অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশে একসময় উচ্চ রক্তচাপকে বয়স্কদের রোগ মনে করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সে ধারণা বদলে গেছে। ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর সবশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সী ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন যা ২০৩০ সাল নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে ৩ কোটি ৮০ লাখে। কিন্তু আক্রান্তদের ৬৭ শতাংশ জানে না যে, তাদের রোগটি রয়েছে।
বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনে এক জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন দেশে। প্রতি বছর নতুনভাবে ১৫ লাখ ৩০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২ বছর সময় বিবেচনা করলে দেখা যায় দেশে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে প্রায় সাত শতাংশের মতো।
দেশে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। এসব মৃত্যুর সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এটিই অকালমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষজ্ঞরা জানান, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্য সব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অকাল মৃত্যু দ্রুত কমানো সম্ভব। অথচ অর্ধেক মানুষ এ সম্পর্কে জানেই না। অসচেতনতার কারণেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
এমন পরিস্থিতিতে আজ ১৭ মে বুধবার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এবছর দিবসের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যগত সমস্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগটির নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। এজন্য উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃদপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জনের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা না হলে, এটি ধমনি এবং মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে।
অথচ, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই (৬৪ শতাংশ) কোনো ওষুধ সেবন করে না। ১৪ শতাংশ মানুষের রোগটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে ৭৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান বলেন, রক্তচাপ সাধারণত দুইটি মাত্রা বা সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। প্রথম সংখ্যাটি সিস্টোলিক, যা হৃদপিণ্ড সংকুচিত হয়ে রক্তনালীতে যে চাপ তৈরি হয় তার প্রতিনিধিত্ব করে। দ্বিতীয় সংখ্যাটি ডায়াস্টোলিক, যা হৃদপিণ্ডের প্রসারণের সময়ে রক্তনালীতে চাপের প্রতিনিধিত্ব করে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন, খাদ্যের সঙ্গে অতিরিক্ত লবন (সোডিয়াম) গ্রহণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এবং তামাক, অ্যালকোহল সেবন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে।
এমন অবস্থায় কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে রোগীর ঝুঁকি কমাতে উচ্চ রক্তচাপ মোকাবেলায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।