22 Dec 2024, 10:21 pm

ঝিনাইদহের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলছে লুটপাটের মহোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এম এ কবীর : ঝিনাইদহের বিভিন্ন সরকারী ও শায়ত্ত্বশাসিত দপ্তরে বেশুমার লুটপাট ধরা পড়লেও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি সাজা হয়নি। সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা দিয়ে দায়রা ভাবে অপরাধের শাস্তি দেয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্রিস্টাইলে সরকারী অর্থ আত্মসাতের প্রবণাতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বছর গুলোতে ঝিনাইদহের বেশ কয়েকটি দপ্তরে কোটি কোটি টাকা লোপাট হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য ও প্রমান মিলেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক শাখায় দুই কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়। কালীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের শতাধীক কৃষকের নামে ভূয়া কাগজ পত্র তৈরি ও মৃত ব্যক্তিদের নামে ঋণ উঠিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপক শৈলেন কুমার বিশ্বাস, ক্রেডিট অফিসার আব্দুস সালাম ও মাঠ সহকারী আজির আলীকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবানীপুর জনতা ব্যাংকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এনআইডি ব্যবহার করে ওই এলাকার শাতাধীক কৃষকের নামে ভৌতিক ঋণ দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। গত সেপ্টম্বর মাসে জনতা ব্যাংকের হেড অফিস থেকে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সরজমিন তদন্ত করে ঋণ জালিয়াতির সত্যতা পান। তবে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়ী ব্যাক্তিদের শাস্তির পরিবর্তে বদলী করা হয়। ভবানীপুর ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক জালিয়াতি চক্রের মুল হোতা ইউনুস আলী ও রুরাল ক্রেডিট অফিসার আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলে অভিযোগ। রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকের এই বেহাল দশার পর ঝিনাইদহ পৌরসভা ও শৈলকুপা পৌরসভায় ঘটেছে অর্থ তছরুপের ঘটনা। ঝিনাইদহ পৌরসভায় চেক জালিয়াতি করে ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রমান পান ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়ারুল ইসলাম।

মন্ত্রনালয়ে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে এ ঘটনায় সাবেক পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আজমল হোসেন ও হিসাব রক্ষক মকলেচুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। ঝিনাইদহ পৌরসভার চেক জালিয়াতির রেশ কাটতে না কাটতে শৈলকুপা পৌরসভায় ৫ বছরে পৌর কর ফান্ডে জমা না দিয়ে ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে কর আদায়কারী সাজ্জাদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ভাবে ঝিনাইদহের বিভিন্ন সরকারী ও শায়িত্তশাসিত দপ্তরে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা চলমান থাকলেও ধরা পড়ার নজীর খুবই কম। তদন্ত করলে অনেক সরকারী দপ্তরে লুটপাটের ভয়াবহ তথ্য মিলতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির ঝিনাইদহ সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ সায়েদুল আলম বলেন, মুলত যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোন দৃষ্টান্ত মূলক সাজা হয় না। তাই অনেক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজরা মনে করে সরকারী টাকা লুটপাট করলে পার পাওয়া যায়। তিনি বলেন প্রশাসনিক কঠোরাতাই পারে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, “পকেট আছে, পকেট মারও আছে”। যতদিন চুরির সুযোগ থাকবে, ততদিন চুরিও থাকবে। তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করেন, তারা তো একা করেন না। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই দুর্নীতি করেন বলে শাস্তি সাজা হয় না। সিস্টেম ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দেশে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব বলে আমিনুর রহমান টুকু মনে করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5888
  • Total Visits: 1411263
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২০শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:২১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018