অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দেশের ৫০টি জেলায় ১০০ মহাসড়ক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব মহাসড়কের উন্নয়ন এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের এসব সড়কের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ২১ কিলোমিটার।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব মহাসড়ক উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উন্নয়নকৃত মহাসড়কের মধ্যে খুলনা বিভাগে ৩৫২.২৬ কিলোমিটার, ঢাকা বিভাগে ৬৫৩.৬৬ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫৮.৯০ কিলোমিটার, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪২.৪৮ কিলোমিটার, সিলেট বিভাগে ১০৬.১৮ কিলোমিটার, বরিশাল বিভাগে ১০৭.২৬ কিলোমিটার, রাজশাহী বিভাগে ১৯৬.৮৭ কিলোমিটার এবং রংপুর বিভাগে ২০৩.৯৫ কিলোমিটার মহাসড়ক অবস্থিত।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে সড়কগুলো চালুর জন্য ২১ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) গত কয়েক বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব সড়কের নির্মাণ, উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ করেছে। যার মাধ্যমে এ বারই প্রথম একসঙ্গে ১০০টি রাস্তা উদ্বোধন করতে যাচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, সারাদেশে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে। এরমধ্যে তিন হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, চার হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৮৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ২১ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেছেন, গত মাসে একদিনে ১০০টি নতুন সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন একদিনে ১০০টি রাস্তা উদ্বোধন করা হবে। নিরাপদ সড়ক করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এজন্য রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের যোগযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করতে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এসব সড়ক চালু হলে এক দিকে সড়কে দুঘর্টনা কমে আসবে অন্য দিকে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের আঞ্চলিক বা জাতীয় মহাসড়কও রয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপদ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল করা সরকারের লক্ষ্য। নিরাপদ সড়ক পরিবহনব্যবস্থার লক্ষ্যে উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে টেকসই মহাসড়ক অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায় সরকার। পরিবহন সেবা ও ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের মাধ্যমে সমন্বিত নগর গণপরিবহনণসহ নিরাপদ সড়ক পরিবহনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবহন খাতে সুশাসনমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন জোরদার করতে চায় সরকার।
সওজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রক্ষণাবেক্ষণ বা পুনর্নিমাণের অধীনে থাকা রাস্তাগুলো বাদ দিয়ে এ বছর ২০ হাজার ৭২ কিলোমিটার (৮৯ দশমিক ৫০ শতাংশ) রাস্তার জরিপ করা হয়েছে। এই জরিপে এক হাজার ১২৮ কিলোমিটার (৫ দশমিক ৬২ শতাংশ) রাস্তার খারাপ অবস্থা, ৪৯৩ কিলোমিটার (২ দশমিক ৪৬ শতাংশ) বেশি খারাপ অবস্থায় এবং ৪৫৭ কিলোমিটার (২ দশমিক ২৮ শতাংশ) অতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বাকি ৮৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ রাস্তা (ভালো) অবস্থায় পাওয়া গেছে। রাস্তার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে রাস্তাগুলোকে পাঁচটি ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করেছে সওজ। জাতীয় মহাসড়ক রাজধানীকে বিভাগীয় শহর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর এবং আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করে। আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো জেলা শহরগুলোকে নদীবন্দর এবং স্থলবন্দরের সাথে সংযুক্ত করে। জেলা সড়কগুলো জেলা শহরকে উপজেলা বা এক উপজেলার সাথে অন্য উপজেলাকে সংযুক্ত করে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে সেই রাস্তাগুলোর বেশিরভাগই ৫.৫ মিটার বা তার বেশি প্রশস্ত করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজের ফলে এসব সড়কের স্থায়িত্ব ও মজবুত হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একে এম মনির হোসেন পাঠান জানিয়েছেন, ১০০টি রাস্তা যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলে রাজধানী থেকে জেলার যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। নতুন সড়কগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক বা জাতীয় মহাসড়কও রয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, গত তিন বছরে এসব সড়কের বেশিরভাগ ভৌত কাজ করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজের আগে, অনেক রাস্তা মাত্র ৩.৫ মিটার চওড়া ছিলো, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছিলো। এখন দুর্ঘটনা কমে আসবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ওই দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অন্যতম ধারা। এর ফলে সড়ক যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
Leave a Reply