অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আমের রাজধানীখ্যাত উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে এ জেলার সুমিষ্ট আমের কদর। তবে স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে অতুলনীয় হলেও আম রপ্তানিতে এখন পর্যন্ত মেলেনি কাক্সিক্ষত সাফল্য। বেসরকারি পর্যায়ে কিছু উদ্যোগ থাকলেও বড় পরিসরে রপ্তানির সুযোগ হয়নি এ আঞ্চলের কৃষকের। এমন প্রেক্ষাপটে জেলাটিতে প্রথমবারের সরকারিভাবে চালু হওয়া ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ আশা দেখাচ্ছে চাষিদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আমের উৎপাদন বেশি হলেও কাক্সিক্ষত মূল্য না পেয়ে হতাশায় পড়েন চাষিরা। ফলস্বরূপ বাগানের পুরোনো আমগাছ কেটে ফেলছেন তারা। নিরাপদ আম উৎপাদন করেও রপ্তানি করতে না পেরে প্রতিবছর লোকসানের মুখে পড়েন হাজারও আমচাষি। তবে এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে চালু হওয়া সরকারি প্রকল্পে মিলবে আম রপ্তানির নিশ্চয়তা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রকল্পের আওতায় উত্তম কৃষিচর্চা (গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস বা গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আম উৎপাদন করা হচ্ছে। পুরো জেলায় ২০১ জন চাষি প্রকল্পটিতে জড়িত আছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪১ জন, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৬৪ জন, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৩২ জন, নাচোল উপজেলায় ৩৫ জন এবং ভোলাহাট উপজেলায় এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ২৯ জন চাষি। ইতোমধ্যে এসব আমচাষির সার, কীটনাশক, ফ্র্রুুট ব্যাগ, নগদ অর্থ প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সদর উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার। তিনি চাঁপাই-পালশা এলাকায় রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের সহায়তায় আম চাষাবাদ করছেন। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই গতানুগতিক আম চাষাবাদ করে আসছি। এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে বালাইনাশক কম স্প্রে করে আম চাষাবাদ করছি। নতুন পদ্ধতিতে আম চাষাবাদ করে ভালো ফলন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশে আম রপ্তানি করতে গেলে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
যেহেতু সরকারিভাবে এ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে, আশা করা যাচ্ছে এবার বিদেশে আম পাঠাতে আর সমস্যা হবে না। বিপ্লব নামে আরেক আমচাষি জানান, নিরাপদ আম উৎপাদন করতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা যেভাবে বাগান পরিচর্যা করতে বলেছেন, সেভাবে বাগান দেখভাল করা হচ্ছে। আমেরও ভালো ফলন হয়েছে। উদ্যোগটি কার্যকর করতে কৃষি উদ্যোক্তাদের আরও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে বলে মত দিয়েছেন জেলা কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুঞ্জের আলম মানিক। তিনি বলেন, এতে করে উদ্যোক্তাদের কাক্সিক্ষত দামে আম বিক্রি করা সম্ভব হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, চলতি বছরই রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০১ জন আমচাষি রয়েছেন। এদের সবাইকে একটি করে প্রদর্শনীসহ প্রশিক্ষণ, সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ফ্রুট ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষকরা নতুন পদ্ধতিতে আম চাষাবাদ করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, জেলায় রপ্তানিকারকদের আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিগত বছরগুলো থেকে এবার সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকারক এসেছে এ জেলায়। আশা করছি এবার বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি আম রপ্তানি করতে পারবেন চাষিরা। আমাদের নির্ধারিত আম বাগানগুলো নিয়মিত মনিটরিং করছে। এসব আম রপ্তানির নিশ্চয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশে আম রপ্তানিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি রয়েছে এবার। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই এবার এ জেলার আম বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে।
Leave a Reply