির, জিকে আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজ সহকারী অধ্যাপক ও মাগুরা প্রবীণ হিতৈষী মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শাহানা ফেরদৌস হ্যাপি সহ প্রমুখ।

সূচনা: ওয়ার্ল্ড সিনিয়র সিটিজেনস ডে’ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান। তিনি ১৯ আগস্ট, ১৯৮৮ সালে  ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে এই দিনটির স্বীকৃতি দেন। ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯০ সালে জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদ (UNGA) ২১ আগস্টকে বিশ্ব প্রবীণ নাগরিক দিবস হিসাবে পালন করার ঘোষনা করে। তৎপরবর্তী সময়ে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৯১ সাল থেকেই আজকের দিনটি পৃথিবীর প্রতিটি দেশে প্রবীণ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

প্রবীণ দিবসের এই প্রতিপাদ্য বিষয়টি প্রবীণদের বঞ্চনা, বৈষম্য, অধিকারহীনতা, মর্যাদাহীনতা শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বেই তাদের এই দুরবস্থা কমবেশী বিদ্যমান। “সহনশীলতা” শুধু বিরূপতা ও প্রতিকূলতা সহ্য ও সমন্বয় করা নয়, এসব থেকে উত্তীর্ণ ও জয় করাকেও বোঝায়। প্রবীণদের জীবনে অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিকূল ও বিরূপতাকে সহ্য ও উত্তীর্ণ হওয়ার সক্ষমতা প্রয়োজন। এই সক্ষমতা অর্জনে নীতিগত, কৌশলগত ও কর্মসূচিগত সহায়তা অত্যন্ত জরুরী। প্রবীণদের অর্থনৈতিক সহনশীলতা, স্বাস্থ্য সহনশীলতা, চলাফেরার সহনশীলতা, অংশগ্রহন সহনশীলতা, আন্তঃপ্রজন্মগত সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ সহনশীলতা প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বিশেষ সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে প্রবীণদের সহনশীলতা বাড়াতে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী।

প্রবীণ কারা? আমাদের দেশে সাধারণত ষাটোর্ধ্ব বযদের মানুষকে প্রবীণ গণ্য করা হয়। প্রবীণদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার জন্য তাঁদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রবীণ দিবস পালনের উদ্দেশ্যে: যেকোনো দেশেই মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশজুড়ে থাকে প্রবীণ জনগোষ্ঠী। সব ব্যক্তিকেই বার্ধক্যের স্বাদ গ্রহন করতে হবে। তাই প্রবীণদের অবহেলা না করে তাদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষযে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টিই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। হজরত রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি একজন বয়োবৃদ্ধের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করবে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন তাকে কিয়ামতের দিন সব ভয়-ভীতি ও আশঙ্কা থেকে নিরাপদে রাখবেন বৃদ্ধদের শ্রদ্ধা সম্মান করা আর ছোটদের স্নেহ করা ইসলামি নৈতিকতার অন্যতম বিধান। যারা ইসলামের এ বিধান মেনে চলবে না, তারা অবশ্যই আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসাবে উপস্থিত হবে। বস্তুত ‘জ্ঞানীকে তার জ্ঞানের জন্য আর বৃদ্ধকে তার বয়সের জন্য শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে হবে।’ এটাই ইসলামের শিক্ষা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রবীণ ও নবীন মিলেই এ দুনিয়ার সমাজব্যবস্থা। যারা দুনিয়াতে আগে এসেছেন তারা পরবর্তীদের নিকট শ্রদ্ধাভাজন এবং প্রবীণ হিসাবে মর্যাদার অধিকারী। আর নবীনরা প্রবীণদের কাছে স্নেহভাজন এবং তাদের আদর-সোহাগ পাওয়ার অধিকারী। প্রবীণদের শ্রদ্ধা করা এবং নবীনদের স্নেহ করা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ আসলে মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া উচিত। এটা মহানবীর শিক্ষা। এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের সঙ্গে তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করো।” আবু দাউদ, এ কথা ঠিক, ধনী-গরিব, সৎ-অসৎ, ছোট-বড় সবাই আইনের দৃষ্টিতে সমান। আল্লাহর নির্ধারিত আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের কারও প্রতি সামান্যতম পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। কিন্তু সামাজিক আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাকওয়া-পরহেজগারি ও অন্যান্য বিশেষ পদমর্যাদার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। এ কথাকেই ‘পদমর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করো’ বাকো বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা হলো-সন্তানের অসহায়ত্বের সময় যেভাবে পিতা-মাতা তাকে স্নেহভরে সফরে প্রতিপালন করেন। পিতা-মাতার অসহায়ত্ব তথা বৃদ্ধাবস্থায় তাদের সেভাবে লালন-পালন করা সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা অমানবিক ও ইসলামবিবর্জিত কাজ। প্রবীণদের অধিকার, উন্নয়ন এবং সার্বিক কল্যাণে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

মাগুরা জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম বলেন, প্রবীণদের জন্য সবসময় মাগুরা জেলা প্রশাসকের দুয়ার খোলা থাকবে। তিনি আরও জানান, আপনারা সবাই বৃদ্ধ পিতা ও মাতাদের যত্ন ও সেবা করবেন।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2004
  • Total Visits: 1095016
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1639

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
  • ২৭শে রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৫:৫৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018