17 May 2024, 10:28 am

‘ম্যাঙ্গোপঞ্জি’ প্রকাশের পর রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ‘ম্যাঙ্গোপঞ্জি’ প্রকাশের পর রাজশাহীর বাগান থেকে সীমিত আকারে আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিন বাজারে পাকা আমের দেখা মেলেনি। যদিও উৎসবের আমেজে রাজশাহীতে আম পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলার চাষিরা গুটি আম পেড়েছেন কিছুটা। তবে তারা বাজারে তোলেন নি। এদিন হাতেগোনা দু-একটি বাগানের আম নামাতেও দেখা গেছে। ফলে রাজশাহীর বৃহত্তম বাজার বানেশ্বরে এখনো আম ওঠেনি।

এরই মধ্যে আম পাড়া জাল, জালতা, টুকরি ও ক্যারেট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। গাছে উঠে আমও পাড়ছেন কর্মচারীরা। সেখান থেকে আম নামিয়ে প্যাকিং করা হচ্ছে। শুরুতে গুটি  ও কাচামিষ্টি জাতের আম নামাচ্ছেন তারা। প্রথম আম নামানোর কারণে বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। বাগানে এখন প্রতি কেজি আমের দাম ধরা হয়েছে ১২০ টাকা।

স্থানীয় আম চাষিরা জানান, গাছে আম বড় হয়েছে। তবে এখনো পাক ধরেনি। এখন গাছ থেকে বেছে বেছে আম পাড়তে হচ্ছে। আমের বাজার জমতে আরও দেড় সপ্তাহ সময় লাগবে। ঝড় বৃষ্টির ক্ষতি না হলে এবার ভালো লাভ হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, রাজশাহী জেলায় এবার ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এসব গাছে দুই লাখ ৫৮ হাজার টন আম উৎপাদন হবে। এসব আমের বাজার হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে বিদেশে আম রফতানির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এবার রাজশাহী থেকে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার আম রফতারির টার্গেট নেওয়া হয়েছে। তাই গাছে গাছে চলছে আমের ফ্রুটব্যাগিং।

রাজশাহীর আম খুবই সুমিষ্ট হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর চাহিদাও ব্যাপক। প্রতি বছরই এখানকার ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদন করা আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রফতানী করা হয়। যা থেকে আয় হয় বৈদেশিক মুদ্রা। এবারও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে কয়েকগুণ বেশি আম উৎপাদন করা হচ্ছে। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আমগুলো বিদেশের বাজারে বিক্রি করা গেলে এ বছর আয় হবে সবমিলিয়ে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।

রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদনে শীর্ষে বাঘা উপজেলা। বাঘায় জেলার এক তৃতীয়াংশ আম উৎপাদন হয়ে থাকে। খুব সুমিষ্ট হওয়ায় এ উপজেলার আমের বিদেশেও চাহিদা রয়েছে। গেল বছর এই উপজেলা থেকে ৩৬ মেট্রিক টন আম রফতানি করা হয়েছে সাত থেকে ১০টি দেশে। এ বছরও আম রফতানিতে ঝুঁকছেন তারা। এ বছর শুধু বাঘা উপজেলা থেকে ২০০ ও অন্যান্য স্থান থেকে আরো ১০০ মিলে ৩০০ মেট্রিক টন আম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, এ বছর বাঘায় প্রায় ৭২০ মেট্রিক টন আম রফতানির লক্ষ্যে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদন করছেন চাষিরা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সেগুলো রফতানির করা হবে। তবে শুধু বাঘাতেই নয়, বিদেশে রফতানির লক্ষ্যে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি অনুসরণ করে আম উৎপাদন করছেন রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়ার শান্তিবাগ এলাকার চাষি আনোয়ারুল হক। তিনি ইতিমধ্যে গাছে গাছে ফ্রুটব্যাগিং শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, ফ্রুট ব্যাগগুলো চীন থেকে আমদানি করা হয়। ব্যাগ প্রতিটি আমে পরানো মিলে খরচ হয় ৫ টাকা করে। এর মধ্যে একজন শ্রমিককে প্রতি ব্যাগে এক টাকা করে দিতে হয়। শ্রমিকরা সব আমে ব্যাগ পরান না। যে আমগুলো আকারে বড় বা দেখতে সুন্দর সেই আমগুলোতে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়। এই পদ্ধতিতে শতভাগ বিষমুক্ত আম পাওয়া যায়।

আনোয়ারুল হক বলেন, বাগান থেকে পর্যায়ক্রমে গোপাল ভোগ, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম রফতানি করা হয়। এসব আম ইংল্যান্ড, সুইডেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়। এ বছর প্রথম জেদ্দা, ওমান ও সিঙ্গাপুরে আম পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে বিদেশে আম রফতানি হচ্ছে তার। প্রথম বছরে ১০ মেট্রিক টন, পরের বছর ৭ মেট্রিক টন করে, ২০১৯ সালে ১০ মেট্রিক টন, ২০২০ সালে ৫ মেট্রিক টন, ২০২১ সালে করোনার শেষ পর্যায়ে ১২ মেট্রিক টন ও সর্বশেষ ২০২২ সালে ১৫ মেট্রিক টন আম রফতানি করেন। এ বছর তিনি নিজের বাগানের  ৩০ মেট্রিক টন রফতানির প্রস্তুতি নিয়েছেন।

আমচাষি আনোয়ারুল হক বলেন, এবার তিনি ও তার গ্রুপ অন্তত ১০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানীর প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতিমধ্যে ফ্রুটব্যাগিং শুরু করেছেন। তিনি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের আম রফতানীকারক গ্রুপ ‘রাজচাপাই এগ্রো ফুড প্রডিওসার থেকে ১০০ মেট্রিকটন আম রফতানির প্রস্তুতি নিয়েছেন।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রাজশাহী-চাঁপাইয়ের আম খুবই সুমিষ্ট। দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রাজশাহীর বাঘা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অনেকেই বিদেশে আম রফতানি করে থাকেন। এটি অনেক ভালো উদ্যোগ। বাংলাদেশের আম বিদেশে যাচ্ছে। সেই দেশের মানুষ বাংলাদেশকে চিনছে। একই সঙ্গে আমাদের বিদেশি মুদ্রা অর্জন হচ্ছে আম বিক্রি করে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন,  এ বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আম গাছ রয়েছে। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। এবার বাগান বেড়েছে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5692
  • Total Visits: 738394
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1126

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ ইং
  • ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ৮ই জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১০:২৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018