18 May 2024, 11:21 pm

মেক্সিকোতে অদ্ভুত মমির সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গত বৃহস্পতিবার পুরো বিশ্বের সামনে এসেছে অদ্ভুত দুটি মমি। এই মমির চেহারা পৃথিবীতে বসবাসকারী কোনো প্রাণীর মতো নয়। মেক্সিকোর কংগ্রেসে বড় বড় রাজনীতিকদের সামনে মমি দুটি উপস্থাপন করেন জেইমি মওসান নামের এক সাংবাদিক। এই ঘটনার পর পরই বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে গেছে। মমিগুলো কী আসল? এগুলো কী সত্যিই ভিনগ্রহের কোনো প্রাণীর? এসব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।

জেইমি মওসানের দাবি, তিনি ওই আড়াই থেকে তিন ফুট উচ্চতার কঙ্কালগুলো পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে। পেরুর প্রাচীন নাজকা লাইন এলাকা থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়। মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি এর কার্বন ডেটিং করেছেন বলেও জানান তিনি। কার্বন ডেটিংয়ে দেখা গেছে এই বস্তুগুলো প্রায় ১০০০ বছরের পুরোনো। এখন প্রশ্ন উঠেছে কোথা থেকে এলো এই কঙ্কাল?

বৃহস্পতিবারই অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলেছে নাসা কর্তৃপক্ষ। সেদিন আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট বা সংক্ষেপে ইউএফও বা সংক্রান্ত গবেষণায় একজন ডিরেক্টর নিয়োগ নিয়ে বৈঠক করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সেখানেই মেক্সিকোর ওই মমি নিয়ে উপস্থিত বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন করা হয়।

নাসার ইউএফও ডিপার্টমেন্টের চেয়ারপার্সন, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের সাবেক প্রধান ডেভিড স্পারগেল বলেন, আমি বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে দেখেছি। যখন আপনি কোনো অদ্ভুত কিছু দেখেন, সেটা অন্যদের সঙ্গেও শেয়ার করা উচিত।

ওই গবেষকের মতে, এই বিষয়টি (মেক্সিকোর মমি) কী, কী তার ধরন, তা আমরা জানি না। নমুনাটি বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলের সামনে পেশ করলে তা নিয়ে গবেষণা করা যাবে। গত বৃহস্পতিবার মমি দুটি সবার সামনে এনে জেইমি মওসান দাবি করেছিলেন, পৃথিবীর বাইরে যে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে তা ‘প্রমাণতি’। তার দাবি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমরা একা নই।

এদিকে বৃহস্পতিবার নাসা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, এর মূল বিষয়বস্তুই ছিল মহাকাশে এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে নাকি নেই? সারা পৃথিবীর অনেকেই আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে ছিলেন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই রিপোর্টের দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুব একটা সন্তোষজনক কিছু মেলেনি ওই প্রতিবেদনে। অর্থাৎ এলিয়েনের উপস্থিতির তারা কোনো প্রমাণ পাননি; কিন্তু আবার এই সম্ভাবনা উড়িয়েও দিতে পারছে না নাসা।

দীর্ঘ এক বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর ৩৬ পৃষ্ঠার যে রিপোর্ট নাসা দিয়েছে তার অধিকাংশই বিভিন্ন কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ে পূর্ণ। মহাকাশে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বস্তুর নড়াচড়া চোখে পড়ে বলে দাবি করা হয়। এগুলোকে ইউএফও হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

এই ইউএফও নিয়ে মানুষের আগ্রহ বহুদিন ধরে। কেউ কেউ চমক লাগাতে বলে থাকেন এগুলো আসলে এলিয়েনদের বাহন। কোনো প্রমাণ না থাকলেও দুনিয়াজুড়ে এই ইউএফও’র অস্তিত্ব বিশ্বাস করার লোকেরও অভাব নেই। প্রচুর ভিডিও গেমস আর চলচ্চিত্রে এই ইউএফওর উপস্থিতি পাওয়া যায়।

এই ইউএফও’কে মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা বলে থাকে ইউএপি বা আনআইডেন্টিফাইড অ্যানাম্যালাস ফেনোমেনা। বাংলায় বলা যেতে পারে অশনাক্ত অস্বাভাবিক ঘটনা। ইউএফও বা ইউএপি যেটাই বলি না কেনো, এর ব্যাখ্যা খুঁজতে গত বছর একটি আলাদা গবেষক দল নিয়োগ করেছে নাসা।

