অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নোয়াখালীর সুবর্ণচরের জাহাজমারা গ্রামে গৃহবধূ নূর জাহানকে (৫৮) পরিকল্পিতভাবে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় নিহতের ছেলে ও তার ৬ সহযোগিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ নিলুফার সুলতানা আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন জাহাজমারা গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে হুমায়ন কবির (২৯), একই গ্রামের মিলন মাঝির ছেলে নীরব (২৮), নূরে আলমের ছেলে কসাই নূর ইসলাম (২৮), দুলাল মাঝির ছেলে আবুল কালাম মামুন (২৮), হারুনের ছেলে মিলাদ হোসেন মামুন (২৮), মমিন উল্যার ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩৫) এবং মারফত উল্যার ছেলে হামিদ (৩৫)।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বুধবার বিকালে সুবর্ণচরের জাহাজমারা গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে নূর জাহান নামের ওই গৃহবধূর মৃতদেহের খণ্ডিত একটি অংশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আরও ৪টি খণ্ড উদ্ধার করে পুলিশ।
এর আগের দিন ৬ অক্টোবর রাতে খাওয়ার পর নিজের শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন নূর জাহান। ওই রাত সাড়ে ৯টা থেকে রাত ১২টার মধ্যের কোন একসময় হুমায়ন কবির তার ৬ সহযোগিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় নূর জাহানকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ি নিহতের মৃতদেহকে পাশ্ববর্তী একটি ধান ক্ষেতে নিয়ে প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা আলাদাসহ মোট ৫ টুকরা করে। পরে মৃতদেহের খণ্ডিত অংশগুলো ধান ক্ষেত ও একটি বিলের মধ্যে ফেলে দেয়। যা গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে ৫ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ন কবির বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে চরজব্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে ওই মামলার বাদি হুমায়নকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে।
পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশ হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন তদন্তকারি কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আদালত মোট ২৭ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। যেহেতু এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড সেহেতু সব আসামির মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় আমরা খুশি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, “আসামিরা সবাই বয়সে নবীন। যেহেতু পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেহেতু মৃত্যুদণ্ড রায়টি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
আসামিদের উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
Leave a Reply