অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে আগামী এক বছরের মধ্যে ইসরায়েলের ‘অবৈধ উপস্থিতি’ বন্ধ এবং দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিস্তিন। এই প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এই প্রস্তাব ১৯৩ সদস্যের এসেম্বলিতে ভোটের জন্য উত্থাপন করা হবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকী নিকটে আসতে থাকায় এবং পশ্চিম তীরে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দিচ্ছে জাতিসংঘ।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে।
এদিকে সদস্য দেশগুলোকে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, এটি ‘কূটনৈতিক সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার চেষ্টা’ ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রস্তাব ‘সত্যকে উপেক্ষা করে, ঘটনাকে বিকৃত করে এবং বাস্তবতার বদলে কল্পকাহিনী তুলে ধরেছে।’
ড্যানন আরও বলেন, ‘হামাস ৭ অক্টোবর যে ধর্ষণ ও গণহত্যা চালিয়েছে তার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাবের পরিবর্তে, আমরা এখানে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনিদের সার্কাস দেখতে জড়ো হয়েছি- যে সার্কাসে মন্দকে ন্যায়সঙ্গত, যুদ্ধকে শান্তি, হত্যাকারীকে নির্দোষ এবং সন্ত্রাসের প্রশংসা করা হয়।’
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এই প্রস্তাব এ অঞ্চলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না, বরং পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। শান্তি ও অগ্রগতির আশাকে বিলম্বিত করবে।
সাধারণ পরিষদে গৃহীত হলেও প্রস্তাবটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে না। তবে এর সমর্থন বিশ্ববাসী কি চায় সেই জনমত প্রকাশ করবে। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের মতো এই পরিষদে কোন ভেটো নেই।
এর আগে গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত এক রায়ে বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের উপস্থিতি অবৈধ এবং অবশ্যই এর অবসান ঘটাতে হবে।
১৯৬৭ সালে যুদ্ধের সময় দখল করা জমির ওপর ইসরায়েলের শাসনের ব্যাপক নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত বলেন, এই এলাকাগুলোর ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের কোনো অধিকার নেই। বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনিরা ‘অস্তিত্বের হুমকির’ মুখোমুখি উল্লেখ করে সাধারণ পরিষদের বৈঠকের শুরুতে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ইসরায়েল তাদের ‘শেকলে’ বদ্ধ করে রেখেছে। ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান এবং ফিলিস্তিনিদের ‘মর্যাদা, শান্তি ও নিরাপত্তার’ সঙ্গে নিজেদের পূর্বপুরুষের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা মনে করে ফিলিস্তিনি জনগণ দাসত্বের জীবন, বর্ণবাদের জীবন মেনে নেবে, তারাই বাস্তববাদী নয়। ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান ছাড়া আমাদের অঞ্চলে শান্তি সম্ভব বলে যারা দাবি করে, তারা বাস্তববাদী নয়।’
প্রস্তাবে ইসরাইলকে তার সেনা প্রত্যাহার, অবিলম্বে নতুন সব বসতি নির্মাণ বন্ধ এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সব বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়াও ইসরায়েলকে তার দখলদারিত্বের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাণিজ্য বা বিনিয়োগ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে এবং ‘বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতাসহ’ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবটি প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস বলেন, প্রস্তাবে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে৷ এটি আইসিজের নিয়মনীতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। এছাড়াও গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন’ এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের বিষয়টি এই প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য বাস্তব সুফল বয়ে আনবে না বলে আমরা মনে করছি। এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। সংঘাত অবসানে যেসব চেষ্টা চলছে সেগুলো জটিল করে তুলতে পারে। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আমি মনে করি।’
রিয়াদ মনসুর বলেন, প্রাথমিক খসড়ায় ছয় মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর দাবি জানানো হলেও কিছু দেশের উদ্বেগের কারণে সময় বাড়িয়ে এক বছরের কথা বলা হয়েছে।
মনসুর আরও বলেন, এই প্রস্তাবটির লক্ষ্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় পাওয়া যদিও তা আইনত বাধ্যতামূলক নয়।
ইসরায়েল এই প্রস্তাবে গুরুত্ব নাও দিতে পারে মনে করছেন মনসুর। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিরা তখন আরেকটি প্রস্তাব জমা দেবে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য এই তিনটি ভূমিই চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই তিনটি এলাকাকেই দখলকৃত ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
Leave a Reply