১৬ সদস্যের এই দল গত বছরের অক্টোবর থেকে গবেষণা শুরু করে। এদের উদ্দেশ্য ছিল এই বিষয়টি নিয়ে যেভাবে নানা চাঞ্চল্যকর আলোচনা হয়ে থাকে অর্থাৎ আসলেই পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না সেসব বিজ্ঞানের মাধ্যমে জানা।

এ গবেষণায় কী পেলেন তারা সেটাই তুলে ধরা হয় নাসার এই ইউএপি স্টাডি রিপোর্টে। এই রিপোর্টের একেবারে শেষ পাতায় বলা হয়েছে, এরকম উপসংহারে আসার কোনো কারণ নেই যে শত শত যেসব ইউএপি নিয়ে নাসা তদন্ত করেছে সেগুলো দেখা যাওয়ার পেছনে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর হাত আছে। তবে যাই হোক…এসব বস্তু আমাদের সৌরজগতের ভেতর দিয়েই ভ্রমণ করেছে এখানে পৌঁছাতে।

যদিও রিপোর্টে বলা হয়নি যে, বহির্জাগতিক কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব আছে, কিন্তু নাসা আবার এই ব্যাপারটা অস্বীকারও করেনি যে সম্ভবত পৃথিবীর অভ্যন্তরে অজানা কোনো এলিয়েন প্রযুক্তি হয়তো কাজ করে চলেছে। তবে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন স্বীকার করেন বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে পৃথিবীর মতো আরেকটা গ্রহ থাকতে পারে। তিনি বলেন, আপনি যদি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেন যে, এই বিশাল সৌরজগতে অন্য প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না আমি বলবো হ্যাঁ।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে খোলামেলা ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কাজ করবেন তারা। নিকোলা ফক্স নাসার বিজ্ঞান মিশন অধিদপ্তরের সহযোগী প্রশাসক। তিনি বলেন, ইউএপি আমাদের এই গ্রহের অন্যতম বড় এক রহস্য। আর এর প্রধান কারণ হলো এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যের অভাব।

যদিও প্রতিনিয়ত অসংখ্য ইউএপি দেখা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু ফক্স বলছেন, আমাদের হাতে আসলে পর্যাপ্ত তথ্য নেই যার সাহায্যে আমরা সুনিশ্চিত বৈজ্ঞানিক সমাপ্তি টানতে পারি যে এই ইউএপিগুলো কেমন ও কোথা থেকে আসছে?

রিপোর্টে বলা হ,য় বেশিরভাগ ইউএফও ব্যাখ্যা করা গেলেও কিছু পাওয়া যায় যেগুলো মনুষ্যসৃষ্টও না আবার প্রাকৃতিক কারণেও হয়নি। ফক্স ঘোষণা দেন নাসা ইউএপি গবেষণায় একজন নতুন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম পরিচয় না জানালেও তার কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি একটা বিশদ ডেটাবেজ তৈরি করবেন যাতে ভবিষ্যৎ ডেটা বিশ্লেষণে সহায়ক হয়।

এই নতুন পরিচালক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে তথ্য যোগাড় ও বিশ্লেষণ করবেন। বিবিসি রিপোর্টার স্যাম কাবরাল নাসার প্যানেলকে প্রশ্ন করেন, গত সপ্তাহে মেক্সিকান কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব কথিত ভিনগ্রহের প্রাণীর বেশকিছু ছবি উপস্থাপন করা হয় সে সম্পর্কে।

মেক্সিকোর সাংবাদিক জেইমি মওসান একজন স্বঘোষিত ইউএফও বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি কংগ্রেসের সামনে শুনানিতে হাজির হয়ে দুটি প্রাচীন ‘মানুষ নয় এমন’ এলিয়েনের মৃতদেহ উপস্থাপন করেন তিনি। বিজ্ঞানমহল অবশ্য এই নমুনার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কারণ মাওসান এর আগেও ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব আছে বলে দাবি করেছিলেন যা খারিজ হয়ে যায়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4866
  • Total Visits: 746197
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1126

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ ইং
  • ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১০ই জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১১:২১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018