ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে শ্রীপুরের আমলশার গ্রামের আজাহার শেখের বাড়িতে একটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে।
মাগুরার শ্রীপুরের আমলসার গ্রামের আশরাফুল মণ্ডল। শুকনো মৌসুমে তার বাড়ির নলকূপে পানি না ওঠায় তিনি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি গভীর নলকূপের আবেদন করেন। বরাদ্দও পান। নিয়ম অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার কথা।
কিন্তু অফিসটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপাচাপিতে তাকে ১০ হাজার ৭০০ টাকা জমা দিতে হয়। এরপর ঠিকাদারের নেতৃত্বে শ্রমিকরা তার বাড়িতে গভীর নলকূপ বসাতে আসেন। তারপর যা শুরু হয় তার জন্য আশরাফুল মণ্ডল প্রস্তুত ছিলেন না।
নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নলকূপ বসাতে এসে শ্রমিকরা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন।
প্রথম দিকে সাতজন শ্রমিককে টানা ছয়দিন তিনবেলা খাবার খাওয়াতে হয়। পরে পাঁচ শ্রমিককে একবেলা খাওয়া ও ১৫০০ টাকা বকশিশ দিতে হয়। মানুষ খাবার খেতে চাইলে লজ্জার কারণে মানাও করা যায় না। তাদের খাওয়া ও বকশিশ বাবদ খরচ হয়েছে আরও ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে আমার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকারও বেশি।’
একই উপজেলার আড়ুয়াকান্দী গ্রামের আফজাল হোসেনও গভীর নলকূপের বরাদ্দ পেয়েছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের খাওয়া ও বকশিশ বাবদ তার আরও ৮ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘১০ হাজার টাকার নলকূপ বসাতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। নলকূপ থেকে বের হওয়া পানি দুর্গন্ধের কারণে ব্যবহার করতে পারছি না। কাজের মান ও নির্মাণ সামগ্রীও ছিল খুবই নিম্নমানের।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মুহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলায় নিরাপদ পানি ‘সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প’র আওতায় ৬৬টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী সরকারিভাবে ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার মাধ্যমে নলকূপের বরাদ্দ পাওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, দপ্তরটির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আবেদনের সময় ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দিতে হয়। এরপর শ্রমিকদের খাওয়া-বকশিশ বাবদ খরচ হয় আরও অন্তত ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার নলকূপ বসাতে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির জেলা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে জনস্বাস্থ্যের জেলা পর্যায়ের এই কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পরামর্শ দেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান মাহমুদ অমির যোগসাজশে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক রাজু আহমেদ প্রতিটি নলকূপের আবেদনকারীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন। এ ছাড়া বিগত সময়ের সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের আমলে বরাদ্দ দেওয়া নলকূপ নিয়েও ওই দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি করেছিলেন বলে দাবি করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান মাহমুদ অমি বলেন, ‘গভীর নলকূপ বাবদ ১০ হাজার টাকার বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুরুর দিকে ঠিকাদার আমাদের না জানিয়ে নিম্নমানের কিছু কাজ করেছিল। খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে মৌখিকভাবে নোটিশ দিয়েছি। শিগগিরই লিখিত নোটিশ দেওয়া হবে। আমরা এরই মধ্যে নিম্নমানের কাজগুলো বন্ধ করে দিয়েছি।’
শ্রমিকদের খাবার দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১০ হাজার টাকা ছাড়া অন্য কোনো খরচের নিয়ম নেই। এ ছাড়া শ্রমিকদের খাবারের পেছনে এত অর্থ ব্যয় হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ কখনো আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেননি।’ শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাখী ব্যানার্জী বলেন, ‘আমি আসার পর কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে যে কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে সেটি যদি আমার এখতিয়ারের মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকেন।’ নলকূপ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পরামর্শ দেন।
Leave a Reply