অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী উচ্চমাত্রার এ সমস্যাকে এক নম্বর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে অদক্ষ আমলাতন্ত্র। প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী এটি মনে করেন। আর তৃতীয় বড় সমস্যা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতার বিষয়টিকে মনে করেন ৪৬ শতাংশ ব্যবসায়ী। তাদের মতে, সব ধরনের সেবা প্রাপ্তিতে বৈষম্য রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতাকেও দায়ী করেছেন তারা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তার সঙ্গে ছিলেন গবেষণা সহযোগী নিশাত তাসনিম আনিকা ও জেবুন্নেসা। এ সময় দেশে দুর্নীতি বন্ধে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে একজন করে ন্যয়পাল (পার্লামেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত কমিশনার বা কর্মকর্তা) নিয়োগের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭টি সমস্যা চিহ্নিত করেছে সিপিডি। শীর্ষ তিনটি ছাড়া অন্য সমস্যাগুলো হলো—অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, জটিল কর নীতি, বারবার নীতি পরিবর্তন, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, উদ্ভাবনের সক্ষমতায় ঘাটতি, শ্রমশক্তিতে দুর্বল নৈতিকতা, উচ্চ করহার, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অস্থিতিশীলতা, অপরাধ ও চুরি, সীমাবদ্ধ শ্রমনীতি ও দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা।
অনুষ্ঠানে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত ৬ বছরে ঘুষ পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন দেখেননি ব্যবসায়ীরা। পাবলিক কন্টাক্ট, ট্যাক্স পেমেন্ট, আমদানি-রপ্তানি ও বিচার ব্যবস্থায় ঘুষ দিতে হয়েছে। দেশের ট্যাক্স কাঠামো পরিবেশবান্ধব নয় বলে মনে করেন তারা।
পাশাপাশি অর্থ পাচার ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ। ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন এখনও ২৩% কর ফাঁকি হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করতে ভারতের আধার কার্ডের মতো কার্ডের মাধ্যমে সমন্বিত লেনদেন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে জরিপটি করেছে সিপিডি। জরিপে ৪৭ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট তুলে দিলে বিদ্যুৎ খাতে সাবসিডি প্রেসার থাকবে না। এছাড়া জরিপে অংশ নিয়ে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে ব্যবসার বড় বাধা ঘুষ।
জরিপে আরও উঠে এসেছে, ব্যবসার সব সূচকেই এশিয়ার প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি একটি পরিষেবা সংযোগ নিতে আবেদন করলে তাঁর কাছে যে পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, তা তাঁর পরিকল্পিত বিনিয়োগের সমপরিমাণ। বড় ব্যবসায়ীরা কোনো না কোনোভাবে ঘুষ-দুর্নীতি সামলে নিতে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে এটি বড় সমস্যা।
তার মতে, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক শীর্ষ পর্যায়ে সদিচ্ছার প্রতিফলন আছে। নির্বাচনী ইশতেহারেও অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর বাস্তবায়ন দরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তলানিতে আছে। ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায়ও বেশ পিছিয়ে আছে দেশটি।
ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি করতে সিপিডি ১০টি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতিতে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের ১০০ দিন, ১ বছর, ৩ বছর ও ৫ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; ন্যায়পাল কার্যালয় স্থাপন; সীমিত সময়ের জন্য খাতভিত্তিক কিছু কমিশন গঠন, যেমন ব্যাংক, শেয়ারবাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার; একটি সমন্বিত আর্থিক লেনদেন খাত প্রতিষ্ঠা; সরকারি কেনাকাটা ব্যবস্থা আধুনিক করা ইত্যাদি।