অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে নদী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র। একই সাথে নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার পস্তুত রাখা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান। তিনি বলেন, জেলার ৮ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে।
রাত সাড়ে ১২ টায় চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় “মোখা” র প্রভাবে চাঁদপুর -ঢাকা, চাঁদপুর নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর -বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চালের সাথে সকল ধরনের লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কতৃপক্ষ। আবহাওয়ার পরবর্তী সংবাদ ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে আমরা তাৎক্ষণিক যে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের তথ্য গণমাধ্যমকে প্রেরণ করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা কার্যালয় সমূহে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বরগুলো হচ্ছে-০১৭০০৭১৬৭০১, টেলিফোন নম্বর: ০২৩৩৪৪৮৭৫৯৬ অথবা ০২৩৩৪৪৮৭৪৭২।
কৃষি বিভাগকে বতর্মান মৌসুমে উৎপাদিত ফসল কাটা, স্বাস্থ্য বিভাগকে জরুরি মেডিকেল টিম গঠন এবং ওষুধ মজুদ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা ও জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসারকে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে সার্বিক দিক নির্দেশনা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগকে দুর্যোগ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উদ্ধার কাজে প্রস্তুত থাকর কথা বলা হয়। এছড়া ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেডক্রিসেন্ট, জেলা স্কাউট, জেলা রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ এনজিও প্রতিষ্ঠান সমূহকে দল প্রস্তুত রাখা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে মাইকিং করে সতকর্তামূলক প্রচারণার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও মজুদ রাখা হয়েছে ত্রাণ সামগ্রী। এর মধ্যে রয়েছে নগদ ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা, চাল ৫০৫.০০০ মেট্টিক টন, ডেউটিন ও গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরী ১০ বান্ডিল, শুকনো খাবার ১৯০ প্যাকেট এবং শীতবস্ত্র (কম্বল) ৩৮৪০ পিস।
চাঁদপুর জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ শাখার সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা সদরে ২৯টি, ফরিদগঞ্জে ৩১টি, হাইমচরে ২৪টি, হাজীগঞ্জে ৪৪টি, কচুয়ায় ৫১টি, মতলব উত্তরে ৬২টি, মতলব দক্ষিণে ৮৮টি, শাহরাস্তিতে ২৪টি আশ্রয়ণকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ১লাখ ১৪ হাজার ৫৬৭জন থাকার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে, চাঁদপুর পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া নদী উপকূলীয় এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং অব্যাহত রেখেছে কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন। একই সাথে শহর ও আশপাশে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সম্পর্কে সর্বসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স চাঁদপুর।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ের সতর্কতা বিষয়ে আমাদের নৌ অঞ্চলে মাইকিং করে প্রচারণা চলছে। চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলার যেসব থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি এবং করব। বিশেষ করে লঞ্চঘাট ও ছোট নৌযানগুলো নিরাপদে রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply