অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বিশ্বের ইহুদিদের নিরাপত্তা দেওয়ার যে দাবি করে আসছে দখলদার ইসরাইল তা ফুটো হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামীদের আল-আকসা তুফান অভিযানের মধ্যদিয়ে। নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে সারা বিশ্ব থেকে ইহুদিদেরকে দখলকৃত ভূখণ্ডে জড়ো করার প্রজেক্টটি যে অত্যন্ত দুর্বল এবং এটা যে একটা ভুল প্রজেক্ট তা আল-আকসা তুফান অভিযানের ফলে সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ইহুদিদেরকে আকৃষ্ট করার সব ভুলভাল অকেজো হয়ে পড়েছে।
আল-জায়তুনা স্টাডি সেন্টার আল-আকসা তুফান অভিযানে ইহুদিবাদীদের পরাজয়ের কৌশলগত দিকগুলো তুলে ধরেছে। ইসরাইলের নিরাপত্তা বলয় নিশ্ছিদ্র এমন ধারণা বা তত্ত্ব আল-আকসা তুফান অভিযানের মাধ্যমে পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করা হয়েছে। পার্সটুডে বলছে, আল-আকসা তুফান সবার কাছে এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে, দখলদার ইসরাইল কখনোই ইহুদিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল নয়।
ইহুদিবাদী ইসরাইল নিরাপত্তাকে তাদের একটি মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই স্তম্ভটার নড়বড়ে অবস্থাটা এখন স্পষ্ট। নিরাপত্তা ইস্যুতে ইসরাইলের প্রতি ইহুদিদের আকর্ষণ অনেক কমে গেছে। শুধু তাই নয়, দখলদার ইসরাইলে এখন যারা বসবাস করছে তারাও সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে।
আল-জায়তুনা স্টাডি সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সামনে ইসরাইলের ব্যর্থতার ফলে এই অঞ্চলে পশ্চিমা ও মার্কিন নীতি বাস্তবায়নে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ওপর ঐসব দেশে আস্থা ও আশা নষ্ট হয়ে গেছে। একই কারণে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রকল্পও স্থবির হয়ে পড়েছে এবং গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নৃশংসতার পর বিভিন্ন দেশের শাসক গোষ্ঠী এই প্রকল্প থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে।
আল-আকসা তুফান অভিযান ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব নিয়ে বিদ্যমান সন্দেহ সুদৃঢ় করেছ। এ কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টসহ অনেক ইহুদিবাদী গাজা যুদ্ধকে ইসরাইলের জন্য অস্তিত্বের যুদ্ধ বলে মনে করেন। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিদের আল-আকসা তুফান অভিযানের সাফল্য আরব ও মুসলিম জাতিগুলোকে অধিকৃত ভূখণ্ড মুক্ত করার বিষয়ে আশাবাদী করে তুলেছে এবং গোটা বিশ্বই দখলদার ইসরাইলের দুর্বল অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
আল-জায়তুনা স্টাডি সেন্টার জানিয়েছে- আল-আকসা তুফান অভিযান আবারও ফিলিস্তিনসহ গোটা আরব বিশ্ব এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে আল-আকসা মসজিদ ও বায়তুল মুকাদ্দাসের গুরুত্ব পুনরুজ্জীবিত করেছে। এই অভিযান দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের বৈধতার ভিত্তি মজবুত করেছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এটিকে একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সবাই বুঝতে পেরেছে ইসরাইলের সঙ্গে আপোষ নয় বরং প্রতিরোধের মাধ্যমেই বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
ইতিমধ্যে গাজার উপর চরম বর্বরতা ও গণহত্যা ইহুদিবাদী ইসরাইলকে বিশ্বজুড়ে একটি ঘৃণ্য এবং বিচ্ছিন্ন সরকারে পরিণত করেছে। একইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিশেষকরে পশ্চিমা যুব সমাজের মধ্যেও ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বেড়েছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইল হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইহুদিবাদী বন্দীদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে। তবে ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক হামলা চালানোর পরও একটি লক্ষ্যও হাসিল করতে পারে নি। তারা হাসপাতাল ও স্কুলসহ গাজা উপত্যকার প্রায় সব অবকাঠামো ধ্বংস করার পরেও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো সাথে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে গাজা থেকে বন্দীদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
Leave a Reply